মল্লিকার্জুন খড়্গে। —ফাইল চিত্র।
পাঁচ রাজ্যে নির্বাচনের পরে শক্তি বাড়িয়ে বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র বৈঠকে বসতে চেয়েছিল কংগ্রেস। লক্ষ্য, আসন সমঝোতার প্রশ্নে নিজেদের দর কষাকষির ক্ষমতা বাড়িয়ে নেওয়া। কিন্তু গোবলয়ের তিন রাজ্যে মুখ থুবড়ে পড়ার পরে পাশার দান পাল্টে গিয়েছে বিরোধী জোটে। আজ সকালে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গের সংসদীয় কক্ষে বৈঠকেই সেই ছবি স্পষ্ট। সূত্রের খবর, সেই বৈঠকে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের নেতারা কার্যত স্তব্ধ। উপদেশ, পরামর্শ এবং কার্যত সামনে এগোনোর নির্দেশ দিয়ে গিয়েছেন তৃণমূল-সহ অন্য বিরোধী দলের নেতারা। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বৈঠকে ছিলেন না কংগ্রেসের উপর রুষ্ট এসপি-র কোনও সাংসদ।
৬ ডিসেম্বর খড়্গের ডাকা বিরোধী জোট ইন্ডিয়ার বৈঠকে যোগদানে রবিবার তৃণমূল অনীহা প্রকাশ করে। সেই প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সোমবার বলেন, “আমাকে তো ওই বৈঠকের কথা কেউ জানাননি। আমি কোনও ফোন বা কিছু পাইনি। আগে জানা থাকলে সেখানে আমিই থাকতাম। কিন্তু আমার উত্তরবঙ্গে কর্মসূচি ঠিক হয়ে আছে।” মুখ্যমন্ত্রী জানান, উত্তরবঙ্গে পারিবারিক ও প্রশাসনিক অনুষ্ঠান-সহ ৬ থেকে ১২ ডিসেম্বর তাঁরা টানা কর্মসূচি। সূত্রের বক্তব্য, ‘ইন্ডিয়া’র বৈঠক রবিবার ঠিক হয়। মুখ্যমন্ত্রীর কর্মসূচি আগেই নির্ধারিত।
বাগডোগরায় এ দিনই তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, “৬ ডিসেম্বর ‘ইন্ডিয়া’র বৈঠকে দলের তরফে কে যাবেন, তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঠিক করবেন। সেখানে ৪ রাজ্যের ভোটের ফলাফল নিয়ে নিশ্চয়ই আলোচনা হবে। সবাই ঐক্যবদ্ধ ভাবে বিজেপির স্বৈরাচারী কাজের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। তবে সময় অত্যন্ত কম। ব্যক্তি স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে, মানুষের স্বার্থে রাজনৈতিক ইগো সরিয়ে রেখে, যে যেখানে শক্তিশালী, সেখানে তাকে দ্রুত লড়াইয়ের জায়গা করে দিতে হবে।”
আজ সকালে নিজের সংসদীয় কক্ষে ডাকা বিরোধীদের বৈঠকে পুরোটাই চুপ করে শুনেছেন খড়্গে। কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ জয়রাম রমেশ মুখ খুলেছিলেন শুধু বিষয় উপদেষ্টা কমিটি সংক্রান্ত কিছু সূচি বিরোধীদের জানাতে। পরাজয়ের ধাক্কা তাঁদের মধ্যে স্পষ্ট বলে মনে করছেন বৈঠকে উপস্থিত নেতাদের একাংশ। মুখ্য বক্তা ছিলেন তৃণমূলের লোকসভার নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন। তৃণমূলের বক্তব্য, এটাই কার্যত সপ্তদশ লোকসভার শেষ অধিবেশন। মাত্র ১৫টি কাজের দিন মিলবে। হাঙ্গামা না করে বরং মানুষের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন বিষয়কে সামনে এনে যতটা সম্ভব আলোচনায় অংশগ্রহণ করতে হবে। সতর্ক করার সুরে সুদীপ এবং ডেরেক এটাও বলেন— কোনও একটি বিষয়ের পিছনে পড়ে থেকে সময় নষ্ট করা চলবে না। তাঁরা নাম না করে এই বার্তাই কংগ্রেস নেতৃত্বকে দিয়েছেন যে, শুধুমাত্র গৌতম আদানি এবং মোদীর দুর্নীতি সংযোগ নিয়ে পড়ে থাকলে ভোটের ফলাফল কী হয় তা মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান এবং ছত্তীসগঢ়ে দেখা গিয়েছে।
সকালের এই পরামর্শগুলির প্রায় হুবহু প্রতিধ্বনি শোনা গেল সন্ধ্যায় কংগ্রেসের সাংবাদিক সম্মেলনে। আজ বিকেলে কংগ্রেসের সংসদীয় দলনেত্রী সনিয়া গান্ধী দলের সংসদীয় ‘স্ট্র্যাটেজি গ্রুপ’-এর সঙ্গে বৈঠক করেন। সেই বৈঠকের পর কংগ্রেসের জয়রাম রমেশ জানান, কংগ্রেস তিনটে বিল (দণ্ড সংহিতা, নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ, তেলঙ্গানা বিশ্ববিদ্যালয়) বিতর্কে অংশ নেবে। জয়রামের কথায়, “সবগুলিই বিপজ্জনক বিল। আমরা আলোচনায় অংশ নিয়ে বিলগুলির বিরোধিতা করব।” জয়রামের বক্তব্য, “পনেরোটা মাত্র কাজের দিন এ বারের অধিবেশনে। শুক্রবারগুলি বাদ দিলে দাঁড়াচ্ছে বারো দিনে। মানুষের সঙ্গে যুক্ত এমন তিন-চারটি বিষয় স্বল্পমেয়াদি আলোচনায় যাতে জায়গা পায় তার জন্য নোটিস দেওয়া হবে।। যার মধ্যে থাকবে বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধি, সীমান্তে চিনের জমি দখলের মতো বিষয়। এ ছাড়া বিদেশনীতির প্রশ্নে বাইরে থেকে যে সব খবর আসছে তা নিয়ে আলোচনা চাওয়া হবে। রয়েছে উত্তরকাশীর দুর্যোগ, পরিবেশ ও উন্নয়নের ভারসাম্যের বিষয়।”
প্রশ্ন ওঠে, তিন রাজ্যে ধাক্কার পরেই কি বোধোদয়? জয়রাম বলেন, তা নয়। ফল প্রকাশের আগেই সনিয়া গান্ধী এই কৌশলের নির্দেশ দেন। ৬ ডিসেম্বরের বৈঠক নিয়ে ডেরেক বলেন, “১ সেপ্টেম্বর শেষ ইন্ডিয়া-র বৈঠক হয়। আমরা বলেছি, এখনও বলছি, আসল কথা আসন সমঝোতা। তা শুরু করা হোক। তিন দিনের নোটিসে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী দিল্লিতে বৈঠকে যোগ দিতে পারেন না।”
বৈঠকটি নিয়ে স্বর একটু নামিয়েছে কংগ্রেস। জয়রাম জানান, খড়্গের বাসভবনে ৬ ডিসেম্বর ঘরোয়া বৈঠক হবে। আনুষ্ঠানিক আলোচনায় সময় লাগবে। সুদীপের বক্তব্য, “দুম করে বৈঠক ডেকে দিলেই তো হল না। ৬ ডিসেম্বর দিনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এক দিকে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের দিন আবার বাবা সাহেব অম্বেডকরের মৃত্যুবার্ষিকী। কংগ্রেসের উচিত সবার সঙ্গে আলোচনা করে দিন স্থির করা।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy