শিল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে সরকারের এক্তিয়ার বাড়াতে প্রথম দিন থেকেই সক্রিয় কেন্দ্রে মোদী সরকার। তাই কৃষকদের সম্মতির মাত্রা ৮০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫০ শতাংশ করার সুপারিশ করেছে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক। এর সঙ্গে এ বার শিল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণের নিয়মেও বদল আনতে চাইছে কেন্দ্র। সেখানে ‘প্রভাবিত পরিবার’ সংজ্ঞা পরিবর্তন করার সুপারিশ করেছে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক।
কোনও কোনও মহল অবশ্য একে ক্ষতিপূরণের বহর ছাঁটাইয়ের প্রক্রিয়া বলেই উল্লেখ করেছে। সরকারের শীর্ষ সূত্রে অবশ্য বলা হচ্ছে, বর্তমান জমি আইনে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার শর্তে ‘পপুলিজম’ বা জনপ্রিয় রাজনীতির যে উদ্বৃত্ত মেদ রয়েছে, তা ছেঁটে ফেলতে চাইছে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক। এ ব্যাপারে ঘরোয়া ভাবে রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে ইতিমধ্যেই আলোচনা শুরু করেছেন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী নিতিন গডকড়ী। প্রাথমিক সেই আলোচনার পর শীঘ্রই এ ব্যাপারে সর্বদল বৈঠক ডাকবেন নরেন্দ্র মোদী।
বহু টানাপড়েনের পর ১৮৯৪ সালের জমি অধিগ্রহণ আইন বাতিল করে গত বছর নতুন জমি ও পুনর্বাসন আইন পাশ করে কেন্দ্রে মনমোহন সিংহ সরকার। কিন্তু নতুন এই আইনটি যে শিল্প উপযোগী নয়, সে ব্যাপারে গোড়া থেকে সরব ছিল বণিকসভাগুলি। কেন্দ্রে ক্ষমতা দখলের পরপরই তাই আইনটি সংশোধনে তৎপর হয় নরেন্দ্র মোদী সরকার। এ জন্য সম্প্রতি সব রাজ্যের রাজস্ব মন্ত্রীকে দিল্লিতে এক বৈঠকেও ডাকেন গডকড়ী।
শুধু বিজেপিশাসিত রাজ্য নয়, কংগ্রেসশাসিত রাজ্যের মন্ত্রীরাও সে দিন নতুন আইনের একাধিক ধারা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। পশ্চিমবঙ্গ বাদ দিয়ে কমবেশি প্রায় সব রাজ্যেরই বক্তব্য ছিল, শিল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে কমপক্ষে ৮০ শতাংশ কৃষকের সম্মতি নেওয়ার প্রক্রিয়া অযৌক্তিক। এত কৃষকের মত নিয়ে জমি অধিগ্রহণ করা বাস্তবসম্মত নয়। তা কমিয়ে নিদেনপক্ষে ৬০ শতাংশ করা হোক। অর্থাৎ কোনও বেসরকারি শিল্প সংস্থা যদি ৬০ শতাংশ জমির মালিকের সম্মতি আদায় করে নিতে পারে, তা হলে বাকি জমি অধিগ্রহণে সরকার হস্তক্ষেপ করবে।
তাৎপর্যপূর্ণ হল, রাজ্যগুলির সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে গডকড়ীর মন্ত্রক জমি আইনে সংশোধনের যে সুপারিশ পাঠিয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, বেসরকারি শিল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে বর্তমানের ৮০ শতাংশের পরিবর্তে ৫০ শতাংশ জমির মালিকের মত নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হোক। আবার সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে গড়ে ওঠা শিল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণে কমপক্ষে ৭০% জমির মালিকের সম্মতি নেওয়া বর্তমানে আইনে বাধ্যতামূলক। কিন্তু কেন্দ্রের প্রস্তাব, যৌথ প্রকল্পে জমির মালিকানা সরকারের কাছেই থাকে, তাই এ ক্ষেত্রে সম্মতি নেওয়ার শর্তই তুলে দেওয়া হোক। যার অর্থ শিল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণের রাজ্যের হাতে অধিকার আরও বাড়াতে চাইছে সরকার।
কিন্তু নতুন জমি বিলে সংশোধন প্রস্তাব এখানেই শেষ নয়। বিভিন্ন রাজ্যের রাজস্ব মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকের শেষে নিতিন গডকড়ী বলেছিলেন, “আর যা-ই পরিবর্তন করা হোক, বর্তমান আইনে ক্ষতিপূরণের যে শর্ত রয়েছে, তা লঘু করা হবে না।” অথচ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, ক্ষতিপূরণের শর্ত যাতে লঘু করা হয়, সেই মর্মেও দাবি জানাচ্ছিলেন শিল্পকর্তারা। এই অবস্থায় ক্ষতিপূরণের বহর কমাতে নয়া কৌশল নিয়েছে মোদী সরকার।
গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের বক্তব্য, রাজ্যগুলিই দাবি জানাচ্ছে যে, পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণের নিয়ম সরল করা হোক। তাই মন্ত্রকের প্রস্তাব, জমি অধিগ্রহণের ফলে ‘প্রভাবিত পরিবারের’ সংজ্ঞা পরিবর্তন করা হোক। কারণ বর্তমান আইনে বলা হয়েছে, জমি অধিগ্রহণের পূর্ববর্তী তিন বছর ধরে ওই জমির ওপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করছে, এমন সব পরিবারকেই ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। মোদী সরকারের বক্তব্য, এই ধারার অপব্যবহার হতে পারে। তাই প্রভাবিত পরিবারের সংজ্ঞা আরও সুনির্দিষ্ট করতে হবে।
প্রাক্তন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী জয়রাম রমেশ বলেন, “এর অর্থ একটাই। তা হল, ঘুরিয়ে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ কমাতে চাইছে সরকার।” এখনই কোনও প্রতিক্রিয়া না জানালেও কংগ্রেস নেতৃত্ব বুঝিয়ে দেন, জমি আইন কৃষকদের স্বার্থ বিরোধী করতে গেলে তাঁরা আপত্তি করবেন। তবে নিতিন গডকড়ী আজ বলেন, রাজ্যগুলির সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সংশোধনের কিছু প্রস্তাব সরকার দিয়েছে। এ বিষয়ে সর্বসম্মতি গড়ে তোলার জন্য আরও আলোচনা চালাবে কেন্দ্র। তাঁর কথায়, “একটা কথা মানতে হবে যে, দেশে শিল্প ও পরিকাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রে জমি অধিগ্রহণের বিষয়টি এখন সব থেকে বড় বাধা। সরকার দ্রুত তা কাটিয়ে উঠতে বদ্ধপরিকর।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy