লোকসভা ভোটের আগে তিনি ছিলেন বন্ধু। বিজেপির হাতে লোকসভা ভোটে সব দলের পর্যুদস্ত হওয়ার জেরে তাঁর প্রতি বন্ধুত্বের টান কমে এসেছিল। এখন আবার তিনিই ভাবিয়ে তুলেছেন প্রকাশ কারাটের দলকে! বিহারে উপনির্বাচনের আগে নীতীশ কুমারের প্রস্তাব এক কথায় খারিজ করে দেওয়া ঠিক হয়েছে কি না, প্রশ্ন উঠে গিয়েছে সিপিএমের অন্দরে।
বিজেপির মোকাবিলায় ধর্মনিরপেক্ষ সব শক্তিকে একজোট করার জন্য অন্য নানা দলের সঙ্গে সিপিএমকেও বার্তা পাঠিয়েছিলেন নীতীশ। সিপিএম তখন তাতে রাজি হয়নি। অ-বিজেপি, অ-কংগ্রেস শক্তিকে এক জায়গায় এনে লড়াইয়ের কৌশল লোকসভা ভোটে মুখ থুবড়ে পড়ার পরে সিপিএমের মধ্যেই প্রবল প্রশ্ন উঠেছে দলের রাজনৈতিক লাইন নিয়ে। আসন্ন পার্টি কংগ্রেসে সেই লাইন পর্যালোচনারও সিদ্ধান্ত হয়েছে। এরই মধ্যে জেডিইউ-এর প্রস্তাবকে তাই বিশেষ গুরুত্ব দেননি কারাটেরা। কিন্তু উপনির্বাচনের ফলই দেখিয়ে দিচ্ছে, জেডিইউ-আরজেডি’র জোট বিহারে বিজেপি-র রথ থামাতে সফল! তাই বিজেপি-র মোকাবিলায় নীতীশদের পথই ঠিক কি না, পার্টি কংগ্রেসের আগে আবার ভাবতে বাধ্য হচ্ছে সিপিএম!
নীতীশের দলও অবশ্য কারাটদের উপরে পুরোপুরি ভরসা হারিয়ে ফেলেনি। উপনির্বাচনের আগে বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর প্রস্তাব খারিজ করতে মুখ্য ভূমিকা ছিল ওই রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য এস আর পিল্লাইয়ের। কিন্তু তাঁর মতামতের উপরেই পুুরোপুরি নির্ভর না-করে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, বিমান বসুর মতো পশ্চিমবঙ্গের সিপিএম নেতাদের সঙ্গে কথা বলতে চাইছে জেডিইউ। সিপিএম সূত্রের খবর, উপনির্বাচনে যা-ই হয়ে থাকুক না কেন, আগামী বছরের বিধানসভা নির্বাচনের জন্য আগাম একটি আসন-সূত্র তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে। সিপিএম এবং সিপিআইকে চারটি করে আসন ছেড়ে দিতে চান নীতীশ। সেই মর্মেই আলোচনা চান বুদ্ধবাবুদের সঙ্গে। প্রকাশ্যে বিষয়টি নিয়ে নির্দিষ্ট করে এখনই কিছু বলতে না চাইলেও জেডিইউ-এর এক সাংসদ-নেতাও ইঙ্গিত দিয়েছেন, “বিহারে উপনির্বাচনে সাফল্যের পরে এখন আরও আলোচনার প্রক্রিয়া চলবে।”
লোকসভা এবং নানা রাজ্যে শক্তি হারিয়ে ফেলে সিপিএমের সামনে এখন বিহারে আসন লাভের হাতছানি এড়ানো কঠিন। কিন্তু এক বার বন্ধুত্বের হাত ফিরিয়ে দেওয়ার পরে সিপিএমের সামনে এখন আবার উভয় সঙ্কট! নীতীশ-লালু জোটের সঙ্গে পরে কংগ্রেসও যোগ দিয়েছিল। বিহারে উপনির্বাচনে তারা একটি আসনও জিতেছে। অন্য দিকে, সিপিএম এবং সিপিআই জোট করেছিল সিপিআই (এম-এল) লিবারেশনের সঙ্গে। এই বাম জোটের ঝুলি শূন্য। তবে তার মধ্যে সিপিআই একটি আসনে ২০ হাজারের বেশি এবং সিপিএম তাদের কোটার তিনটির মধ্যে দু’টি আসনে ৯ হাজার ও সাড়ে চার হাজার ভোট পেয়েছে। জেডিইউ যেমন ভবিষ্যতে এই বাম জোটের মধ্যে লিবারেশনকে নিয়ে বিশেষ উৎসাহী নয়, সিপিএমের মধ্যেই আবার তীব্র আপত্তি আছে কংগ্রেসকে নিয়ে।
বিহারের ভারপ্রাপ্ত সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য পিল্লাইয়ের বক্তব্য, উপনির্বাচনের ফলাফল পর্যালোচনার আগে এ ব্যাপারে কিছু বলা সম্ভব নয়। আর স্বয়ং সাধারণ সম্পাদক কারাটের বক্তব্য, “ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির প্রসারে আমরা যথাসাধ্য সহযোগিতার কথা বলেছি। এখন বিজেপি-ই সামনে মূল শত্রু হলেও আমরা কিন্তু কংগ্রেসেরও বিরুদ্ধে।”
এবং ঠিক এই জায়গায় আটকে যাচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিকে একজোট করার প্রয়াস! এমতাবস্থায় সিপিএমের একাংশের মত, নীতীশদের সঙ্গে নতুন করে কথা বলা হোক। বিধানসভা নির্বাচনের আগে এখনও বছরখানেক সময় আছে। প্রয়োজনে কংগ্রেসকে বাইরে রেখেই কোনও বিকল্প তৈরি করা যায় কি না, সেই ব্যাপারে আলোচনা চালানো হোক। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যের কথায়, “এমন তো হতেই পারে যে, বাম দলগুলিকে পাশে পেলে ওঁরা আর কংগ্রেসকে সঙ্গে নিলেন না। কংগ্রেসও পরে একা চলার সিদ্ধান্ত নেবে না, তা-ও তো বলা যায় না। তাই আলোচনার দরজা বন্ধ করা উচিত হবে না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy