Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
দাদরি

প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন, আর ফিরতে চান না গ্রামে

চোখ বুজলেই সেই ভয়ঙ্কর রাতটা দেখতে পান ২২ বছরের যুবক। দরজা ভেঙে জোর করে বাড়িতে ঢুকে এসেছে ভিড়টা। যাঁদের মধ্যে বেশির ভাগ লোককেই তিনি ছোটবেলা থেকে চেনেন। যাঁদের সঙ্গে তিনি বেড়ে উঠেছেন। স্কুলে গিয়েছেন। খেলা করেছেন। প্রায় ২০০ জনের চেনা-আধচেনা ভিড়টা ক্রমশ এগিয়ে আসছে তাঁর দিকে। যুবকের শিরদাঁড়া বেয়ে নেমে যাচ্ছে ঠান্ডা স্রোত।

হাসপাতালে দানিশ।—ফাইল চিত্র।

হাসপাতালে দানিশ।—ফাইল চিত্র।

সংবাদ সংস্থা
লখনউ শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৪:০৩
Share: Save:

চোখ বুজলেই সেই ভয়ঙ্কর রাতটা দেখতে পান ২২ বছরের যুবক।

দরজা ভেঙে জোর করে বাড়িতে ঢুকে এসেছে ভিড়টা। যাঁদের মধ্যে বেশির ভাগ লোককেই তিনি ছোটবেলা থেকে চেনেন। যাঁদের সঙ্গে তিনি বেড়ে উঠেছেন। স্কুলে গিয়েছেন। খেলা করেছেন। প্রায় ২০০ জনের চেনা-আধচেনা ভিড়টা ক্রমশ এগিয়ে আসছে তাঁর দিকে। যুবকের শিরদাঁড়া বেয়ে নেমে যাচ্ছে ঠান্ডা স্রোত। চোখ বন্ধ করে ফেলে তিনি নিজেকেই বলেছিলেন, ‘‘দানিশ, আজ তুই খতম!’’ না, উত্তরপ্রদেশের দাদরির বাসিন্দা দানিশ আখলাক খতম হয়ে যাননি। দু’মাস হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে ফিরে এসেছেন তিনি। কিন্তু ২৮ সেপ্টেম্বরের সেই রাতে উন্মত্ত জনতা পিটিয়ে মারে তাঁর বাবা ৫২ বছরের মহম্মদ আখলাককে। গরুর মাংস খাওয়ার গুজবে।

এখন পরিবারের সঙ্গে চেন্নাইয়ে থাকেন দানিশ। আতঙ্কিত এই যুবক আর ফিরতে চান না দাদরিতে। রবিবার লখনউয়ে মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ সিংহ যাদবের সঙ্গে দেখা করেন দানিশ। তার পরে তিনি বলেন, ‘‘ কারণ ছাড়াই আমাদের উপর হামলা চালানো হল। যে গ্রামে আপনি থাকেন, যে গ্রামে আপনার সম্প্রদায়ের লোক খুব কম, সেই গ্রামে যদি কোনও কারণ ছাড়াই এ ভাবে আপনাদের পেটানো হয়, আপনি কি সেখানে আর ফিরে যেতে চাইবেন? তাই আমিও সেখানে আর ফিরে যেতে চাই না।’’ দানিশের গলায় ঝরে পড়ে আক্ষেপ, ‘‘কেন এমন হল জানি না। যারা আমাকে মারছিল, তারা আমার বন্ধু ছিল। তাদের সঙ্গে স্কুলেও কোনও দিন মারামারি করিনি। ভিড়ের মধ্যে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ লোককে আমি চিনি। চেনা লোকেরাই আমার বাবাকে পিটিয়ে খুন করেছে।’’

দাদরির এই ঘটনায় দেশ জুড়ে হইচই শুরু হয়। শুরু হয় তদন্তও। কিন্তু রবিবার উত্তরপ্রদেশ সরকারের এক মুখপাত্র জানিয়েছিলেন, মহম্মদ আখলাকের পরিবারের সদস্যরা আর তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যেতে চান না। এখনও পর্যন্ত যা পদক্ষেপ করা হয়েছে, তাতেই তাঁরা খুশি। সোমবার মহম্মদ আখলাকের আর এক ছেলে সরতাজ সইফি বলেন, ‘‘সুবিচারের জন্য যত দূর যেতে হয় যাব।’’ সরতাজের টুইট, ‘‘বলিনি যে, তদন্ত আর এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই না। শুধু বলেছি, এই মুহূর্তে সিবিআই তদন্তের প্রয়োজন নেই। উত্তরপ্রদেশ পুলিশের তদন্তেই আমরা খুশি।’’ প্রতিবেশীদের উপর তাঁর রাগ নেই? উত্তরে সরতাজ বলেন, ‘‘সারে জঁহা সে অচ্ছা, হিন্দুস্তান হমারা।’’

অন্য বিষয়গুলি:

danish akhlaq dadri
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE