Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

ছবি চাই আইএনএ নিয়ে, ফব-বিজেপি একসুর

নিখাদ বলিউডের বাণিজ্যিক প্রয়াস। কিন্তু তার জেরেই ইতিহাসের কফিনের ঢাকনা খোলার দাবি নতুন করে সামনে এসে গেল!‘মকবুল’ বা ‘হায়দর’-খ্যাত বিশাল ভরদ্বাজ তাঁর সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত ‘রেঙ্গুন’-এ কাহিনির খাতিরেই নিয়ে এসেছেন নেতাজি প্রসঙ্গ।

সন্দীপন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৪:২৪
Share: Save:

নিখাদ বলিউডের বাণিজ্যিক প্রয়াস। কিন্তু তার জেরেই ইতিহাসের কফিনের ঢাকনা খোলার দাবি নতুন করে সামনে এসে গেল!

‘মকবুল’ বা ‘হায়দর’-খ্যাত বিশাল ভরদ্বাজ তাঁর সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত ‘রেঙ্গুন’-এ কাহিনির খাতিরেই নিয়ে এসেছেন নেতাজি প্রসঙ্গ। ওই ছবিতে শাহিদ কপূরের অভিনীত অন্যতম মুখ্য চরিত্র নবাব নায়েক আসলে আজাদ হিন্দ ফৌজের (আইএনএ) গুপ্তচর। বর্মায় জাপানি সেনার হেফাজত থেকে পালিয়ে যে আজাদ হিন্দ ফৌজের ক্যাপ্টেন হিসাবে কাজ শুরু করে এবং তার স্বার্থেই আর পাঁচ জনের সঙ্গে মিশে থাকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীতে। বিশালের ছবিতে দেখা গিয়েছে, আইএনএ-র নার্স এবং আরও কিছু গুপ্ত সহায়ক ছড়িয়ে ছিল ব্রিটিশ ফৌজদারদের চোখে ধুলো দিয়ে। এমন ছবির পরেই নেতজির বংশধর এবং অনুগামীদের একাংশ বিশালের কাছে দরবার শুরু করেছেন, এ বার আইএনএ-র কাজকর্ম নিয়েই পুরোদস্তুর তথ্যসমৃদ্ধ ছবি হোক।

তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, এই দাবিতে একজোট হয়ে গিয়েছে বিজেপি এবং বাম শরিক ফরওয়ার্ড ব্লক। যাঁরা নেতাজির পরম্পরা নিয়ে রাজনৈতিক যুদ্ধেই অন্য সময় জড়িয়ে থাকেন! দু’তরফেই অবশ্য বলা হচ্ছে, এর সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক নেই। দেশ স্বাধীন করতে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ঐতিহাসিক লড়াইকে মর্যাদা দিতেই তারা ছবি তৈরির প্রস্তাব দিচ্ছে। পরিচালক বিশাল মন্তব্য করেছেন, ‘‘নেতাজির প্রতিই ‘রেঙ্গুন’ আমার শ্রদ্ধার্ঘ্য।’’ তাতে আরও উৎসাহ বেড়েছে ছবি-প্রত্যাশীদের।

‘রেঙ্গুন’-এর একটি চরিত্রাভিনেত্রী লিন লাইশরমকে সঙ্গে নিয়ে ছবি মুক্তির দিন কলকাতায় এসেছিলেন বিশাল। তখনই তাঁর সঙ্গে দেখা করে নেতাজি সংক্রান্ত বই ও আরও কিছু তথ্য তুলে দিয়েছেন সুভাষচন্দ্রের নাতি চন্দ্রকুমার বসু। যিনি এখন বিজেপি-র নেতা এবং গত বিধানসভা ভোটে ভবানীপুর থেকে পদ্মফুল চিহ্নে লড়েছিলেন। বিশালকে চন্দ্রবাবু বলেছেন, নেতাজিকে নিয়ে অনেক ছবি হয়েছে। কিন্তু শুধু আইএনএ-র ভূমিকা নিয়ে রুপোলি পর্দায় তেমন কিছু এখনও হয়নি। তাঁর প্রস্তাব, ১৯৪৬ সালে আইএনএ-র বিচারের সময় থেকে ধরে ফ্ল্যাশব্যাকে গিয়ে একটা ছবি তৈরি করলে কেমন হয়? আগামী মাসে মুম্বই গিয়ে বিশালের সঙ্গে আরও আলোচনা করতে চান তিনি।

কিন্তু আইএনএ নিয়ে তো বইপত্র, গবেষণা কিছুই কম নেই। তা হলে ছবি কেন? চন্দ্রবাবুর কথায়, ‘‘আজকের প্রজন্ম বই পড়ে এ সব জানতে অত উৎসাহী নয়। একটা সিনেমা হলে অনেক মানুষের কাছে পৌঁছনো যায়। আইএনএ নিয়ে এমন ছবি করতে হলে বিশাল ভরদ্বাজের মতো পরিচালককেই দরকার। তাই তাঁকেই বলেছি।’’

একই কথা বলছেন ফব-র সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত বিশ্বাস। ‘রেঙ্গুন’-এর পরিচালককে তিনি কলকাতায় হেমন্ত বসু ভবনের গ্রন্থাগারে নিয়ে আসতে চান। দেবব্রতবাবু রবিবার বলছিলেন, ‘‘মূলত পরাজিত, বন্দি সৈনিকদের কী ভাবে দেশপ্রেমে উজ্জীবিত করে একটা বাহিনী গড়া যায়, নেতাজি সেই নজির রেখেছেন। আইএনএ-র ইতিহাস অবশ্যই ছবির পর্দায় আসা উচিত। ওই ফৌজের যাদের হত্যা করা হয়েছিল, সেই দিকটাও সামনে আসুক।’’ বিশালের ‘রেঙ্গুন’-এ কঙ্গনা রাণাবতের চরিত্র ‘জুলিয়া’ এক সময় আইএনএ-র ঝাঁসি ব্রিগেডে যোগ দেওয়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছে। দেবব্রতবাবু জানাচ্ছেন, এই বিষয়ে মহারাষ্ট্রে বিশদে তথ্যসংগ্রহ হয়েছে, যা বিশাল বা তাঁর টিমের হাতে গেলে ছবির পরিকল্পনা করতে সুবিধা হবে। নেতাজির ফৌজের তহবিলের জন্য দেশের নানা প্রান্ত থেকে যাওয়া ধন-সম্পদের শেষ পর্যন্ত কী হল, ‘রেঙ্গুন’ সেই কৌতূহলও উস্কে দিয়েছে। সেই প্রশ্নেও এক সুর চন্দ্রকুমার-দেবব্রত।

নেতাজি-গবেষক অনুজ ধরও জানিয়েছেন, ‘রেঙ্গুন’-এর কথা তাঁকে অনেকে বলেছেন। আর বিশাল চন্দ্রবাবুদের জানিয়েছেন, তিনি অবশ্যই ভেবে দেখবেন। বলিউডের শেক্সপীয়র অনুরক্ত পরিচালক কলকাতায় শুধু বলেছেন, কাহিনিচিত্র হলেও ‘রেঙ্গুন’-এ আইএনএ-র জন্য ইতিহাস থেকে তথ্য নিয়েছেন। আরও কিছু করতে গেলে ইতিহাস নিয়েই ভাবতে হবে, চর্চা করতে হবে।

রাজনীতির ভেদ ভুলে আপাতত অপেক্ষাতেই থাকবে দু’দিকের নেতাজি শিবির!

অন্য বিষয়গুলি:

INA All India Forward Bloc BJP Rangoon
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE