এখনও এ দেশ থেকে প্রাণদণ্ড একেবারে তুলে দেওয়ার সময় আসেনি বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। সেই অবস্থান থেকেই প্রত্যাশিত ভাবে নরেন্দ্র মোদী সরকার আইন কমিশনের সুপারিশ খারিজ করে দিতে পারে।
সন্ত্রাসবাদ ছাড়া বাকি সব অপরাধেই প্রাণদণ্ড তুলে দেওয়ার সুপারিশ করেছিল অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ পি শাহ-র নেতৃত্বাধীন আইন কমিশন। কিন্তু এখনও রাজনৈতিক স্তরে সিদ্ধান্ত না হলেও আমলা স্তরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক থেকে আইন মন্ত্রকের কর্তারা সকলেই একমত, এখনই এ দেশ থেকে ফাঁসি তুলে দেওয়া সঠিক কাজ হবে না।
ইয়াকুব মেমনের ফাঁসির পর দেশ জুড়ে নতুন করে প্রাণদণ্ড ঘিরে বিতর্ক শুরু হয়। প্রথমে সুপ্রিম কোর্টে দুই বিচারপতির মধ্যে মতপার্থক্য, নতুন করে তিন সদস্যের বেঞ্চ গঠন এবং শেষ পর্যন্ত শীর্ষ আদালতের ফাঁসির পক্ষেই রায়। সেই বিতর্কের মধ্যেই আইন কমিশন সুপারিশ করে, সন্ত্রাসবাদ বা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধের মতো অপরাধকে ব্যতিক্রম রেখে বাকি সব ক্ষেত্রে প্রাণদণ্ড তুলে দেওয়া হোক। নতুন স্বরাষ্ট্রসচিব রাজীব মহর্ষির নেতৃত্বে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ও আইন মন্ত্রকের আমলারা সেই রিপোর্ট খতিয়ে দেখেছেন। সূত্রের খবর, কমিশনের সুপারিশ খারিজ করে দেওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। চলতি সপ্তাহেই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হতে পারে।
কেন্দ্রীয় সরকার যে এই সুপারিশ খারিজ করে দিতে পারে, তার ইঙ্গিত আগেই মিলেছিল। কারণ আইন কমিশনের সুপারিশ তৈরির সময়ই ঐকমত্য তৈরি হয়নি। কমিশনের ন’জন সদস্যের মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের দু’জন প্রতিনিধি, আইন মন্ত্রকের সচিব পি কে মলহোত্র ও পরিষদীয় সচিব সঞ্জয় সিংহ নিজেদের আপত্তি জানান। আরেক স্থায়ী সদস্য, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি ঊষা মেহরাও বিরোধিতা করেন। অনৈক্য সত্ত্বেও সুপ্রিম কোর্টের কাছে নিজেদের রিপোর্ট পেশ করে আইন কমিশন। আইনসচিব মলহোত্র যুক্তি দিয়েছিলেন, একমাত্র যে সব অপরাধে ফাঁসির আদেশ উপযুক্ত, সেখানেই মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। তাই আইন বদল না করে বিচারপতিদের উপরই বিষয়টি ছেড়ে দেওয়া উচিত।
আইন কমিশনের যুক্তি, কোনও অপরাধীকে প্রাণদণ্ড দেওয়ার পিছনে উদ্দেশ্য থাকে যাতে একই অপরাধ আর না ঘটে। কিন্তু সেই উদ্দেশ্য সফল হচ্ছে না। তাই আপাতত সন্ত্রাসবাদে প্রাণদণ্ড রাখলেও ধীরে ধীরে একেবারেই তা তুলে দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করেছিল আইন কমিশন। কমিশনের এই রিপোর্ট তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ এর আগে ১৯৬৭-তে এই আইন কমিশনই ফাঁসির পক্ষে সওয়াল করেছিল। যার ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্টও প্রাণদণ্ডের সাংবিধানিক বৈধতা বজায় রাখে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy