ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ‘কাশ্মীর-মন্তব্য’ নিয়ে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা হয়েছিল দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় (জেএনইউ)-এর প্রাক্তন ছাত্রনেত্রী শেহলা রশিদের বিরুদ্ধে। এ বার দু’বছর পর ওই মামলা প্রত্যাহারের অনুমতি দিল দিল্লির পটিয়ালা হাউস আদালত। বৃহস্পতিবার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট অনুজ কুমার সিংহ এই নির্দেশ দিয়েছেন।
দু’বছর আগে জেএনইউ-এর ছাত্র সংসদের প্রাক্তন সহ-সভাপতি তথা আইসার নেত্রী শেহলার তিন বছরের পুরনো একাধিক মন্তব্য নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় সবুজসঙ্কেত দিয়েছিলেন দিল্লির উপরাজ্যপাল ভিকে সাক্সেনা। তবে এ বার উপরাজ্যপালই সেই মামলার অনুমতি প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছেন। আদালতে জমা দেওয়া আবেদন অনুযায়ী, গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখে রিপোর্ট জমা দিয়েছিল স্ক্রিনিং কমিটি। ২০২৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর স্ক্রিনিং কমিটির সুপারিশ অনুমোদন করেছেন সাক্সেনাও। তার ভিত্তিতেই এই সিদ্ধান্ত।
আরও পড়ুন:
দ্বিতীয় মোদী সরকারের বিরুদ্ধে দিল্লিতে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) বিরোধী বিক্ষোভে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন শেহলা। অভিযোগ, ২০১৯ সালের অগস্টে সমাজমাধ্যম এক্স (সাবেক টুইটার)-এ কয়েকটি টুইট করেছিলেন তিনি। তাঁর দাবি ছিল, কাশ্মীরের বাসিন্দাদের বাড়িতে ঢুকে কিশোর ছেলেদের তুলে নিয়ে যাচ্ছে ভারতীয় সেনা। সঙ্গে খাবারদাবার তছনছ করা হচ্ছে। টুইটে শেহলা লিখেছিলেন, ‘‘গভীর রাতে বাড়িতে ঢুকে হামলা চালাচ্ছে সশস্ত্র বাহিনী। ছেলেদের তুলে নিয়ে যাচ্ছে, রেশন মেঝেয় ফেলে দিচ্ছে, চালের সঙ্গে তেল মেশাচ্ছে।’’ আর একটি টুইটে তিনি লেখেন, ‘‘শোপিয়ানের চার জনকে সেনা শিবিরে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদের নামে অত্যাচার করা হয়েছে। অত্যাচারের সময় তাঁদের সামনে রাখা হয়েছিল একটি মাইক, যাতে গোটা এলাকার মানুষ তাঁদের আর্তনাদ শুনতে পায়।’’
আরও পড়ুন:
যদিও শেহলার সব অভিযোগ অস্বীকার করে ভারতীয় সেনা। এর পরেই তাঁর বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২৪-এ (দেশদ্রোহিতা), ১৩৫-এ (গোষ্ঠী-শত্রুতায় প্ররোচনা), ১৫৩ (দাঙ্গায় উস্কানি), ৫০৪ (শান্তিভঙ্গ) এবং ৫০৫ (জনগণের মধ্যে অবিশ্বাসের পরিবেশ তৈরির উদ্দেশ্যে মন্তব্য) ধারায় মামলা করেন সুপ্রিম কোর্টের তৎকালীন আইনজীবী অলখ অলোক শ্রীবাস্তব। শেহলার বিরুদ্ধে মামলা শুরুর অনুমতি চেয়েছিল দিল্লি পুলিশ। সেই আবেদনেই সিলমোহর দিয়েছিলেন দিল্লির উপরাজ্যপাল। ২০২৩ সালে দিল্লির উপরাজ্যপালের দফতরের বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, ‘‘বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে ভারতীয় সেনার বিরুদ্ধে সমাজমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর ‘টুইট’ করেছেন শেহলা, যা শান্তিরক্ষার জন্য ক্ষতিকারক। তার ভিত্তিতে শেহলার বিরুদ্ধে মামলা রুজু করার অনুমতি দিচ্ছেন দিল্লির উপরাজ্যপাল।’’ এ বার প্রত্যাহার করা হতে পারে ওই মামলা।