Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

ডিগ্রি জালের অভিযোগে গ্রেফতার কেজরীর মন্ত্রী

সিনেমার মুন্নাভাই ছিলেন ‘এমবিবিএস’। আর দিল্লির আইনমন্ত্রীকে এখন ডাকা হচ্ছে— তোমরভাই এলএলবি। অরবিন্দ কেজরীবাল প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ক্ষমতায় এলে দুর্নীতিমুক্ত সরকার গড়বেন। দুর্নীতি ঝেঁটিয়ে বিদায় করতে প্রতীকও বেছে নিয়েছিলেন ঝাড়ুকে। সমর্থন উজাড় করে দিয়েছিলেন দিল্লিবাসীও। ক্ষমতায় আসার মাত্র একশো দিনের মধ্যেই সেই দুর্নীতির দায়েই অভিযুক্ত হতে হল কেজরীবালের মন্ত্রিসভাকে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০১৫ ০৩:৩৩
Share: Save:

সিনেমার মুন্নাভাই ছিলেন ‘এমবিবিএস’। আর দিল্লির আইনমন্ত্রীকে এখন ডাকা হচ্ছে— তোমরভাই এলএলবি।

অরবিন্দ কেজরীবাল প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ক্ষমতায় এলে দুর্নীতিমুক্ত সরকার গড়বেন। দুর্নীতি ঝেঁটিয়ে বিদায় করতে প্রতীকও বেছে নিয়েছিলেন ঝাড়ুকে। সমর্থন উজাড় করে দিয়েছিলেন দিল্লিবাসীও। ক্ষমতায় আসার মাত্র একশো দিনের মধ্যেই সেই দুর্নীতির দায়েই অভিযুক্ত হতে হল কেজরীবালের মন্ত্রিসভাকে। শিক্ষাগত যোগ্যতা সংক্রান্ত জাল ডিগ্রি পেশ করার দায়ে আজ দিল্লির আইনমন্ত্রী জিতেন্দ্র সিংহ তোমরকে গ্রেফতার করে দিল্লি পুলিশ। সাকেত আদালত তাঁকে চার দিন পুলিশি হেফাজতে পাঠিয়েছে। রাতে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেছেন তোমর।

যদিও তোমরের গ্রেফতারিও কেন্দ্রীয় চক্রান্ত বলে আজ সরব হয়েছে আম আদমি শিবির। তোমরের পাশে দাঁড়িয়ে দল জানিয়েছে, উচ্চ আদালতে যাওয়া হবে। আপ নেতাদের বক্তব্য, কেজরীবাল সরকারকে পর্যুদস্ত করতেই দিল্লি পুলিশকে দিয়ে অনৈতিক ভাবে আইনমন্ত্রীকে গ্রেফতার করিয়েছে কেন্দ্র। সন্ধ্যায় ইস্তফাও দেন তিনি।

এর আগে ৪৯ দিন সরকারে থাকাকালীন এক নাইজেরীয় মহিলাকে নিগ্রহের অভিযোগ উঠেছিল তৎকালীন আইনমন্ত্রী সোমনাথ ভারতীর বিরুদ্ধে। এ বারও সেই আইনমন্ত্রীই বিপাকে ফেললেন কেজরীবালকে। কিন্তু এ বারের সমস্যা যে আরও গুরুতর, তা স্বীকার করে নিচ্ছেন আপ কর্তারাই। দিল্লি পুলিশ আজ সন্ধ্যায় সাংবাদিক সম্মেলন করে যে ভাবে তোমরের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলির প্রমাণ তুলে ধরেছে, তাতে অস্বস্তি আরও বেড়েছে। আজ থেকেই সুর চড়াতে শুরু করেছে বিরোধী দলগুলি। কংগ্রেসের অজয় মাকেন কিছুটা সুর নরম করে গোটা ঘটনার দায় তোমরের উপর চাপালেও রক্তের স্বাদ পাওয়া বিজেপি সরাসরি আক্রমণ শানাতে শুরু করেছে কেজরীবালের উদ্দেশে। বিজেপি নেতা রবিশঙ্কর প্রসাদের কথায়, ‘‘দুর্নীতিমুক্ত সমাজের কথা বলা সরকারের আইনমন্ত্রীই জাল ডিগ্রি পেশ করে গ্রেফতার হয়েছেন। কেজরীবাল ইস্তফা দেবেন না?’’


সবিস্তারে দেখতে ক্লিক করুন

দিল্লির শাসনের রাশ কার হাতে থাকবে তা নিয়ে গত মাস থেকেই একাধিক বার সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে কেন্দ্র ও আপ সরকার। কেজরীবালের অভিযোগ ছিল, দিল্লির নির্বাচিত সরকারকে সুষ্ঠু ভাবে কাজ করতে না দেওযার জন্য উপরাজ্যপালকে ব্যবহার করে চক্রান্ত চালাচ্ছে কেন্দ্র। তোমরকে গ্রেফতারে এই লড়াই নতুন মাত্রা নিল।

কী অভিযোগে গ্রেফতার তোমর?

দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, ২০১০ সালে নিজের স্নাতক ও এলএলবি-র শংসাপত্রের নকল জমা দিয়ে দিল্লি বার কাউন্সিলের সদস্য হন তোমর। কিন্তু গত ১২ মে দিল্লি বার কাউন্সিলের সভাপতি পুনীত মিত্তল ডিসিপি (দক্ষিণ)-এর কাছে তোমরের বিরুদ্ধে ভুয়ো শংসাপত্র জমা দেওয়ার সন্দেহ জানিয়ে প্রাথমিক অভিযোগ করেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নামে বসন্তবিহার থানা। সূত্রের খবর, মূলত দু’টি শংসাপত্র ঘিরে সন্দেহ হয় পুলিশের। প্রথমটি হল রাম মনোহর লোহিয়া অবধ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএসসি ডিগ্রি। দ্বিতীয়টি বিহারের ভাগলপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তিলকা মাঝি কলেজ থেকে পাওয়া তোমরের এলএলবি ডিগ্রি। আজ দিল্লি পুলিশের মুখপাত্র রাজন ভগত বলেন, ‘‘সন্দেহ মেটাতে দু’টি আলাদা দল পাঠানো হয় দু’টি বিশ্ববিদ্যালয়ে। তোমরের রোল নম্বর দেখে অবধ বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে, ওই নম্বরে কোনও ডিগ্রিধারী পড়ুয়া নেই। অন্য দিকে ভাগলপুর বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে, তোমর যে রোল নম্বর দিয়েছেন, সেটি সঞ্জয়কুমার চৌধুরী নামে অন্য এক ছাত্রের। তিনি বিজ্ঞানের ছাত্র ছিলেন।’’ দু’টি ক্ষেত্রেই শংসাপত্র জাল নিশ্চিত হওয়ার পর গত কাল পুলিশ তোমরের নামে অভিযোগ দায়ের করে। তার পর আজ ভোর ছ’টা নাগাদ মন্ত্রীকে আটক করে দিল্লি পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পরে বেলা একটা নাগাদ তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে জালিয়াতি, ফৌজদারি চক্রান্তের অভিযোগ এনেছে পুলিশ।

আজ ভোরবেলা যে পদ্ধতিতে তোমরকে আটক করা হয়, তার বিরুদ্ধে সরব হন আপ নেতৃত্ব। দলের নেতা আশুতোষ বলেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদী সরকারের নেতৃত্বে এখন দিল্লিতে জরুরি অবস্থা জারি রয়েছে। এক জন মন্ত্রীকে গ্রেফতার করতে গেলে স্পিকারকে যে জানাতে হয়, সেই নিয়মটুকুও মানেনি পুলিশ।’’ পুলিশ হেফাজতে তোমরের উপর শারীরিক নিগ্রহের অভিযোগও এনেছে দল। যদিও তা মানেনি পুলিশ। আপ শিবিরের অভিযোগ, কেন্দ্রের নির্দেশে কেজরীবাল সরকারকে অপদস্থ করতেই তড়িঘড়ি এ ভাবে তোমরের বিরুদ্ধে প্রমাণ জোটাতে তৎপর হয় দিল্লি পুলিশ। অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে দিল্লি পুলিশের বিশেষ কমিশনার (আইন শৃঙ্খলা) দীপক মিশ্র বলেন, ‘‘নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে ওই গ্রেফতারি হয়েছে। এর পিছনে অন্য কোনও কারণ নেই।’’ তবে তোমরকে আদালতে তোলার পর বিচারকও বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছেন, হতে পারে তাঁর ডিগ্রি জাল, কিন্তু কী এমন তাড়া পড়ল পুলিশের যে তাঁকে গ্রেফতার করে আনতে হল!

যদিও আপ শিবিরের একাংশ বলছেন, তোমরকে ঘিরে বিরোধীরা যে মুখ খোলার সুযোগ পাচ্ছে, তার জন্য কেজরীবাল নিজেই দায়ী। তোমর মন্ত্রী হিসাবে শপথ নেওয়ার পরেই তাঁর বিরুদ্ধে ভুয়ো ডিগ্রি জমা দেওযার অভিযোগ ওঠে। দলের এক নেতার কথায়, ‘‘সে সময়েই কেজরীবালের উচিত ছিল তোমরকে মন্ত্রী পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া। তাঁকে আসল শংসাপত্র জনসমক্ষে পেশ করতে বলা উচিত ছিল। কিন্তু তোমর কেজরীবালকে বোঝান, তাঁর শংসাপত্র আসল। তোমরকে বিশ্বাস করার মাসুল দিচ্ছে কেজরীবাল-সহ গোটা দল।’’

আর কেজরীবাল? আপাতত মুখে কুলুপ এঁটেছেন তিনি।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE