প্রতি বছরের মতো বাজেট পেশ করা হবে ১ ফেব্রুয়ারি। গত বছর থেকেই রেল বাজেট সাধারণ বাজেটের সঙ্গে একযোগে পেশ করা হচ্ছে। বাজেট নিয়ে যত আলোচনা হয়ে থাকে তার অনেকটাই জুড়ে থাকে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা। আগের বছরের তুলনায় ভারতীয় রেলের আর্থিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় ৭০০০ কোটি টাকা বেশি আয় হবে আশা করা যায়। কিন্তু ভারতীয় রেল ব্যবস্থার আধুনিকীকরণের জন্য যে বিপুল পরিমাণ অর্থ প্রয়োজন তার তুলনায় এই অতিরিক্ত আয় যৎসামান্য।
এ বছরেই ভারত সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে যে আগামী পাঁচ বছরের সড়ক উন্নয়ন খাতে ভারতমালা প্রকল্পে সাড়ে সাত লক্ষ কোটি টাকা খরচ করা হবে। গত বছর রেল বাজেটে উন্নয়ন বাবদ বরাদ্দ করা হয়েছিল এক লক্ষ ৩১ হাজার কোটি টাকা। যার মধ্যে সাধারণ বাজেট থেকে বরাদ্দ করা হয়েছিল ৫৫ হাজার কোটি টাকা। ভারতের পণ্য এবং যাত্রী পরিবহণের ক্ষেত্রে রেলের গুরুত্ব কোনও অংশেই সড়ক পরিবহণের চেয়ে কম নয়। সুতরাং, পরিকাঠামোয় উন্নতি এবং আধুনিকীকরণ খাতে বরাদ্দ অনেকটা বাড়ানোর প্রয়োজন আছে। এখন ভারত সরকারের কাছে দু’টো রাস্তা খোলা আছে। সহজ হচ্ছে ‘বিজনেস অ্যাজ ইউজুয়াল (Business as usual)’ বা যে রকম চলছে তাই চলতে থাকা। প্রতি বছর বর্তমান পরিকাঠামোর খাতে অবনতি না হয় এবং জোড়াতালি দিয়ে কিছু উন্নতি হয় সে অনুপাতে বরাদ্দ বাড়ছে না। এই পথই কিন্তু ভারতীয় রেল এত দিন পর্যন্ত নিয়ে এসেছে। কিন্তু সেটাই কি যথেষ্ট?
ভারতীয় পরিবহণের ক্ষেত্রে যে চ্যালেঞ্জ আছে তাতে এই অবস্থা চলতে পারে না। একটা উদাহরণ দেওয়া যাক। স্বাধীনতা লাভের সময় চিনের রেল পরিকাঠামো ভারতের তুলনায় অনেকটা পিছিয়ে ছিল। বড় বড় পদক্ষেপে চিনের রেল ব্যবস্থা ভারতীয় রেলকে অনেক পিছনে ফেলে এগিয়ে গিয়েছে। এর প্রধান কারণ, রেলের উন্নয়নে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে জাতীয় সরকার কোনও কার্পণ্য করেনি। এ থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। পণ্য এবং যাত্রী পরিবহণে কাঙ্খিত উন্নতির জন্য বিনিয়োগের উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধির প্রয়োজন অনস্বীকার্য। কিন্তু, মূল প্রশ্নটা অন্য জায়গায়। এই বিনিয়োগ আসবে কোথা থেকে?
রেল পরিকাঠামোয় বিনিয়োগের ফল পেতে বেশ কিছু সময় লাগে। তাৎক্ষণিক লাভ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। এ জন্য বিদেশি বিনিয়োগ অথবা বেসরকারি ক্ষেত্রে বিনিয়োগের আশা খুব একটা নেই। কোনও কোনও বিশেষ প্রকল্প, যেমন বুলেট ট্রেনের ক্ষেত্রে সহজ শর্তে বিদেশি ঋণ পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু, যদি আশা করা যায় পরিকাঠামো উন্নয়নে বা রক্ষণাবেক্ষণের উন্নতির জন্য বিনিয়োগ পাওয়া যাবে সেটা সম্ভব নয়। সাধারণ বাজেট থেকেই বা কতদূর পরিমাণ বিনিয়োগ করা যাবে? সমাজতান্ত্রিক এবং কল্যাণমূলক সরকারকে তো বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভর্তুকি দিয়ে যেতেই হবে। এ ছাড়াও ঋণ মাফের বহর তো কমবে না। রেলের ক্ষেত্রে যদি বিশেষ করে দেখা যায়, তবে বুঝতে হবে যে রেলের যাত্রী ভাড়া বাড়ানোর একটা সীমাবদ্ধতা আছে এবং সেটা থাকবে। সুতরাং, যাত্রী বহনের জন্য ভারতীয় রেলকে প্রতি বছর কমবেশি ৪০০০০ কোটি টাকার ক্ষতি মেনে নিতে হবে। এই ক্ষতিটা এত দিন ভারত থেকে পণ্য পরিবহণের লভ্যাংশ থেকে মিটিয়ে এসেছে। এখন ভেবে দেখা দরকার এই ক্ষতির দায় ভারত সরকারকে কেন নিতে হবে না এবং এই ক্ষতিটার পরিপূরক হিসাবে এই টাকার অতিরিক্ত বরাদ্দ কেন দেওয়া হবে না?
আর একটা কথা, বাজেটের বরাদ্দ টাকা, বিশেষ করে পরিকাঠামোর উন্নয়নের টাকা কী ভাবে কোথায় খরচ হচ্ছে তার দিকে নজর রাখার। কলকাতায় মেট্রো রেলের বিস্তারের জন্য প্রায় কয়েক হাজার কোটি টাকা ইতিমধ্যেই খরচ করা হয়ে গিয়েছে। কিন্তু, কলকাতাবাসী এক কিলোমিটারও অতিরিক্ত লাইন পায়নি। এ ধরনের বিনিয়োগের দিকে বিশেষ করে নজর রাখা দরকার যাতে বিনিয়োগের ফল পেতে অস্বাভাবিক দেরি না হয়। রেল বাজেটকে সাধারণ বাজেটের সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়ার পর বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যে আশা জেগেছিল তা এখনও অপূর্ণই থেকে গিয়েছে। দেখা যাক, এ বারের রেল বাজেটে কোনও দিশা দেখানো হবে কি না। গত বছরের রেল বাজেট দেখে কিন্তু প্রত্যাশা পূর্ণ হবে কি না সে আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy