আগরতলা বিবেকানন্দ ময়দানে প্রধানমন্ত্রীর জনসভার প্রস্তুতি| ছবি: বাপি রায়চৌধুরী।
ত্রিপুরা পুলিশের আইজি (আইনশৃঙ্খলা) কে ভি শ্রীজেশের পরামর্শ ছিল, পেশাগত তাগিদে যাওয়া যেতেই পারে। কিন্তু বেশি ভিতরে ঢোকা উচিত হবে না। একটু তফাতে থেকে তাঁরাও নজরদারি চালাবেন। কারণ, এলাকা ‘ভাল নয়’।
বহিরাগত কারও জন্য সতর্ক-বার্তার মানে না হয় বোঝা গেল। কিন্তু তা বলে সিপিএম? বেশি ভিতরে না ঢুকেও পাহাড়ি স্বশাসিত এলাকার অন্যতম উপজাতি ঘাঁটি টাকারজলায় পা দিলেই বোঝা যাচ্ছে, সিপিএম এখানে বেশ চাপে। শাসক দল হয়েও তাদের অভিযোগ, আইপিএফটি-র দৌরাত্ম্যে বাম কর্মী-সমর্থকেরা বেরনোর তেমন সাহস পাচ্ছেন না! কয়েক মাস ধরেই উপজাতি সংগঠনের সক্রিয়তা বেড়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার এবং দলের রাজ্য সম্পাদক বিজন ধরকে এনে সভা করে কিছুটা মনোবল ফিরে পেয়েছিল সিপিএম। কয়েক দিন আগে দলীয় প্রার্থীর সভা শেষে হামলা এবং পুলিশের আহত হওয়ার ঘটনা ফের তাদের সন্ত্রস্ত করে তুলেছে। টাকারজলার বিধায়ককে বদলে নতুন প্রার্থী রমেন্দ্র দেববর্মার কথায়, ‘‘এন সি-কে জেতানোর জন্য আইপিএফটি মরিয়া। এন সি না জিতলে লোকে বলবে, উপজাতি মানুষ তো তোমাদের নেতাকেই প্রত্যাখ্যান করেছে! তাই ওরা ভয় দেখাচ্ছে।’’
এন সি মানে নরেন্দ্র চন্দ্র দেববর্মা। আইপিএফটি-র সভাপতি এবং বিজেপি-র সমর্থনে টাকারজলার প্রার্থী। খুমলুঙে সভা সেরে টাকারজলায় এসে পৌঁছলেন যে খুনখুনে চেহারার প্রবীণ, তাঁকে দেখে অবশ্য সন্ত্রস্ত হবেন না কেউ! তবে কথা বলতে বসলে কঠিন হয়ে ওঠে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় আমলার সুর। চোয়াল শক্ত করেই বলে দিতে পারেন, ‘‘আমাদের রাজনৈতিক সংগঠন তৈরিই হয়েছিল উপজাতিদের জন্য আলাদা ত্রিপ্রাল্যান্ডের দাবি নিয়ে। এত দিন আন্দোলনের পর সেই দাবি আমরা ছেড়ে দেব কী করে?’’ বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ যে বলেছেন, তাঁরা কোনও ভাবেই ত্রিপুরা ভাগের দাবি সমর্থন করেন না? এন সি-র জবাব, ‘‘বিজেপি তাদের রাজনীতির কথা বলছে। আমরা তো প্রধানমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটির আশ্বাস পেয়েছি। তারাই সব খতিয়ে দেখবে।’’
আইপিএফটি-র এই অবস্থানই মানিকবাবুদের সব চেয়ে বড় হাতিয়ার। বিজেপি বলছে, ‘এক ত্রিপুরা, শ্রেষ্ঠ ত্রিপুরা’। আর তাদের জোটসঙ্গী পৃথক রাজ্যের দাবি ছাড়তে নারাজ। এই জোট ক্ষমতায় এলে অশান্তি আবার অবধারিত, বোঝাচ্ছেন বাম নেতারা। এই নিয়ে অস্বস্তি রয়েছে বিজেপি শিবিরেও।
বিজেপি-র অস্বস্তির ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা চালালেও টাকারজলায় অন্তত সিপিএম নিজেই অস্বস্তিতে। পরিস্থিতি সামলাতে এখানে পাঠানো হয়েছে দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর প্রবীণ সদস্য সুব্রত চক্রবর্তীকে। টাকারজলার স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র এবং ককবরক ভাষায় চোস্ত সুব্রতবাবু বলছেন, ‘‘মানুষ বিচ্ছিন্নতাবাদের রাজনীতির ভুক্তভোগী। আমাদের চ্যালেঞ্জ, ভোটের দিন এখানে মানুষকে বুথ পর্যন্ত নিয়ে আসা!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy