(বাঁ দিকে) অর্পিতা মুখোপাধ্যায়। মা মিনতি মুখোপাধ্যায় (ডান দিকে)। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
বেলঘরিয়ার দেওয়ানপাড়ার সেই নোনাধরা বাড়িতেই ফিরবে মেয়ে! প্রায় দৃষ্টিহীন চোখে স্বপ্ন দেখতেন মা। সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে মিনতি মুখোপাধ্যায়ের। নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে জামিন পেয়ে আপাতত সেখানেই আশ্রয় নিয়েছেন অভিযুক্ত অর্পিতা মুখোপাধ্যায়। শুধু দেখার জন্য মা আর বেঁচে নেই। গত সপ্তাহেই প্রয়াত হয়েছেন মিনতি। তাঁর পরলৌকিক কাজ করার জন্য প্যারোলে ছাড়া পেয়ে বৃহস্পতিবার বেলঘরিয়ার বাড়িতে এসেছেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ‘ঘনিষ্ঠ’ অর্পিতা। প্যারোলের পাঁচ দিনের মেয়াদ শেষের আগে সোমবার কলকাতার বিচার ভবন জামিন দিয়েছে তাঁকে। বেলঘরিয়ার বাড়িতে বসে সেই খবর পেয়েছেন তিনি। এখন সে বাড়ি ঘিরে রেখেছে পুলিশ। অর্পিতার সঙ্গে কাউকে কথা বলতেও দেওয়া হচ্ছে না। অর্পিতা নিজেও চাইছেন না কথা বলতে!
২০২২ সালের জুলাই মাসে গ্রেফতার হয়েছিলেন অর্পিতা। টালিগঞ্জ-করুণাময়ীতে তাঁর ডায়মন্ড সিটির ফ্ল্যাটে হানা দিয়েছিল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। সেখান থেকে কোটি কোটি টাকা উদ্ধার করেছিল তারা। সেই সূত্রেই প্রকাশ্যে আসে অর্পিতার নাম। প্রকাশিত হয় রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের রসায়ন। যদিও মা মিনতি দাবি করেছিলেন, অভিনয়, মডেলিং, নখ নকশা করার পার্লার থেকে করা রোজগারেই মেয়ে ও সব কিনেছে বলে তিনি জানতেন। বাংলার পাশাপাশি কয়েকটি ওড়িয়া ছবিতে অভিনয় করেছিলেন অর্পিতা। তাই মায়ের প্রশ্ন ছিল, মেয়ে জামিন পাবে না কেন? আর জামিন পেয়ে মেয়ে যে সেই বেলঘরিয়ার বাড়িতেই যাবে, তা-ও জানিয়ে দিয়েছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘এক দিন ঠিক ছাড়া পাবে! তার পর তো এই বাড়িতেই আসবে!’’ বেলঘরিয়ার বাড়ির দোতলায় বসে গ্লুকোমা হওয়া চোখে সেই স্বপ্নই দেখতেন মিনতি।
এক বছর আগে এই বাড়িতেই ঢুঁ দিয়েছিল আনন্দবাজার অনলাইন। বাড়ির পাঁচিলে নোনা ধরে গিয়েছিল। শ্যাওলা পড়ে বদলে গিয়েছিল রং। কড়িকাঠে ঘুণ ধরেছিল। বাড়ির বাইরে ছড়িয়ে ছিল জংলা গাছ। বাঁ দিকের লোহার সিঁড়ি যে ঘরে ঠেকেছিল, সেখানেই থাকতেন সত্তরোর্ধ্বা মিনতি। এখন সেখানেই ঠাঁই হতে চলেছে অর্পিতার। না হয়ে উপায়ও নেই। কারণ, তাঁর ডায়মন্ড সিটির ফ্ল্যাট, কামারহাটির ক্লাব টাউনের ফ্ল্যাট এখন ইডির হেফাজতে। মামলার নিষ্পত্তি না-হওয়া পর্যন্ত তা তদন্তকারী সংস্থার হেফাজতেই থাকবে। ফলে সেখানে প্রবেশ করতে পারবেন না অর্পিতা। ২০২২ সালের ২৩ জুলাই তল্লাশি চালিয়ে টালিগঞ্জের আবাসনে অর্পিতার ফ্ল্যাট থেকে নগদ ২১ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা উদ্ধার করেছিল ইডি। সেই সঙ্গে উদ্ধার হয়েছিল প্রচুর বিদেশি মুদ্রা এবং সোনার গয়না। এর পরে ওই বছরেরই ২৭ জুলাই বেলঘরিয়ার আবাসনে অর্পিতার নামে থাকা দু’টি ফ্ল্যাট থেকে মোট ২৭ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা নগদে উদ্ধার করেছিল ইডি। সঙ্গে প্রচুর টাকার গয়নাও। ইডির দাবি, অর্পিতার দু’টি ফ্ল্যাট থেকে নগদে মোট ৪৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা এবং ৫ কোটি ৮ লাখ টাকার গয়না উদ্ধার হয়েছিল। সঙ্গে সাতটি ভিন্দেশের মুদ্রাও।
ইডি কোর্টে দাবি করেছিল, পার্থ যদি ‘রাজা’ হন, তা হলে অর্পিতা ‘ডি ফ্যাক্টো রানি’ (প্রকৃত রানি)। মা মিনতি যদিও মানতে চাননি সেই দাবি। তিনি বলেছিলেন, ‘‘ও কিছু জানলে সবই নিশ্চয়ই বলেছে। ও তো আর চাকরি কেনাবেচা করেনি। তা হলে জামিন পাবে না কেন?” অর্পিতা যদিও গ্রেফতারির পর প্রথম ১০ মাস জামিনের আবেদন করেননি। এর পর ২০২৩ সালের মে মাসে প্রথম জামিনের আবেদন করেন। সেই জামিনের শুনানিতে বার বার তাঁর মুখে শোনা গিয়েছে অসুস্থ মায়ের প্রসঙ্গ। মায়ের সঙ্গে কথা বলতে চেয়ে আবেদনও করেছিলেন তিনি। তার পর জেল থেকে ভিডিয়ো কলের মাধ্যমে মায়ের সঙ্গে কথা বলানো হত অর্পিতার। মিনিটখানেকের জন্য। সেই সময় যদিও মেয়েকে কোনও পরামর্শ দিতেন না বলেই দাবি করেছিলেন মিনতি। তাঁর স্পষ্ট কথা ছিল, ‘‘ও কি বাচ্চা নাকি? ও যা করার বুঝেই করবে!’’ সেই সঙ্গেই ভরসা রেখেছিলেন যে, মেয়ের জামিন হবেই। গত বছর ২২ জুলাই, অর্পিতার গ্রেফতারির এক বছরের মাথায় নিজের বাড়িতে বসে আনন্দবাজার অনলাইনকে এ কথা বলেছিলেন মিনতি। তার প্রায় দেড় বছর পর মায়ের স্বপ্ন পূরণ হল। ঘরে ফিরলেন মেয়ে। তবে তা আর দেখতে পেলেন না মা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy