Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Irom Chanu Sharmila

Manipur: ‘রাষ্ট্র রুপো নিয়ে কথা বলে, আফস্পা নিয়ে না’

শনিবার বিকেলে ভিডিয়ো কলে কথা বলছিলেন সশস্ত্র বাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন (আফস্পা) প্রত্যাহারের দাবিতে ১৬ বছর অনশন করা শর্মিলা।

অন্য চানু: ভিডিয়ো কলে শর্মিলা

অন্য চানু: ভিডিয়ো কলে শর্মিলা —নিজস্ব চিত্র

চৈতালি বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০২১ ০৮:২১
Share: Save:

অলিম্পিক্সে ঘরের মেয়ে মীরাবাই চানুর সাফল্যে অবশ্যই খুশি তিনি। ভারতীয় হিসেবে গর্বিতও। তবে বেঙ্গালুরুর বাড়িতে বসে ইরম শর্মিলা চানু এ-ও বলছেন, ‘‘আমাদের উত্তর-পূর্বের মানুষদের শিক্ষার সুযোগ এতটাই কম যে, ছেলেমেয়েরা বরাবর খেলাধুলোর দিকে ঝুঁকেছেন, সেখানেই সাফল্যের খোঁজ করতে বাধ্য হয়েছেন।’’

শনিবার বিকেলে ভিডিয়ো কলে কথা বলছিলেন সশস্ত্র বাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন (আফস্পা) প্রত্যাহারের দাবিতে ১৬ বছর অনশন করা শর্মিলা। জানালেন, মণিপুর থেকে তাঁর দূরে থাকার অন্যতম কারণও সেখানে বসবাস করার ক্ষেত্রে নানা প্রতিবন্ধকতা। তিনি বলেন, ‘‘আমি গত কয়েক বছর ধরে বেঙ্গালুরুতেই রয়েছি। জীবনধারণের উপযোগী সব জিনিস এখানে সহজলভ্য। আমার দুই মেয়েকে নিয়ে রয়েছি, যে কোনও প্রয়োজনে হাতের কাছে সব কিছু পাচ্ছি। উন্নত জীবনযাপনের উপযোগী পরিবেশ রয়েছে দেশের বাকি সব প্রান্তের মতো। কিন্তু মণিপুর পাহাড়ঘেরা। এখনও ওখানকার মানুষকে প্রতিনিয়ত জীবনযাপনের জন্য লড়াই করতে হয়। খাদ্য, পোশাক, ওষুধ, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস— সব বাইরে থেকে আসে। উত্তর-পূর্বের মানুষের কাছে তাঁদের দৈনন্দিন চাহিদা মেটানোর মতো সামগ্রীটুকু নেই।’’ বলেন, ‘‘শুধুমাত্র দৈহিক শক্তি দিয়ে বেঁচে থাকা যায় না। ভাল ভাবে বাঁচতে গেলে মানসিক বিকাশ প্রয়োজন হয়। শিক্ষা লাগে, স্বাস্থ্য পরিকাঠামো লাগে, সামাজিক-আর্থিক পরিকাঠামোর উন্নয়ন প্রয়োজন। যাঁদের সারা বছর মণিপুরে প্রাকৃতিক দুযোগের সঙ্গে লড়াই করে বাঁচতে হয়, তাঁরা কী ভাবে সুস্থ জীবনযাপন করবেন, বলতে পারেন!’’

শর্মিলার মতে, তাঁর জন্মভূমি মণিপুরের মানুষ আফস্পা-র সঙ্গে লড়াই করতে করতে শারীরিক ও মানসিক ভাবে ক্লান্ত। আফস্পা প্রত্যাহার না করায় জওয়ানেরা মণিপুরে থাকছেন। ফলে স্থানীয় মেয়েদের প্রতিটা দিন ‘আতঙ্কের মধ্যে কাটে’ বলেই তাঁর দাবি। শর্মিলার কথায়, ‘‘মণিপুরের মানুষ আনন্দ করে বাঁচতে চান। তাই তাঁরা মীরাবাই চানুর সাফল্যে উচ্ছ্বসিত স্বাভাবিক ভাবেই। কিন্তু রাষ্ট্রের কর্তারাও দেশের প্রকৃত সমস্যা থেকে নজর ঘুরিয়ে রাখতে চান। তাই তাঁরাও অলিম্পিক্সে মণিপুরের মেয়ের সাফল্য নিয়ে কথা বলেন। আফস্পা প্রত্যাহার নিয়ে নয়।’’

‘আফস্পা’ তোলার দাবিতে অনশনে কেটেছে জীবনের ১৬ বছর। কিন্তু তার পরেও লড়াইয়ে সাফল্য আসেনি। শর্মিলা খুশি যে, মীরাবাই চানু পরিশ্রমের ফল অবশেষে পেয়েছেন। তবে তাঁর আক্ষেপ, ‘‘উত্তর-পূর্বের মানুষকে নিয়ে আমার দেশেই তো জাতিবিদ্বেষ আছে। আমি পাঁচ বছর বেঙ্গালুরুতে রয়েছি। এখানে উত্তর-পূর্বের বহু ছেলেমেয়ে রয়েছেন। কেউ চাকরি করছেন, কেউ পড়ছেন। এত উন্নত একটা শহর। কিন্তু তার পরেও যখন রাস্তা দিয়ে হেঁটে যায় ওরা, কিংবা আমি—চোখের দৃষ্টি বদলে যায় বাকিদের। এই ঘটনা আমায় মনে করিয়ে দেয়, আমি মণিপুরের মেয়ে।’’

মণিপুরকে ‘মিস’ করেন না? মায়ের কাছে যেতে ইচ্ছে করে না? মা প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, মেয়ের অনশনের জেরে যদি ‘আফস্পা’ ওঠে, তবেই তিনি মেয়ের সঙ্গে দেখা করবেন। মেয়ে অনশন তুলে নেওয়ার পর বাড়ি ঢোকেননি, মা-ও দেখা করেননি আর। মীরাবাই তো বলছেন, দু’বছর বাড়ি ছেড়ে রয়েছেন। বাড়ি ফিরেই মাকে জড়িয়ে ধরবেন। আড়াই বছরের যমজ মেয়েদের সামলানোর ফাঁকে অভিমানী শর্মিলার জবাব— ‘‘না। নিজের জীবন নিয়ে ভাল আছি, ব্যস্ত আছি। দুই মেয়েকে দেখভাল করতেই আমার সারা দিন কেটে যায়। আমার কাউকে মনে করার নেই।’’

অন্য বিষয়গুলি:

AFSPA Irom Chanu Sharmila
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy