শাহিন বাগে জাতীয় পতাকা তুললেন প্রতিবাদী বৃদ্ধারা। ছিলেন রোহিত ভেমুলার মা-ও। রবিবার। ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া
সকাল থেকেই অগণিত মানুষের ভিড়। হাতে জাতীয় পতাকা, পোস্টার-প্ল্যাকার্ড। তিল ধারণের জায়গা নেই। গোটা ভিড়ের একটাই সুর— প্রজাতন্ত্র দিবসে সংবিধান রক্ষা শপথ নিতে হবে। আজ ৭১তম প্রজাতন্ত্র দিবসে এটাই ছবি প্রতিবাদী শাহিন বাগের। আজ সকালে সেখানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করলেন তিন ‘দাদি’—আসমা খাতুন (৯০), বিলকিস (৮২), শর্বরী (৭৫)। সঙ্গে রোহিত ভেমুলার মা রাধিকা।
সমবেত প্রতিবাদীরা গাইলেন জাতীয় সঙ্গীত। পাঠ করা হল সংবিধানের প্রস্তাবনাও। তার পরেই স্লোগান ওঠে, ‘‘সিএএ সে আজ়াদি’, ‘এনআরসি সে আজ়াদি’, ‘বিজেপি সে আজ়াদি’। ছিলেন জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী উমর খালিদ। গুজরাতের বিধায়ক জিগ্নেশ মেবাণীও ছিলেন। নির্ধারিত ছিল সকাল সাড়ে ৯টায় পতাকা উত্তোলন হবে। কিন্তু তা যখন হল, তখন বেলা গড়িয়ে সাড়ে ১১টা। তখনও মানুষ আসছেন শাহিন বাগে। প্রজাতন্ত্র দিবসে প্রজাতন্ত্র রক্ষার শপথ নিতে।
বিজেপি নেতারা লাগাতার হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন শাহিন বাগের আন্দোলনকারীদের। এ-ও বলছেন, দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি জয়ী হলে এক দিনও শাহিন বাগের অবস্থান চলবে না। কিন্তু আজ প্রতিবাদীরা একযোগে জানিয়ে দিয়েছেন, নাগরিকত্ব আইন প্রত্যাহার না-হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবে। সেই সুরেই আজ বিলকিস বলেন, ‘‘এটা আমাদের দেশ। আমাদের পূর্বপুরুষেরা স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছেন। আজ যদি আমরা দেশের সংবিধান এবং ধর্মনিরপেক্ষতা রক্ষায় ব্যর্থ হই, তা হলে দেশকে বাঁচানো যাবে না।’’ অশীতিপর মানুষটি প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘জামিয়া মিলিয়া এবং জেএনইউয়ে যে ভাবে হামলা হল, তাতে কি ছাত্রছাত্রীরা আদৌ সুরক্ষিত? এটাই কি বেটি বচাও বেটি পড়াও?’’
আরও পড়ুন: ভোটের আগে রাজপথে অস্ত্রের ঢালাও প্রদর্শনী
আর এক ‘দাদি’ শর্বরী তো সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেই কাঠগড়ায় তুলেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘যে প্রধানমন্ত্রী আমাদের উদ্বেগকে গুরুত্ব দেন না এবং বক্তব্য শুনতে চান না, তাঁকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে চাই না। কেন প্রধানমন্ত্রী বা মন্ত্রিসভার কোনও সদস্য এখনও আমাদের কথা শুনলেন না? চাইলে সিএএ-এনআরসি নিয়ে উদ্বেগ দূর করতেই পারতেন।’’
বিলকিস, শর্বরীদের প্রতিধ্বনিই আজ বার বার শোনা গিয়েছে শাহিন বাগে উপস্থিত নয় থেকে নব্বই সকলের মুখে। তাঁর বক্তব্যের সার কথা, ‘‘এটা দেশ বাঁচানোর লড়াই।’’ দেশের বিভিন্ন প্রান্তেই আজ প্রজাতন্ত্র দিবস কার্যত সিএএ, এনআরসি বিরোধী দিবসে পরিণত হয়েছিল। উত্তরপ্রদেশের ঘণ্টাঘরে প্রতিবাদীরা জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে সংবিধানের প্রস্তাবনা পাঠ করেন। কেরলের বেশ কয়েকটি মসজিদ ও গির্জায় জাতীয় পতাকা তুলে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy