Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Fuel Price Hike

Fuel Price: ভোট মিটলেই গ্যাস-তেলের দাম আগুন

অশোধিত তেল আমদানিকারী দেশগুলির মধ্যে ভারতের স্থান বিশ্বে তৃতীয়। ভারতকে প্রয়োজনের ৮০ শতাংশ তেলই আমদানি করতে হয়। আজ ব্রেন্ট অশোধিত তেলের দাম ১০৫ ডলারেও পৌঁছেছে। এখন প্রতি মাসে ভারতকে ১১৫০ থেকে ১২০০ কোটি ডলারের অশোধিত তেল আমদানি করতে হয়।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৬:১২
Share: Save:

উত্তরপ্রদেশ-সহ পাঁচ রাজ্যের ভোটের দামামা বাজার পর থেকেই গত বছরের শেষ দিক থেকে পেট্রল-ডিজ়েল-রান্নার গ্যাসের দাম বৃদ্ধি আটকে রয়েছে। উত্তরপ্রদেশের ভোটপর্ব না মেটা পর্যন্ত হয়তো আপাতত পেট্রল-ডিজ়েল, রান্নার গ্যাসের দাম বাড়বেও না। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের আঁচ শেষ পর্যন্ত পোহাতে হবে এ দেশের মধ্যবিত্ত, গরিব মানুষকেই।

ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের ধাক্কায় আন্তর্জাতিক বাজারে অশোধিত তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ১০৫ ডলারে পৌঁছে গিয়েছে। গত আট বছরে এই প্রথম। ইউক্রেনে রুশ হামলা হলে তেলের জোগান নিয়ে অনিশ্চয়তার জেরে অশোধিত তেলের দাম বেশ কিছু দিন ধরেই ১০০ ডলারের কাছে ঘোরাফেরা করছে। কিন্তু উত্তরপ্রদেশে ভোট চলছে বলে সরকারের ইশারায় রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থাগুলি রান্নার গ্যাস ও পেট্রল-ডিজ়েলের এত দিন দাম বাড়ায়নি। অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, ৭ মার্চ উত্তরপ্রদেশের ভোটগ্রহণ শেষ হলেই পেট্রল-ডিজ়েল ও রান্নার গ্যাসের দাম এক ধাক্কায় অনেকখানি বেড়ে যাবে। এখনই অশোধিত তেলের দাম যেখানে পৌঁছেছে, তাতে পেট্রল-ডিজ়েলের দাম লিটার প্রতি ৫ থেকে ৬ টাকা বেড়ে যাওয়ার কথা।

সরকারি সূত্রও মানছে, পাঁচ রাজ্যে ভোটের কারণে প্রায় ১১০ দিন ধরে তেলের দাম বাড়ানো হয়নি। সাধারণত রোজই তেলের দামে অল্প করে পরিবর্তন হয়। এ বার উত্তরপ্রদেশের ভোট শেষ হলে এক লাফে অনেকখানি দাম বাড়াতে হবে। শেষ দফার ভোটগ্রহণ মিটে গেলে ৭ মার্চ রাত থেকেই ফল টের পাওয়া যাবে। তার ধাক্কায় জিনিসপত্রের দামও বেড়ে যাবে। কারণ ডিজ়েলের দাম বাড়লে ট্রাকে করে পণ্য পরিবহণের খরচও বাড়বে। ফলে মধ্যবিত্ত, গরিব মানুষের ঘাড়ে রাশিয়ার যুদ্ধের বোঝা চাপবে। এমনিতেই জানুয়ারি মাসে খুচরো পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির হার ৬ শতাংশের উপরে ছিল। যা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের লক্ষ্যমাত্রার একেবারে গণ্ডিতে। পাইকারি মূল্যবৃদ্ধির হার ছিল ১০ শতাংশের উপরে।

নরেন্দ্র মোদী সরকারের অন্দরমহলে অর্থ মন্ত্রকেও ঘুম ছুটেছে। অর্থ মন্ত্রকের চিন্তা দু’টি। এক, কোভিডের ধাক্কায় অর্থনীতি যখন ঘুরে দাঁড়াচ্ছে, তখন ফের অশোধিত তেলের দাম বাড়ার ফলে আর্থিক বৃদ্ধিতে ধাক্কা লাগতে পারে। কারণ জ্বালানি, জিনিসপত্রের দাম বাড়লে বাজারে চাহিদাও কমবে। দুই, মাত্র ২৪ দিন আগেই অর্থমন্ত্রী যে বাজেট পেশ করেছেন, সেই বাজেটের অঙ্কও গুলিয়ে যাবে। কারণ অশোধিত তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ৭০ থেকে ৭৫ ডলারে মধ্যে থাকবে ধরে নিয়ে বাজেটের হিসাব কষা হয়েছিল।

মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা ভি অনন্ত নাগেশ্বরন আজ স্বীকার করেছেন, ভারতের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য তৈরি। কিন্তু অশোধিত তেলের চড়া দাম চিন্তার বিষয়। তাঁর বক্তব্য, তেলের চড়া দাম, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়া বিশ্ব জুড়েই সমস্যা তৈরি করছে। সরকারি পরিসংখ্যানও বলছে, অর্থনীতির কিছু ক্ষেত্র কোভিডের ধাক্কা কাটিয়ে উঠলেও বাজারে কেনাকাটার মাত্রা কোভিডের আগের স্তরে পৌঁছয়নি। বাজারে কেনাকাটা নেই বলে বেসরকারি লগ্নিও থমকে রয়েছে।

ইউক্রেনের পরিস্থিতি নিয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটির বৈঠক করেন। সেখানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহের পাশাপাশি অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন, বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়ালও হাজির ছিলেন। সীতারামন, গয়াল গত কাল ও আজ রাশিয়ার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। সীতারামন দু’দিন আগেই বলেছিলেন, অশোধিত তেলের দাম আর্থিক স্থিতিশীলতার পক্ষে অন্যতম চ্যালেঞ্জ। গয়ালও আজ আন্তর্জাতিক অস্থিরতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

অর্থ মন্ত্রকের শীর্ষকর্তাদের অবশ্য আশা, দেশের অর্থনীতিতে রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের প্রভাব খুব বেশি মারাত্মক হবে না। মূল্যবৃদ্ধি বাড়তে পারে। মূল্যবৃদ্ধিকে লাগামের মধ্যে রাখতে রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে সুদের হার বাড়াতে হতে পারে। সরকারের ঋণের উপরে সুদের বোঝা বেড়ে গেলেও পরিস্থিতি সামলানো যাবে। অশোধিত তেলের দাম নিয়ে তাঁদের আশা, তেল উৎপাদনকারী দেশগুলির সংগঠন ওপেক তেল উৎপাদন বাড়াতে পারে।

অর্থনীতিবিদদের মতে, অশোধিত তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ১০ ডলার বাড়লে আর্থিক বৃদ্ধি ০.৩ থেকে ০.৩৫ শতাংশ ধাক্কা খায়। আজ আর্থিক উপদেষ্টা সংস্থা মুডি’জ পূর্বাভাস দিয়েছে, চলতি বছরে ভারতের আর্থিক বৃদ্ধির হার ৯.৫% ছোঁবে। আগামী অর্থ বছর, ২০২২-২৩-এ আর্থিক বৃদ্ধি ৮.৪%-এ পৌঁছবে। বাজেটের আগে সরকারের আর্থিক সমীক্ষায় পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল, আগামী অর্থ বছরে বৃদ্ধির হার ৮ থেকে ৮.৫%-এর মধ্যে থাকবে। কিন্তু সেই অনুমান অশোধিত তেলের দাম ৭০ থেকে ৭৫ ডলারের মধ্যে থাকবে ধরে নিয়ে করা হয়েছিল। রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত বেশি দিন চললে অশোধিত তেলের দাম ১২০ ডলারেও পৌঁছে যেতে পারে বলে আর্থিক বিশ্লেষক সংস্থাগুলি মনে করছে। ফলে আর্থিক বৃদ্ধিতে কতখানি ধাক্কা লাগবে, সেই আশঙ্কা রয়েছে।

অর্থনীতিবিদেরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ভোটের আগে পেট্রল-ডিজেলে উৎপাদন শুল্ক ছাঁটাইয়ের পরেও পেট্রলের দাম দিল্লিতে লিটার প্রতি ৯৫ টাকার উপরে। ডিজেলের দাম ৮৬ টাকার বেশি। অক্টোবরের শেষে অশোধিত তেলের দাম যখন ৮৬ ডলারে পৌঁছে গিয়েছিল, তখনই পেট্রল-ডিজেলের দাম ১০০ টাকা পেরিয়ে গিয়েছিল। ফেব্রুয়ারি মাস জুড়েই অশোধিত তেলের দাম বেড়েছে। তা ১২০ ডলারে পৌঁছলে পেট্রল-ডিজেলের দাম কত হবে, তা সহজেই অনুমেয়।

অশোধিত তেল আমদানিকারী দেশগুলির মধ্যে ভারতের স্থান বিশ্বে তৃতীয়। ভারতকে প্রয়োজনের ৮০ শতাংশ তেলই আমদানি করতে হয়। আজ ব্রেন্ট অশোধিত তেলের দাম ১০৫ ডলারেও পৌঁছেছে। এখন প্রতি মাসে ভারতকে ১১৫০ থেকে ১২০০ কোটি ডলারের অশোধিত তেল আমদানি করতে হয়। তা বাড়লে বিদেশি মুদ্রার লেনদেনে ঘাটতি বাড়বে। চলতি অর্থ বছরে ডিসেম্বর পর্যন্ত তেল আমদানিতে ভারতের ৮২৪০ কোটি ডলার খরচ হয়েছে। ২০২০-র তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy