Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

ভারতের সড়ক-প্রস্তাব কানে যেতেই ফোঁস চিনের

ভারত-চিন সীমান্তে, ম্যাকমাহন লাইন বরাবর প্রায় ২০০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক নির্মাণের প্রস্তুতি নিচ্ছে ভারত সরকার। সরকারি সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই ৪০ হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পের ব্যাপারে নরেন্দ্র মোদী সরকার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই প্রকল্পটির জন্য একটি বিশদ প্রকল্প রিপোর্ট (ডিপিআর) তৈরির জন্য কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর ভারত সরকারের এই মনোভাব প্রকাশ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই নড়েচড়ে বসেছে চিন। আজ বেজিংয়ে চিনা বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র হং লি জানিয়েছেন, তাঁদের আশা, ভারত-চিন সীমান্ত সমস্যার চূড়ান্ত সমাধানের আগে ভারত এমন কিছু করবে না যাতে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জটিল হয়ে ওঠে।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:২৯
Share: Save:

ভারত-চিন সীমান্তে, ম্যাকমাহন লাইন বরাবর প্রায় ২০০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক নির্মাণের প্রস্তুতি নিচ্ছে ভারত সরকার। সরকারি সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই ৪০ হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পের ব্যাপারে নরেন্দ্র মোদী সরকার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এই প্রকল্পটির জন্য একটি বিশদ প্রকল্প রিপোর্ট (ডিপিআর) তৈরির জন্য কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর ভারত সরকারের এই মনোভাব প্রকাশ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই নড়েচড়ে বসেছে চিন। আজ বেজিংয়ে চিনা বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র হং লি জানিয়েছেন, তাঁদের আশা, ভারত-চিন সীমান্ত সমস্যার চূড়ান্ত সমাধানের আগে ভারত এমন কিছু করবে না যাতে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জটিল হয়ে ওঠে।

এই রকম একটি বৃহৎ প্রকল্পের কথা এর আগে সরকারি ভাবে ঘোষণা করেনি কেন্দ্র। গত কাল ইটানগরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেণ রিজিজু এই প্রকল্পের কথা সাংবাদিকদের জানান। আর তার পর থেকেই বিষয়টি নিয়ে জলঘোলা হতে শুরু করে। রিজিজু অবশ্য এর সঙ্গে চিনকে না জড়িয়ে অরুণাচল তথা উত্তর-পূর্বের অর্থনীতির কথা বলেছেন।

রিজিজু বলেছেন, “কেন্দ্র অরুণাচল প্রদেশের তাওয়াং-এর মাগো-থিংবু থেকে চাংলাং জেলার বিজয়নগর অবধি রাস্তা তৈরি করার কথা ভাবছে। এই রাস্তা তৈরির মাধ্যমে এক দিকে সীমান্তের গ্রামগুলি ছেড়ে কাজের সন্ধানে বাইরে চলে যাওয়া স্থানীয় মানুষকে কাজ দিয়ে নিজেদের এলাকায় ফেরত আনা যাবে। অন্য দিকে, সীমান্ত এলাকার বিকাশ ঘটিয়ে মানুষের জীবনযাত্রার মানও উন্নত করা সম্ভব হবে।” রিজিজু জানান, সড়ক তৈরির আনুমানিক খরচ ধরা হয়েছে ৪০ হাজার কোটি টাকা। ভারতে এটিই হতে চলেছে সবচেয়ে ব্যয়সাপেক্ষ ও বৃহত্তম পরিকাঠামো প্রকল্প।

দিল্লিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক সূত্র রিজিজুর বক্তব্যকে সমর্থন করেছেন। এই সূত্রে জানা গিয়েছে, কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রককে যত দ্রুত সম্ভব প্রস্তাবিত প্রকল্পের ডিপিআর তৈরি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে দিতে বলা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককেই ‘তদারকি মন্ত্রক’ হিসেবে নির্দিষ্ট করা হয়েছে। প্রস্তাবিত জাতীয় সড়ক তাওয়াং থেকে শুরু হয়ে ইস্ট কামেং, আপার সুবনসিরি, ওয়েস্ট সিয়াং, আপার সিয়াং, দিবাং উপত্যকা, চাগলাগাম, কিবিতো, ডং, হাওয়াই হয়ে বিজয়নগরে শেষ হবে বলে ঠিক হয়েছে।

রিজিজুর বক্তবকে কেন্দ্র করে এর পরেই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে চিন। ম্যাকমাহন লাইনের ও-পারে চিন রাস্তা তৈরির কাজ আগেই শুরু করেছে। রেললাইন বসানোর পরিকল্পনাও তারা হাতে নিয়েছে। দক্ষিণ তিব্বতে তৈরি করা হচ্ছে পাঁচটি বিমানবন্দর। এই পরিস্থিতিতে মোদী সরকারের এই পরিকল্পনা চিনকে যে পাল্টা চাপে ফেলবে তা স্বাভাবিক। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, দেশের এই একক বৃহত্তম সড়ক প্রকল্প একজন প্রতিমন্ত্রীকে দিয়ে ভারত সরকার কেন ‘ঘোষণা’ করাল? কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ধারণা, ইচ্ছে করেই প্রকল্প-ভাবনা রিজিজুর মতো ‘নবীন’ মন্ত্রীর মুখ দিয়ে বলানো হয়েছে। যাচাই করা হচ্ছে চিনের মনোভাব, আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া।

বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর, কাল, বৃহস্পতিবার ভারত-চিন ওয়ার্কিং মেকানিজমের বৈঠক রয়েছে। ভারতের পক্ষে এই বৈঠকে নেতৃত্ব দেবেন মন্ত্রকের যুগ্মসচিব (পূর্ব এশিয়া) প্রদীপ রাওয়াত। চিনা দলের নেতৃত্বে থাকবেন সে দেশের স্থল ও সমুদ্র সীমান্ত বিষয়ক বিভাগের ডিজি। পর্যবেক্ষকদের ধারণা, এই বৈঠকে লাদাখ সীমান্তে উদ্ভূত সাম্প্রতিক জটিলতার মতো বিষয়গুলি উঠত। কিন্তু তার আগে সড়ক প্রকল্প ‘ঘোষণা’ করে কূটনৈতিক চাপ বাড়াল দিল্লি। ফলে কালকের বৈঠকে বিষয়টি উঠতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE