তালহা আরশাদ রেশি
ফিল্মের হামিদ মনে করত, সে আল্লার সঙ্গে কথা বলছে। আদতে বাবার খোঁজে মরিয়া বালক কথা বলত এক সেনাকর্মীর সঙ্গে। কিন্তু ‘হামিদ’-এর জাতীয় পুরস্কার পাওয়ার খবরই জানতে পারেনি শিশু অভিনেতা তালহা আরশাদ রেশি। জানবে কী করে, ফোনই তো বন্ধ।
এক রাতে ছেলের আবদার রাখতেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে হামিদের বাবা আর ফেরেনি। বাবার খোঁজে আল্লার সঙ্গে কল্পিত যোগাযোগের মাধ্যম ছিল বাবারই ভাঙাচোরা মোবাইল ফোন।
আর তালহার কাছে বাবার স্মার্টফোন থাকলেও গত এক মাস ধরে সেটি অকেজো। কাশ্মীরে মোবাইল যোগাযোগ চালু হলে তালহা প্রথমেই তাই ফোন করতে চায় স্কুলের বন্ধুদের। জানাতে চায়, সে অনেক বড় পুরস্কার পেয়েছে। জানাতে চায়, দেখা হলে আবার আগের মতো ক্রিকেট খেলবে।
১১ বছর বয়সি তালহা পরিবারের সঙ্গে জম্মুতে এসেছে দু’দিনের জন্য। সোমবার মোবাইল ফোনে ধরা গেল তাকে। শ্রীনগর দিল্লি পাবলিক স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র তালহা প্রথমেই বলে, ‘‘ওখানে অবস্থা খুব খারাপ। সব বন্ধ করে রেখে দিয়েছে। এক মাস স্কুলে যেতে পারছি না। পড়াশোনায় অনেক ফাঁক পড়ে গেল। সারা দিন বাড়িতে বসে আছি। স্কুলের বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হচ্ছে না। মন খারাপ লাগছে।’’
বাড়িতে থাকলে পড়াশোনা ছাড়া আর কী করে? তালহা জানায়, টিভি দেখা তার ‘হবি’। বাড়ির সামনে চুটিয়ে ক্রিকেটও খেলে সে। তালহা বলে, ‘‘যখন স্কুলে যেতাম, অনেকটা সময় কেটে যেত। রবিবার বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যেতাম। আমাদের জায়গাটা এত সুন্দর! একেবারে সিনেমার মতো। কাশ্মীরে আরও বেশি সিনেমার শুটিং হোক।’’
কথাবার্তায় তুখোড় তালহা জানায়, শুটিংয়ে প্রথম দিকে তার অসুবিধা হত। এর আগে কোনও দিন অভিনয় করেনি। পরে সে সব আয়ত্ত করে নিয়েছিল। বলে, ‘‘জম্মুতে সিনেমার স্ক্রিনিং হয়েছিল যখন, মা-বাবা-ভাই মিলে দেখতে গিয়েছিলাম। কাশ্মীরে একটা কফি শপেও ছবিটা দেখিয়েছে। কিন্তু ওখানে কোনও সিনেমা হল নেই। ‘হামিদ’ কী করে দেখানো হবে?’’ ছবির পরিচালক, সাহিত্যিক ইসমত চুগতাইয়ের নাতি এজাজ খান অবশ্য হাল ছাড়তে রাজি নন। মুম্বই থেকে ফোনে বলেন, ‘‘বর্তমান পরিস্থিতিতে তো কাশ্মীরে ফিল্মের স্ক্রিনিং সম্ভব নয়। যোগাযোগ চালু হলে, কার্ফু উঠলে ফের এ নিয়ে ভাবব।’’
তালহার বাবা আরশাদ রেশি আদতে জম্মুর বাসিন্দা। পেশাগত কারণে ছ’-সাত বছর ধরে শ্রীনগরে। এক বন্ধুর বিএনএলএন সংযোগের মোবাইল থেকে কানপুরে আত্মীয়দের নিজেদের অবস্থার কথা জানাতে গিয়ে পুরস্কারপ্রাপ্তির খবর জেনেছিলেন, পুরস্কার ঘোষণার পাঁচ দিন পর। আরশাদ বলেন, ‘‘আনন্দ করার পরিস্থিতি তো নেই। রাস্তাঘাট-যানবাহন-দোকানপাট সব বন্ধ। শ্রীনগরে ফিরে গেলে কারও সঙ্গে আর যোগাযোগই থাকবে না।’’
২০১৭ সালের জুলাইয়ে হামিদের শুটিং হয়। সে সময় আট বছরের তালহাকে তার স্কুল থেকেই খুঁজে পেয়েছিলেন পরিচালক। তালহার দুঃখ, সেই স্কুলে গত এক মাস পা রাখেনি সে। আরও একটা কষ্ট আছে তার— ছবির চরিত্র হামিদের মতো অনেকের বাবাই তো নিখোঁজ কাশ্মীরে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy