আপনারা ২০ মিনিটের মধ্যে কলকাতায় ফোন করে মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে কথা বলে আসুন। আমরা এক কাপ কফি খেয়ে আসছি। কবে ভোট হবে, রায় দিয়েই যাব।
বিচারপতি এ কে পট্টনায়কের মুখে এ কথা শুনে সেদিন চমকে উঠেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের আইনজীবীরা। এত তাড়াতাড়ি কী করে আলোচনা হবে, প্রশ্ন তোলায় বিচারপতি পট্টনায়ক বলেন, আরেকটু সময় নিন। আমরা দু’কাপ কফি খেয়ে আসছি।
পাঁচ বছর আগে, ২০১৩-র ২৮ জুনের কথা। অবাধ ও সুষ্ঠ পঞ্চায়েত নির্বাচন করতে কেন্দ্রীয় বাহিনী নামিয়ে, পাঁচ দফায় ভোট করাতে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তৎকালীন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার মীরা পাণ্ডে। সেদিন পাঁচ দফায় ভোটের দিনক্ষণ নিয়ে রায় দিয়েই উঠেছিলেন বিচারপতি পট্টনায়ক।
সে সময় বিচারপতি পট্টনায়কের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে তাঁর সঙ্গে বসতেন বিচারপতি রঞ্জন গগৈ। সেই তখন থেকেই দুই বিচারপতির মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া ও আস্থার সম্পর্ক তৈরি হয়। রঞ্জন গগৈ এখন প্রধান বিচারপতি। বিচারপতি পট্টনায়ক চার বছর আগেই অবসর নিয়েছেন। কিন্তু পট্টনায়কের প্রতি তাঁর আস্থা যে চিড় খায়নি, তা বুঝিয়েই অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি পট্টনায়কের নজরদারিতে সিবিআইয়ের ডিরেক্টর অলোক বর্মার বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় ভিজিল্যান্স কমিশনের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি।
সোমবার থেকেই সেই কাজ শুরু করেছেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি পট্টনায়ক। তাঁর উপর আস্থা বুঝিয়ে মঙ্গলবারও প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ সুপ্রিম কোর্টে মন্তব্য করেছেন, ওই তদন্তে যাবতীয় সিদ্ধান্ত অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি পট্টনায়কই নেবেন। রাকেশ আস্থানার বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগকারী ব্যবসায়ী সতীশ সানা আদালতের কাছে আর্জি জানিয়েছিলেন, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির উপস্থিতিতে তাঁর বয়ান নথিবদ্ধ করা হোক। সে সময়ই প্রধান বিচারপতি গগৈ বলেন, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি পট্টনায়ক যেটা ভাল বুঝবেন, সেটাই করবেন।
সুপ্রিম কোর্টের বর্তমান ও অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিরা জানেন, বলিয়ে-কইয়ে হিসেবে পরিচিত অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অনঙ্গকুমার পট্টনায়ক যেমন কড়া, তেমন তাঁর সততা ও নিরপেক্ষতাও প্রশ্নাতীত। সর্বোপরি তাঁকে কোনও দলের লোক বলেই দাগিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। তিনি কাউকেই রেয়াত করেন না। প্রবীণ আইনজীবীদের যুক্তি, সিবিআই ডিরেক্টরের বিরুদ্ধে সিভিসি-র তদন্তে প্রভাব খাটানো বা নাক গলানোর চেষ্টার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। যুক্তিসঙ্গত কারণেই তাঁর উপর ভরসা রেখেছেন প্রধান বিচারপতি গগৈ। অবসরের আগে এই বিচারপতি পট্টনায়কই রায় দিয়েছিলেন, সাংসদ-বিধায়করা ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত হলে তাঁদের সাংসদ-বিধায়ক পদ চলে যাবে। আবার টু-জি স্পেকট্রাম দুর্নীতি মামলার জন্য গঠিত বিশেষ বেঞ্চেরও তিনি সদস্য ছিলেন। সুপ্রিম কোর্টের যে সাংবিধানিক বেঞ্চ যুগ্ম-সচিবদের বিরুদ্ধে তদন্তের জন্য সিবিআইয়ের সরকারি অনুমতির প্রয়োজন খারিজ করে দিয়েছিল, তারও সদস্য ছিলেন তিনি।
প্রবীণ আইনজীবীদের বক্তব্য, প্রভাবশালীদের কোনও কালেই রেয়াত করেননি অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি পট্টনায়ক। তাই কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সৌমিত্র সেনের বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্ট প্রস্তাবের তদন্তের ভারও দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। তাঁর জন্যই বিসিসিআই-এর শীর্ষপদ থেকে এন শ্রীনিবাসনকে সরে দাঁড়াতে হয়। কলকাতায় আমেরিকান সেন্টারে হামলার মূল চক্রী আফতাব আনসারির ফাঁসির নির্দেশও দিয়েছিলেন এই বিচারপতি পট্টনায়কই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy