Advertisement
০৫ অক্টোবর ২০২৪

মোদীর পাশে মোদী, বিরোধী তোপ এ বার প্রধানমন্ত্রীকেও

গত কাল লক্ষ্য ছিলেন সুষমা স্বরাজ। আজ তালিকায় উঠে এলেন খোদ নরেন্দ্র মোদী! এক দিকে কংগ্রেস সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধী উত্তেজিত স্বরে বলেছেন, ‘‘এক মোদীর পিছনে রয়েছেন আর এক মোদী! কালো টাকা উদ্ধারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে যিনি বুক বাজিয়ে ঘুরতেন, এখন দেখা যাচ্ছে তিনিই কালো কারবারিদের ত্রাতা হয়ে উঠছেন!’’ অন্য দিকে ললিত মোদীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ও বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের একটি পুরনো ছবি প্রকাশ করে আক্রমণে নেমেছে কংগ্রেস।

২০১০ সালে আমদাবাদে আইপিএলের একটি ম্যাচে তৎকালীন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং বিজেপি নেতা অমিত শাহের সঙ্গে ললিত মোদী।

২০১০ সালে আমদাবাদে আইপিএলের একটি ম্যাচে তৎকালীন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং বিজেপি নেতা অমিত শাহের সঙ্গে ললিত মোদী।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০১৫ ০৩:৪৯
Share: Save:

গত কাল লক্ষ্য ছিলেন সুষমা স্বরাজ। আজ তালিকায় উঠে এলেন খোদ নরেন্দ্র মোদী!

এক দিকে কংগ্রেস সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধী উত্তেজিত স্বরে বলেছেন, ‘‘এক মোদীর পিছনে রয়েছেন আর এক মোদী! কালো টাকা উদ্ধারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে যিনি বুক বাজিয়ে ঘুরতেন, এখন দেখা যাচ্ছে তিনিই কালো কারবারিদের ত্রাতা হয়ে উঠছেন!’’ অন্য দিকে ললিত মোদীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ও বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের একটি পুরনো ছবি প্রকাশ করে আক্রমণে নেমেছে কংগ্রেস।

এই অবস্থায় সুষমাকে বরখাস্ত করে প্রধানমন্ত্রী বিরোধী আক্রমণ সামাল দেবেন কি না, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে শাসক শিবিরেই। যদিও অনেকের মতে, কংগ্রেসের চাপ যদি বাড়তে থাকে, তা হলে আপাতত সুষমাকে রেখেই দেবেন মোদী। কারণ তা না-হলে মনে হবে তিনি বিরোধীদের চাপের কাছে নতিস্বীকার করেছেন। মোদী নিজে আজ গোটা বিষয় নিয়ে মুখ খোলেননি। (যা নিয়ে বিরোধীদের কটাক্ষ, যিনি বিশ্বের সব বিষয় নিয়ে লাগাতার টুইট করেন, তিনি নিজের বিদেশমন্ত্রীর বিরুদ্ধে এত বড় অভিযোগ নিয়ে চুপ কেন!) তবে বিজেপি সরকারি ভাবে সুষমার পিছনেই দাঁড়িয়েছে। মোদী সরকারে ক্ষমতার ভারসাম্য বজায় রাখতে সঙ্ঘ পরিবার তাদের ঘনিষ্ঠ সুষমার অপসারণে সায় দেবে কি না, সেই প্রশ্নও রয়েছে। বিজেপি নেতাদের একাংশের মতে, গোটা পরিস্থিতি বিচারে আপাতত সুষমাকে রেখে দিলেও পরে সময় সুযোগ বুঝে তাঁকে সরিয়ে দেবেন মোদী।

সবিস্তারে দেখতে ক্লিক করুন

তবে আপাতত সুষমার থেকে যাওয়াকে তাদের লাভ হিসেবেই দেখছে কংগ্রেস। দলীয় নেতাদের মতে, সুষমাকে এখনই সরিয়ে দিলে আক্রমণের ধারটাই ভোঁতা হয়ে যেত। সুষমা টিকে গেলে তাঁকে তো বটেই, নিশানা করা যাবে প্রধানমন্ত্রীকেও। বস্তুত, সেই কাজটাই আজ করেছেন রাহুল। মোদীকে আক্রমণ করে যেমন তিনি বলেছেন, ‘‘কে এই ললিত মোদী। উনি কালো টাকার প্রতীক। দেশ থেকে বহু কোটি কালো টাকা নিয়ে বিদেশে গচ্ছিত রেখেছেন। আর তাঁকেই বাঁচাচ্ছেন নরেন্দ্র মোদী!’’ পাশাপাশি দাবি করেছেন, ‘‘ইস্তফা আবার কী! নরেন্দ্র মোদীর উচিত সুষমা স্বরাজকে বরখাস্ত করা!’’

বিজেপির সুষমা বিড়ম্বনা আজ আরও ঘোরালো করেছেন দলের ক্রিকেটার-সাংসদ কীর্তি আজাদ। আজ সকালে তাঁর টুইট, ‘আস্তিনের সাপটি কে?’ বিজেপি নেতাদের অনেকের মতে, কীর্তি নাম না-করে অরুণ জেটলির কথাই বলতে চেয়েছেন। কারণ, এক দিকে মোদী-ঘনিষ্ঠ জেটলি দলীয় রাজনীতিতে সুষমার প্রতিপক্ষ। অন্য দিকে, ক্রিকেট রাজনীতিতেও তিনি ললিত মোদীর বিরোধী শিবিরের লোক। কীর্তি এ দিন পরোক্ষে দলের কোন্দলকেই প্রকাশ্যে এনে দিলেন বলে অনেকের মত।

বিহার ভোটের আগে বিজেপির এই অস্বস্তি কাজে লাগাতে আজ পুরনো একটা ছবি সামনে এনেছে কংগ্রেস। তাতে নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহকে ললিত মোদীর সঙ্গে দেখা যাচ্ছে। সেই ছবি প্রকাশ করে কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা বলেন, ‘‘রাজস্থানের বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজের সঙ্গে ললিত মোদীর নিকট সম্পর্ক দুনিয়া জানে। মোদী-অমিত শাহর সঙ্গে ললিত মোদীর সম্পর্ক যে দীর্ঘদিনের, তা এই ছবি থেকেই বোঝা যাচ্ছে।’’ বিজেপির অবশ্য পাল্টা বক্তব্য, এই ছবি ২০১০ সালের। তখন আইপিএল কেলেঙ্কারি সামনে আসেনি। দলীয় মুখপাত্র প্রকাশ জাভড়েকরের কথায়, ‘‘যে সময় ওই ছবি তোলা হয়, তখন ললিত রাজস্থান ক্রিকেট বোর্ডের প্রেসিডেন্ট। তাঁর বিরুদ্ধে কোনও আর্থিক অভিযোগও ওঠেনি। তা হলে তাঁর সঙ্গে ছবি তুলতে বাধা কোথায়?’’

কংগ্রেসের আক্রমণের আরও একটি তির, ব্লু কর্নার নোটিসের প্রসঙ্গ। ললিতের আইনজীবী আজ মুম্বইতে সাংবাদিক সম্মেলন করে দাবি করেন, ইন্টারপোল সূত্রে তাঁরা জেনেছেন, এ রকম কোনও নোটিস তাঁর নামে নেই। কংগ্রেসের বক্তব্য, ইউপিএ আমলে ওই নোটিস জারি করা হয়েছিল। তা হলে এনডিএ সরকার কি তা প্রত্যাহার করে নিয়েছে? ললিতকে পর্তুগাল যাওয়ার অনুমতি দেওয়ার সময় কেন সেখান থেকে তাঁকে ভারতে আনার শর্ত জোড়া হল না, সেই প্রশ্নও তুলেছে কংগ্রেস। তাদের অভিযোগ, এই শর্ত আরোপ না করে সুষমা আদতে ললিতকে পালিয়ে থাকতেই সাহায্য করেছেন। কংগ্রেস মুখপাত্রের অভিযোগ, ‘‘এক জন ফেরারকে পালিয়ে থাকতে সাহায্য করার জন্য বিদেশমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলাই বা কেন হবে না?’’

বিজেপি যেমন এ দিন কংগ্রেসের অভিযোগকে রাজনৈতিক দেউলিয়াপনা বলে অভিহিত করেছে, তেমনই আসরে নেমেছেন ললিত মোদীও। ব্রিটেনে বসে একের পর এক টুইট করে সুষমাকে সমর্থনের পাশাপাশি ‘আসল তথ্য ফাঁস’ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, ‘যুদ্ধে আসলে কেউ জেতে না, এটা আমি জানি। কিন্তু আমি এখনও লড়ছি... খেলা সবে শুরু হল।’ আর মুম্বইয়ে ললিতের আইনজীবী মেহমুদ আবদির দাবি, গোটা ঘটনার পিছনে রয়েছে রাজনীতি। আইপিএল-এর কোচি টিমে কংগ্রেস সাংসদ তথা প্রাক্তন মন্ত্রী শশী তারুরের প্রয়াত স্ত্রী সুনন্দা পুষ্করের অংশীদারি নিয়ে ললিত মোদী মুখ খোলার পর থেকেই তাঁর পিছনে লেগেছে কংগ্রেস। আবদির প্রশ্ন, এ দেশের কোনও আদালত ললিতকে ‘অপরাধী’ বা ‘পলাতক’ বলেনি। উপরন্তু দিল্লি হাইকোর্ট গত বছরই ললিতের পাসপোর্ট ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। এর পরেও তাঁকে অপরাধী বলা হচ্ছে কেন?

বিরোধীরা অবশ্য ললিতকে অপরাধী তকমা দিয়েই মোদী-সুষমাকে কোণঠাসা করতে তৎপর। আর সেই চেষ্টায় শুধু কংগ্রেস নয়, বাম, জনতা সকলেই সামিল। সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার, লালুপ্রসাদ-সহ প্রায় সব ক’টি বিরোধী দলের নেতারা আজ একযোগে বিজেপি এবং প্রধানমন্ত্রীকে আক্রমণ করেছেন। সূত্রের খবর, বিহারের ভোটের দিকে তাকিয়ে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রেখেই আসরে নেমেছেন তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE