(বাঁ দিকে) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
তিনি তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। সেই তিনি দায়িত্ব পেলেন ‘দিল্লির মুখপাত্র’ হিসেবে। অর্থাৎ, নয়াদিল্লিতে (জাতীয় রাজনীতিতে) যা যা ঘটবে, তার প্রেক্ষিতে দলের অবস্থান বা প্রতিক্রিয়া জানাবেন তিনি।
তিনি— অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূলের অঘোষিত ‘দু’নম্বর’ তথা ‘সেনাপতি’।
সোমবার তৃণমূলের জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকের পরে চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, দলের চেয়ারপার্সন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে, তবে কি অভিষেকের ‘সীমা’ বেঁধে দেওয়া হল? তিনি কি দিল্লি ছাড়া কোনও বিষয়ে কথা বলতে পারবেন না? রাজ্যের কোনও বিষয়ে তাঁর মতপ্রকাশে কি দাঁড়ি টানা হল? চন্দ্রিমার দাবি, বিষয়টি তেমন নয়। তাঁর কথায়, ‘‘উনি (অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়) দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। তিনি অন্য কোনও বিষয়ে কথা বলতে পারবেন না, বিষয়টা তেমন নয়।’’ চন্দ্রিমা জানাচ্ছেন, দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হিসাবে কোনও বিষয় ‘যুক্তিযুক্ত’ মনে হলে তা নিয়ে বলার অধিকার আছে অভিষেকের।
তবে অভিষেকের ঘনিষ্ঠদের বক্তব্য, তাঁকে কখনওই মুখপাত্রের দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। বরং বলা হয়েছে, সংসদে এবং জাতীয় রাজনীতির বিষয়ে কী ভাবে দল পরিচালিত হবে, সেই বিষয়গুলি তিনি যাতে দেখেন এবং সাংসদদের সঙ্গে সমন্বয় করেন। অভিষেক-ঘনিষ্ঠদের এ-ও বক্তব্য যে, চন্দ্রিমা যে ভাবে সাংবাদিক বৈঠক করে ঘোষণাটি করেছেন, তার থেকেই অভিষেকের দায়িত্ব এবং এক্তিয়ার সম্পর্কে ‘ভুল বোঝাবুঝি’ তৈরি হয়েছে। চন্দ্রিমার বলার ধরনে তার অবকাশ রয়েছে।
বস্তুত, সোমবারের বৈঠকেও অভিষেক একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন বলেই তৃণমূল সূত্রের খবর। বিধানসভায় পাশ-হওয়া অপরাজিতা বিল কেন এখনও কার্যকর হয়নি, তা মানুষকে বুঝিয়ে কর্মসূচি নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন অভিষেকই। সেই মতো আগামী ৩০ নভেম্বর, শনিবার এবং ১ ডিসেম্বর, রবিবার ব্লকে ব্লকে মিছিল-ধর্না-মিটিংয়ের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। তৃণমূলের মহিলা বাহিনীই ওই কর্মসূচি করবে। ঘটনাচক্রে, ৩০ নভেম্বরেই ডায়মন্ড হারবারে নিজের সংসদীয় এলাকায় ‘ডক্টর্স মিট’ কর্মসূচির কথা রয়েছে অভিষেকের। সেই একই দিনে তৃণমূলের মহিলা বাহিনীর দলীয় কর্মসূচি ঘোষণা নিয়ে কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন। কিন্তু অভিষেক নিজেই ওই প্রস্তাব দেওয়ায় সেই ‘বিতর্ক’ খুব একটা হালে পানি পায়নি। মমতার কালীঘাটের বাড়ি লাগোয়া দফতরে দলীয় বৈঠকের পর অভিষেক সন্ধ্যার উড়ানে দিল্লি গিয়েছেন। লোকসভার অধিবেশনে তিনি নিয়মিত হাজির থাকবেন বলেই খবর।
দিল্লির ‘মুখপাত্র’ হিসাবে অভিষেকের সঙ্গেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ডেরেক ও’ব্রায়েন, সুস্মিতা দেব, কাকলি ঘোষদস্তিদার, সাগরিকা ঘোষ এবং কীর্তি আজ়াদকে। এঁরা যদি ‘এলাকাভিত্তিক’ মুখপাত্র হন, তা হলে পাশাপাশি ‘বিষয়ভিত্তিক’ মুখপাত্রও বেছে দিয়েছেন তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী মমতা। অর্থনৈতিক বিষয়ে বলার ভার দেওয়া হয়েছে রাজ্যের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র এবং বর্তমান অর্থ প্রতিমন্ত্রী (স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত) চন্দ্রিমাকে। শিল্প সংক্রান্ত বিষয়ে বলার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী শশী পাঁজা এবং সাংসদ পার্থ ভৌমিককে। উত্তরবঙ্গ, ঝাড়গ্রাম, চা-বাগান ইত্যাদি বিষয়ে বলার জন্যও মুখপাত্র নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন মমতা। উত্তরবঙ্গ নিয়ে বলার দায়িত্ব পেয়েছেন শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী উদয়ন গুহ এবং সাংসদ প্রকাশ চিক বরাইক। চা-বাগান নিয়ে বলার দায়িত্ব শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটকের।
ঝাড়গ্রাম নিয়ে বলবেন আদিবাসী উন্নয়ন মন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদা। বিধানসভা নিয়ে বলার এক্তিয়ার দেওয়া হয়েছে চন্দ্রিমা, মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া, মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, শশী, তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ এবং সুমন কাঞ্জিলালকে।
বৈঠকে মমতা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, কেউ দলবিরোধী কাজ করলে বা শৃঙ্খলাভঙ্গ করলে দল সংশ্লিষ্ট নেতা বা নেত্রীকে শো-কজ় নোটিস পাঠাবে। তার জবাব দিতে হবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে। সর্বোচ্চ তিন বার ওই নোটিস পাঠানো হবে। তার পরেও জবাব না দিলে সংশ্লিষ্ট নেতা বা নেত্রীকে সাসপেন্ড (নিলম্বিত) করা হবে।
মোট তিনটি শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি তৈরি হয়েছে। একটি সংসদের জন্য। তার সদস্য সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, ডেরেক, কাকলি, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং নাদিমুল হক। দ্বিতীয়টি বিধানসভার জন্য। তার সদস্য শোভনদেব, অরূপ বিশ্বাস, ফিরহাদ হাকিম, চন্দ্রিমা, নির্মল ঘোষ এবং দেবাশিস কুমার। তৃতীয়টি দলের। তার সদস্য রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী, অরূপ, ফিরহাদ, চন্দ্রিমা এবং সুজিত বসু।
একাধিক কমিটি এবং মুখপাত্রদের ‘প্যানেল’ তৈরি হলেও অবশ্য সমস্ত আলোচনা শুরু হয়েছে অভিষেককে নিয়েই। চন্দ্রিমা অবশ্য বলেছেন, ‘‘দলের নেতা যাঁরা রয়েছেন, যাঁরা অভিজ্ঞ, তাঁরা নিশ্চয়ই অন্যান্য বিষয়েও বলবেন। যে যে জায়গাগুলো কারা বলবেন, তা প্রাথমিক ভাবে ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। তার মানে এটা নয় যে, তাঁরা অন্য বিষয়ে বলতে পারবেন না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy