সর্দার বল্লভভাই পটেলের মূর্তিতে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন হার্দিকের। গ্রেফতারির আগে। শনিবার সুরাতে। ছবি: পিটিআই।
প্রথমে আটক। তার পর গ্রেফতারি। আবার মুক্তি। হার্দিক পটেলকে নিয়ে আজ দিনভর নাটক চলল সুরাতে।
মাস খানেক আগে তাঁর আন্দোলনের জেরেই দু’দিনের জন্য কার্যত স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল গুজরাত। বিক্ষোভ আর পুলিশের পাল্টা মারে মৃত্যু হয়েছিল ১০ জনের। কার্ফু জারি করতে হয়েছিল আমদাবাদ শহরে। নেমেছিল সেনা। তাই এ বার বড়সড় গোলমাল এড়াতে আজ আগেভাগেই হার্দিককে আটক করেছিল পুলিশ। রাতে যাতে তিনি ছাড়া না পান, সেটা নিশ্চিত করতে পরে গ্রেফতারও করা হয় তাঁকে। কিন্তু ঘণ্টা তিনেক পরেই জামিন পেয়ে যান তিনি।
শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে পটেল সম্প্রদায়ের সংরক্ষণের দাবিতে গুজরাত জুড়ে আন্দোলন শুরু করেছেন হার্দিক। ‘পটীদার অনামত আন্দোলন সমিতি’র প্রতিষ্ঠাতা, বছর বাইশের হার্দিকের আন্দোলন রীতিমতো তোলপাড় ফেলে দিয়েছে সারা দেশে। এই অবস্থায় আজ সুরাতে ‘একতা যাত্রা’র আয়োজন করেছিলেন হার্দিক ও তাঁর সঙ্গীরা। গত কাল পর্যন্ত পুলিশ সেই অভিযানের জন্য অনুমতি দেয়নি। কিন্তু তা সত্ত্বেও অভিযান চালিয়ে যাওয়ার হুমকি দেন হার্দিক। কাল সাংবাদিকদের তিনি বলেছিলেন, ‘‘এ ভাবে পটীদার সম্প্রদায়ের গলা বন্ধ করে দিতে চাইছে গুজরাত প্রশাসন। আগামী কাল আমরা অভিযান করবই। আর তা হবে একেবারেই অহিংস। কোনও প্রাণহানি যাতে না হয়, তার দিকে নজর রাখা হবে।’’
হার্দিকের এই আশ্বাসে অবশ্য চিড়ে ভেজেনি। আজ সকালে প্রথমে সুরাতের ভারাচ্চা এলাকার মঙ্গধ চক থেকে আটক করা হয় হার্দিক আর তাঁর ৩৫ জন সঙ্গীকে। তার পর সেখান থেকে তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয় পুলিশের সদর দফতরে। সুরাতের পুলিশ কমিশনার রাকেশ আস্থানা জানিয়েছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কথাটা সবার আগে তাঁদের মাথায় রাখতে হচ্ছে।
ঘটনাচক্রে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী আনন্দীবেন পটেল একটি সভায় যোগ দিতে এখন সুরাতে আছেন। তাই বড় ধরনের ঝামেলা এড়াতেই পুলিশ এমন ব্যবস্থা নিয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে আজ সকাল সকাল শুধু হার্দিককে আটক করেই থেমে থাকেনি প্রশাসন। দুপুর থেকে গুজরাতের চারটি শহরে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবাও। রাতের দিকে হার্দিককে গ্রেফতার করে পুলিশ। সুরাত পুলিশের বক্তব্য, আগাম জারি করা নিষেধাজ্ঞা না মেনে একতা যাত্রার আয়োজন করেছিলেন হার্দিক। আর সে জন্যই ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৮৮ ধারায় গ্রেফতার করা হয়েছে তাঁকে।
আজ সকালে আটক হওয়ার পরপরই গুজরাত পুলিশের বিরুদ্ধে এক রাশ ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন হার্দিক। তাঁর বক্তব্য, ‘‘গুজরাত সরকার আমাদের হেনস্থা করছে। সরকার আর তার পুলিশই আসলে সারা রাজ্যে হিংসা ছড়াতে চায়।
গোটা প্রক্রিয়াটাই গণতন্ত্র-বিরোধী।’’ এর কিছু ক্ষণের মধ্যেই সুরাত, আমদাবাদ, রাজকোট আর বডোদরায় মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা
বন্ধ করে দেওয়া হয়। গুজরাত পুলিশের বক্তব্য, গুজব ছড়ানো আটকাতেই এমন ব্যবস্থা করা হয়েছে। আজ সকাল থেকে আগামী কাল দুপুর পর্যন্ত সুরাতে মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ রাখা হবে বলে জানিয়েছেন কমিশনার আস্থানা। যদিও রাজকোটের প্রশাসন আগামী এক সপ্তাহের জন্য মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। রাজকোটের পুলিশ কমিশনার মোহন ঝা অবশ্য জানিয়েছেন, পরিস্থিতি বুঝে নির্দিষ্ট সময়ের আগেও নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হতে পারে। আমদাবাদ আর বডোদরায় অবশ্য চব্বিশ ঘণ্টার জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
আজ এত কিছু করেও অবশ্য প্রতিবাদ-বিক্ষোভ আটকানো যায়নি। হার্দিককে পুলিশ ধরে নিয়ে যাওয়ার পরপরই গুজরাতের বিভিন্ন এলাকায় গোলমাল শুরু হয়ে যায়। ভাবনগর, জামনগর, সুরাতের বিভিন্ন জায়গায় পটেল সম্প্রদায়ের লোকজন বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। সৌরাষ্ট্রের মোরবি শহরে রাস্তা আটকানোর জন্য আটক করা হয় ৩০০ জনকে। যাঁদের মধ্যে ছিলেন বেশ কিছু মহিলাও।
রাস্তা আটকে ঝামেলা শুরু হয় জামনগরের ধ্রোল শহরে। তবে পুলিশ এসে কিছু ক্ষণের মধ্যেই বিক্ষোভকারীদের হটিয়ে দেয়। সুরাতের বেশ কিছু এলাকায় হার্দিকের সমর্থনে বিক্ষোভ দেখান মহিলারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy