Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Andaman & Nicobar Islands

ব্রিটিশদের তৈরি ‘কালাপানি’, যেখানে মৃত বন্দিদের দেহ ছুড়ে ফেলা হত সমুদ্রে

প্রকোষ্ঠগুলি এমন ভাবে বানানো হয়েছিল, যাতে কোনও বন্দি অন্য কারও মুখ দেখতে না পারেন। ফলে তাঁদের মধ্যে যোগাযোগের কোনও উপায় ছিল না। এ ভাবেই ‘সলিটারি কনফাইনমেন্ট’-এর ব্যবস্থা করেছিল ব্রিটিশ সরকার।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০১৯ ১১:০৪
Share: Save:
০১ ১৩
সাগরের জল কালো হোক না হোক, নৃশংস অত্যাচারের ক্ষত কালোর থেকেও গভীর। স্বাধীনতা যুদ্ধের বহু আগে থেকেই আন্দামান ছিল ব্রিটিশদের তৈরি ‘কালাপানি’। সিপাহি বিদ্রোহের সময় থেকেই এখানে দ্বীপান্তরে পাঠানো হত বন্দিদের। অত্যাচারী ব্রিচিশ শাসক সেই ধারা পূর্ণমাত্রায় বজায় রেখেছিল স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ক্ষেত্রেও।

সাগরের জল কালো হোক না হোক, নৃশংস অত্যাচারের ক্ষত কালোর থেকেও গভীর। স্বাধীনতা যুদ্ধের বহু আগে থেকেই আন্দামান ছিল ব্রিটিশদের তৈরি ‘কালাপানি’। সিপাহি বিদ্রোহের সময় থেকেই এখানে দ্বীপান্তরে পাঠানো হত বন্দিদের। অত্যাচারী ব্রিচিশ শাসক সেই ধারা পূর্ণমাত্রায় বজায় রেখেছিল স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ক্ষেত্রেও।

০২ ১৩
সিপাহি বিদ্রোহের পরে প্রায় দুশো জন বিদ্রোহীকে আন্দামানে দ্বীপান্তরে পাঠিয়েছিল ব্রিটিশরা। মুঘল রাজবং‌শের অনেক সদস্য এবং সিপাহি বিদ্রোহের সময় যাঁরা বাহাদুর শাহ জাফরের পাশে ছিলেন, তাঁদের অনেকেরই নিয়তি ছিল কালাপানি।

সিপাহি বিদ্রোহের পরে প্রায় দুশো জন বিদ্রোহীকে আন্দামানে দ্বীপান্তরে পাঠিয়েছিল ব্রিটিশরা। মুঘল রাজবং‌শের অনেক সদস্য এবং সিপাহি বিদ্রোহের সময় যাঁরা বাহাদুর শাহ জাফরের পাশে ছিলেন, তাঁদের অনেকেরই নিয়তি ছিল কালাপানি।

০৩ ১৩
উনিশ শতকের শেষে পরাধীন ভারতে তুঙ্গে স্বাধীনতা সংগ্রাম। ফাঁসির পাশাপাশি সশস্ত্র পথের বিপ্লবীদের বেশিরভাগেরই শাস্তি হয়েছিল দ্বীপান্তর। সেই সময় ব্রিটিশ সরকার বুঝল, এ বার আন্দামানে দরকার নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা সমেত একটি কারাগার।

উনিশ শতকের শেষে পরাধীন ভারতে তুঙ্গে স্বাধীনতা সংগ্রাম। ফাঁসির পাশাপাশি সশস্ত্র পথের বিপ্লবীদের বেশিরভাগেরই শাস্তি হয়েছিল দ্বীপান্তর। সেই সময় ব্রিটিশ সরকার বুঝল, এ বার আন্দামানে দরকার নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা সমেত একটি কারাগার।

০৪ ১৩
মূলত ব্রিটিশ রাজকর্মচারী চার্লস জেমস ল্যাল এবং চিকিৎসক এ এস লেথব্রিজের মস্তিষ্কপ্রসূত ছিল সেলুলার জেল। ১৮৯৬ সালে শুরু কারাগার নির্মাণের কাজ। শেষ হয় ১৯০৬ সালে। তৎকালীন বর্মা থেকে ঘন লাল রঙের ইট এনে প্রথমে তৈরি হয়েছিল কারাগার।

মূলত ব্রিটিশ রাজকর্মচারী চার্লস জেমস ল্যাল এবং চিকিৎসক এ এস লেথব্রিজের মস্তিষ্কপ্রসূত ছিল সেলুলার জেল। ১৮৯৬ সালে শুরু কারাগার নির্মাণের কাজ। শেষ হয় ১৯০৬ সালে। তৎকালীন বর্মা থেকে ঘন লাল রঙের ইট এনে প্রথমে তৈরি হয়েছিল কারাগার।

০৫ ১৩
কারাগার ভবনের সাতটি শাখা ছিল। কেন্দ্রে ছিল টাওয়ার। যেখান থেকে রক্ষীরা নজরদারি চালাতেন। বাইসাইকেলের চাকায় যেমন স্পোক থাকে, সে ভাবে কেন্দ্র থেকে বিস্তৃত ছিল শাখাগুলো।

কারাগার ভবনের সাতটি শাখা ছিল। কেন্দ্রে ছিল টাওয়ার। যেখান থেকে রক্ষীরা নজরদারি চালাতেন। বাইসাইকেলের চাকায় যেমন স্পোক থাকে, সে ভাবে কেন্দ্র থেকে বিস্তৃত ছিল শাখাগুলো।

০৬ ১৩
‘সেলুলার জেল’ নাম এসেছে ‘সেল’ বা প্রকোষ্ঠ থেকে। কারাগারে মোট ৬৯৬টি সেল ছিল। ১৪.৮ x ৮.৯ ফিটের প্রকোষ্ঠগুলিতে থাকত একটি মাত্র ঘুলঘুলি। সেটাও মেঝে থেকে ৯.৮ ফিট উচ্চতায়।

‘সেলুলার জেল’ নাম এসেছে ‘সেল’ বা প্রকোষ্ঠ থেকে। কারাগারে মোট ৬৯৬টি সেল ছিল। ১৪.৮ x ৮.৯ ফিটের প্রকোষ্ঠগুলিতে থাকত একটি মাত্র ঘুলঘুলি। সেটাও মেঝে থেকে ৯.৮ ফিট উচ্চতায়।

০৭ ১৩
প্রকোষ্ঠগুলি এমন ভাবে বানানো হয়েছিল, যাতে কোনও বন্দি অন্য কারও মুখ দেখতে না পারেন। ফলে তাঁদের মধ্যে যোগাযোগের কোনও উপায় ছিল না। এ ভাবেই ‘সলিটারি কনফাইনমেন্ট’-এর ব্যবস্থা করেছিল ব্রিটিশ সরকার।

প্রকোষ্ঠগুলি এমন ভাবে বানানো হয়েছিল, যাতে কোনও বন্দি অন্য কারও মুখ দেখতে না পারেন। ফলে তাঁদের মধ্যে যোগাযোগের কোনও উপায় ছিল না। এ ভাবেই ‘সলিটারি কনফাইনমেন্ট’-এর ব্যবস্থা করেছিল ব্রিটিশ সরকার।

০৮ ১৩
কত জন রাজনৈতিক বন্দিকে আন্দামানে দ্বীপান্তরিত করা হয়েছিল, তার কোনও সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যায় না। তবে সংখ্যাটি অন্তত ৮০ হাজার বলেই মনে করেন ইতিহাসবিদরা। তার মধ্যে সামান্য সংখ্যক স্বাধীনতা সংগ্রামী ফিরতে পেরেছিলেন স্বাধীন ভারতবর্ষে।

কত জন রাজনৈতিক বন্দিকে আন্দামানে দ্বীপান্তরিত করা হয়েছিল, তার কোনও সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যায় না। তবে সংখ্যাটি অন্তত ৮০ হাজার বলেই মনে করেন ইতিহাসবিদরা। তার মধ্যে সামান্য সংখ্যক স্বাধীনতা সংগ্রামী ফিরতে পেরেছিলেন স্বাধীন ভারতবর্ষে।

০৯ ১৩
ব্রিটিশ শাসনের শেষ অর্ধে সেলুলার জেলের বন্দিদের বড় অংশ ছিল স্বাধীনতা সংগ্রামী। ফজলে-এ-হক-খয়রাদি, যোগেন্দ্র শুক্ল, বটুকেশ্বর দত্ত, বারীন ঘোষ, শচীন্দ্রনাথ সান্যাল-সহ অসংখ্য বন্দি সেখানে অকথ্য অত্যাচারের শিকার হয়েছেন। অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে অধিকাংশ বন্দি হয় মারা গিয়েছেন, নয়তো আত্মঘাতী হয়েছেন। অনেক সময়েই প্রাণদণ্ড বা অন্য কারণে মৃত বন্দিদের দেহ ভাসিয়ে দেওয়া হত সাগরের জলে।

ব্রিটিশ শাসনের শেষ অর্ধে সেলুলার জেলের বন্দিদের বড় অংশ ছিল স্বাধীনতা সংগ্রামী। ফজলে-এ-হক-খয়রাদি, যোগেন্দ্র শুক্ল, বটুকেশ্বর দত্ত, বারীন ঘোষ, শচীন্দ্রনাথ সান্যাল-সহ অসংখ্য বন্দি সেখানে অকথ্য অত্যাচারের শিকার হয়েছেন। অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে অধিকাংশ বন্দি হয় মারা গিয়েছেন, নয়তো আত্মঘাতী হয়েছেন। অনেক সময়েই প্রাণদণ্ড বা অন্য কারণে মৃত বন্দিদের দেহ ভাসিয়ে দেওয়া হত সাগরের জলে।

১০ ১৩
ছেঁড়া ফতুয়া গলায় পেঁচিয়ে আত্মঘাতী হয়েছিলেন বিপ্লবী ইন্দুভূষণ রায়। বিপ্লবী উল্লাসকর দত্ত ১৪ বছর বন্দিজীবন কাটিয়েছেন সেলুলার জেলে। অত্যাচরে জর্জরিত বিপ্লবী আক্রান্ত হয়েছিলেন ম্যালেরিয়ায়। শেষে তাঁর জায়গা হয়েছিল কারাগারের লুনাটিক ওয়ার্ডে। অবশেষে ১৯২০ সালে মুক্তি লাভের পরে তিনি ফিরে এসেছিলেন কলকাতায়।

ছেঁড়া ফতুয়া গলায় পেঁচিয়ে আত্মঘাতী হয়েছিলেন বিপ্লবী ইন্দুভূষণ রায়। বিপ্লবী উল্লাসকর দত্ত ১৪ বছর বন্দিজীবন কাটিয়েছেন সেলুলার জেলে। অত্যাচরে জর্জরিত বিপ্লবী আক্রান্ত হয়েছিলেন ম্যালেরিয়ায়। শেষে তাঁর জায়গা হয়েছিল কারাগারের লুনাটিক ওয়ার্ডে। অবশেষে ১৯২০ সালে মুক্তি লাভের পরে তিনি ফিরে এসেছিলেন কলকাতায়।

১১ ১৩
বন্দিদের উপর ব্রিটিশ সরকারে নির্মম অত্যাচারের প্রতিবাদে ১৯৩৩ সালে অনশনে বসেছিলেন ৩৩ জন বন্দি। তাঁদের মধ্যে ছিলেন মহাবীর সিংহ, মোহনকিশোর নমদাস এবং মোহিত মৈত্র। ব্রিটিশ সরকার তাঁদের জোর করে খাওয়ানোর সময় তাঁরা প্রাণ হারিয়েছিলেন।

বন্দিদের উপর ব্রিটিশ সরকারে নির্মম অত্যাচারের প্রতিবাদে ১৯৩৩ সালে অনশনে বসেছিলেন ৩৩ জন বন্দি। তাঁদের মধ্যে ছিলেন মহাবীর সিংহ, মোহনকিশোর নমদাস এবং মোহিত মৈত্র। ব্রিটিশ সরকার তাঁদের জোর করে খাওয়ানোর সময় তাঁরা প্রাণ হারিয়েছিলেন।

১২ ১৩
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে ১৯৪১ সালে ব্রিটিশদের হাত থেকে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ অধিকার করে জাপানি শক্তি। পোর্ট ব্লেয়ারে পতাকা উত্তোলনের পাশাপাশি আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপের নতুন নামকরণ করেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। ‘শহিদ’ ও ‘স্বরাজ’ দ্বীপ। তবে অবস্থা পরিবর্তিত হয়ে যায় দ্বিতীয় বিশ্বযু্দ্ধে জাপানের পতনের সঙ্গে। আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপের কর্তৃত্ব আবার চলে যায় ব্রিটিশদের হাতে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে ১৯৪১ সালে ব্রিটিশদের হাত থেকে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ অধিকার করে জাপানি শক্তি। পোর্ট ব্লেয়ারে পতাকা উত্তোলনের পাশাপাশি আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপের নতুন নামকরণ করেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। ‘শহিদ’ ও ‘স্বরাজ’ দ্বীপ। তবে অবস্থা পরিবর্তিত হয়ে যায় দ্বিতীয় বিশ্বযু্দ্ধে জাপানের পতনের সঙ্গে। আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপের কর্তৃত্ব আবার চলে যায় ব্রিটিশদের হাতে।

১৩ ১৩
বর্তমানে সেলুলার জেল ভারতের অন্যতম জাতীয় স্মারকসৌধ। পোর্ট ব্লেয়ারে পর্যটকদের প্রধান গন্তব্য। ১৯৬৩ সালে কারাগারে তৈরি হয় গোবিন্দ বল্লভ পন্থ হাসপাতাল। বর্তমানে এটি ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট একটি হাসপাতাল।   ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া

বর্তমানে সেলুলার জেল ভারতের অন্যতম জাতীয় স্মারকসৌধ। পোর্ট ব্লেয়ারে পর্যটকদের প্রধান গন্তব্য। ১৯৬৩ সালে কারাগারে তৈরি হয় গোবিন্দ বল্লভ পন্থ হাসপাতাল। বর্তমানে এটি ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট একটি হাসপাতাল। ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy