উন্নয়ন ফের পিছনের সারিতে। বরং বিহারে ভোট যতই এগিয়ে আসছে, জয়ের চাবিকাঠি ঘুরে মরছে জাতপাত আর সংরক্ষণের সেই পুরনো গলিতেই।
লোকসভা ভোটে নরেন্দ্র মোদীর উন্নয়নের তাসেই ধুয়ে মুছে সাফ হয়েছিল বিহারের শাসক জোট। কিন্তু বিধানসভা নির্বাচনে সেই পথে ভরসা রাখতে পারছেন না দশ বছর ক্ষমতায় থাকা মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার এমনকী বিজেপিও। ফলে ফের স্বমহিমায় জাতপাত ও সংরক্ষণের রাজনীতি। এরই মধ্যে মোহন ভাগবতের সংরক্ষণ বিরোধী মন্তব্যে অস্বস্তিতে পড়া বিজেপি এখন ভরসা করতে চাইছে রাজস্থানের বসুন্ধরা সরকারের পদক্ষেপে। গত কাল রাজস্থানে চাকরি ও শিক্ষা ক্ষেত্রে সব মিলিয়ে ৬৮ শতাংশ সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নীতীশ–লালুর মহাজোট এখন বিজেপিকে সংরক্ষণবিরোধী হিসেবে তুলে ধরতে প্রচারে নেমেছে। আর রাজস্থানের উদাহরণ টেনে মোদীর দল বোঝাতে চাইছে, তারা মোটেই সংরক্ষণ বিরোধী নয়। বরং রাজস্থানের মতো বিজেপি শাসিত রাজ্য প্রয়োজনে অতিরিক্ত সংরক্ষণ দিতেও পিছপা নয়।
বিহারের ভোটকে এ বার গোড়া থেকেই অগ্রসর ও অনগ্রসরের লড়াইয়ে পর্যবসিত করার কৌশল নিচ্ছিল লালু-নীতীশ-কংগ্রেসের জোট। পটনায় জোটের স্বভিমান সভা থেকে লালু প্রসাদ ক’দিন আগেই ঘোষণা করেছিলেন, ‘‘ভোটে এ বার মণ্ডল পার্ট টু হবে!’’ আর এরই মধ্যে লালু-নীতীশদের কাছে মেঘ না চাইতে জলের কাজ করেছে সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবতের বিবৃতি। তিনি সংরক্ষণ ব্যবস্থার পুনর্মুল্যায়নের দাবি তুলতেই পাল্টা সরব হন লালু। চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন, ‘‘সংরক্ষণ ব্যবস্থা খতম করবে কার এত হিম্মত? কে কত মায়ের দুধ খেয়েছি দেখি!’’
প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করতে গিয়ে সাংবাদিকদের সামনে আজ মোহন ভাগবতের পুরো বক্তব্য পড়ে শোনান নীতীশ কুমারও। উদ্দেশ্য স্পষ্ট, সংরক্ষণের রাজনীতিকে নতুন করে বিহারের জমিতে উস্কে দেওয়া। বিজেপিকে নীতীশের কটাক্ষ, ‘‘আরএসএস হল বিজেপির সুপ্রিম কোর্ট। তারা যখন বলছে, তখন মোদী সরকার নিশ্চয় সংরক্ষণ ব্যবস্থা শেষ করতে চাইছে।’ লালু-নীতীশের পাশাপাশি সংরক্ষণ নিয়ে চিরাচরিত দ্বন্দ্ব কাটিয়ে বেরিয়ে এসেছে কংগ্রেসও। এ নিয়ে আজ কংগ্রেস হাইকম্যান্ডের ব্যাখ্যা, ‘‘আমাদের জমানাতেই সংরক্ষণ ব্যবস্থা শুরু হয়েছিল। সনিয়া গাঁধী মনে করেন সমাজের অনগ্রসর অংশকে সুবিচার দিতে এই ব্যবস্থা টিঁকে থাকা জরুরি।’’
বিহার ভোটে মণ্ডল রাজনীতি নিয়ে লালু-নীতীশের চাপের মধ্যেই ভাগবতের মন্তব্যে অনেকটাই ব্যাকফুটে চলে যায় বিজেপি। এই পরিস্থিতিতে দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে স্বস্তি এনে দিয়েছে রাজস্থান সরকারের সিদ্ধান্ত। চাকরি ও শিক্ষা ক্ষেত্রে সর্ব্বোচ্চ পঞ্চাশ শতাংশ সংরক্ষণ দেওয়ার নির্দেশ রয়েছে সুপ্রিম কোর্টের। কিন্তু গত কাল সেই সিদ্ধান্তকে কার্যত এড়িয়ে গুর্জরদের জন্য ৫ শতাংশ ও আর্থিক ভাবে অনগ্রসর শ্রেণির জন্য ১৪ শতাংশ সংরক্ষণ দেয় বসুন্ধরা সরকার। সেই উদাহরণ টেনে আজ বিজেপি নেতা প্রকাশ জাভড়েকরের মন্তব্য, ‘‘রাজস্থান সরকার প্রমাণ করে দিয়েছে বিজেপি শাসিত রাজ্য প্রয়োজনে অতিরিক্ত সংরক্ষণ দিতেও পিছপা নয়।’’
যদিও বিজেপির এই পদক্ষেপকে আসলে ক্ষত মেরামতের চেষ্টা হিসেবে দেখছে নীতীশ শিবির। বিহারের এক কংগ্রেস নেতা জানান, তারা রাজ্যের মানুষকে জানাতে চান বিজেপি কী ভাবে সংরক্ষণ ব্যবস্থা তুলে দিতে চাইছে। ক্ষমতায় এলে বিহারে সংরক্ষণ ব্যবস্থা খতম করবে মোদী-অমিত শাহের দল। প্রশ্ন হল, এতে উচ্চবর্ণের মানুষ মহাজোটের ওপর চটবে না? জবাবে নেতাটি বলেন, উচ্চবর্ণের সিংহভাগ ভোট এ বার বিজেপির দিকেই যেতে পারে। সে কারণেই ভোটকে অগ্রসর ও অনগ্রসরের দ্বৈরথে পরিণত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা। লালু-নীতীশ জোটের যে ২৪২ জন প্রার্থীর নাম আজ ঘোষণা করা হয়েছে তার মধ্যে অনগ্রসর শ্রেণির প্রার্থী রয়েছেন ৫৫ শতাংশ। তফসিলি জাতি ও উপজাতি থেকে প্রার্থী করা হয়েছে ১৫ শতাংশকে। সংখ্যালঘু প্রার্থী রয়েছেন ১৪ শতাংশ। এবং উচ্চবর্ণের প্রার্থী করা হয়েছে ১৬ শতাংশকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy