Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Crime

ফ্রাইং প্যানের ঘা মুখে মাথায়, অন্তত ১৪ বার! দিল্লিতে শাশুড়ি খুনে ধৃত বাঙালি পুত্রবধূ শর্মিষ্ঠা

২৮ তারিখ সুরজিতের এক বন্ধু হাসিদেবীর ‘পড়ে যাওয়া’-র খবর দিয়ে পুলিশ ডাকেন। সে দিন সিসিটিভি ক্যামেরাটি বাজেয়াপ্ত করলেও তার মেমরি কার্ড পায়নি পুলিশ।

representative image of dead body

বৃদ্ধাকে ফ্রাইং প্যান দিয়ে পিটিয়ে খুন করার অভিযোগে গ্রেফতার হলেন তাঁরই পুত্রবধূ। প্রতীকী ছবি।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১১ মে ২০২৩ ০৭:০৩
Share: Save:

এমসের ডাক্তার বলেছিলেন, ছিয়াশি বছরের হাসি সোম দিল্লিতে তাঁর ভাড়ার ফ্ল্যাটে নিছক পড়ে গিয়ে চোট পেয়ে মারা গিয়েছেন বলে ময়নাতদন্তে অন্তত মনে হচ্ছে না। তাঁর মুখ থেকে মাথার খুলি মিলিয়ে ১৪টি আঘাতের চিহ্ন ছিল। ওই আঘাত লেগেছিল মৃত্যুর আগে। এ সবই লেখা হল সোমবার প্রকাশিত ময়নাতদন্তের রিপোর্টে।

অতএব পুলিশি তদন্ত ছাড়া গতি নেই। তখন কে ভেবেছিল, সেই তদন্তে হাসিদেবীকে ফ্রাইং প্যান দিয়ে পিটিয়ে খুন করার অভিযোগে গ্রেফতার হবেন তাঁরই পুত্রবধূ শর্মিষ্ঠা! রাজধানীর পুলিশমহলে তোলপাড় পড়ে যাবে একটি বাঙালি পরিবারকে নিয়ে।

গত ২৮ এপ্রিল হাসিদেবীর মৃত্যুর পরে সবাই ভাবছিলেন, বাতের রোগী ওই বৃদ্ধা হয়তো পড়ে গিয়ে আঘাত পেয়েই মারা গেলেন। স্পষ্ট কিছু বোঝার উপায়ও ছিল না, কারণ বৃদ্ধার শোয়ার ঘরের সিসিটিভি ক্যামেরাটার মেমরি কার্ডই উধাও হয়ে গিয়েছিল। দিল্লি পুলিশ তেড়েফুঁড়ে তদন্ত শুরু করার পরে অবশ্য এক সময়ে সেই মেমরি কার্ড পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন হাসিদেবীর ছেলে সুরজিৎ। জানিয়েছেন, সেই মেমরি কার্ড তিনিই খুলে রেখেছিলেন। এবং কার্ডের ফুটেজে তিনি ইতিমধ্যেই দেখে নিয়েছেন যে, মায়ের মৃত্যুর দিনে সকাল সাড়ে ১০টায় তাঁর ফ্ল্যাটে ঢুকেছিলেন ফ্রাইং প্যান হাতে এক মহিলা। বেরিয়েও গিয়েছিলেন একটু পরে।

কে তিনি? সুরজিৎ জানান, তিনি তাঁরই স্ত্রী, শর্মিষ্ঠা! ঘটনার সময়ে শুধু শর্মিষ্ঠাই ছিলেন বাড়িতে।

দিল্লি পুলিশের ডিসিপি (সাউথ) চন্দন চৌধুরি বলেছেন, ওই সময়ের সিসিটিভি ফুটেজ চালালে শোনা যাচ্ছে বৃদ্ধার চিৎকার। সিসিটিভি ক্যামেরার আওতার বাইরে থাকা রান্নাঘরে সম্ভবত ওই সময়েই হাসিদেবীকে পিটিয়ে মারা হচ্ছিল। প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে সন্দেহ করা হচ্ছে, শর্মিষ্ঠাই হাতের ওই ফ্রাইং প্যান দিয়ে মেরে খুন করেছেন শাশুড়িকে! সুরজিতের জবানবন্দি, সিসিটিভি ফুটেজ, ময়না-তদন্তের রিপোর্ট— এ সবের ভিত্তিতেই শর্মিষ্ঠাকে খুনের মামলায় গ্রেফতার করেছে পুলিশ। প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে, অসুস্থ শাশুড়ির দেখভাল করা নিয়ে বছর আটচল্লিশের শর্মিষ্ঠা দীর্ঘদিন ধরেই হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। হয়তো সেই থেকেই খুন।

সুরজিৎ-শর্মিষ্ঠা ২০১৪ পর্যন্ত কলকাতাতেই থাকতেন। এখন থাকেন দিল্লির নেব সরাই এলাকার এক আবাসনে। হাসিদেবীকে ২০২২ সালে দিল্লি নিয়ে গিয়ে নিজের ফ্ল্যাটের উল্টোদিকের একটি ফ্ল্যাট ভাড়া করে রেখেছিলেন সুরজিৎ। শোওয়ার ঘরে সিসিটিভি ক্যামেরাও বসিয়েছিলেন, যাতে সিসিটিভি-র মোবাইল অ্যাপের সাহায্যে মায়ের দিকে নজর রাখতে পারেন তিনি। ২৮ তারিখ সুরজিতের এক বন্ধু হাসিদেবীর ‘পড়ে যাওয়া’-র খবর দিয়ে পুলিশ ডাকেন। সে দিন সিসিটিভি ক্যামেরাটি বাজেয়াপ্ত করলেও তার মেমরি কার্ড পায়নি পুলিশ। সুরজিৎও পুলিশকে বলেছিলেন, লোডশেডিংয়ের জন্য ওই সময়ে ক্যামেরা কাজ করছিল না। তখনও পর্যন্ত সে ভাবে কেউ কাউকে সন্দেহ করেননি।

গল্প বদলে দেয় এমসের ময়নাতদন্ত। এ বার সুরজিৎ ও তাঁর ১৬ বছরের মেয়েকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পারে, শাশুড়ি-পুত্রবধূর সম্পর্ক ভাল ছিল না। এর পরে সম্ভবত পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের মুখেই ভেঙে পড়ে সুরজিৎ এক সময়ে জানিয়ে দেন, সিসিটিভি-র মেমরি কার্ড তিনিই খুলে রেখেছেন। তার ফুটেজ চালিয়েও দেখেছিলেন মায়ের শেষকৃত্যের পরে। সন্দেহ করছিলেন নিজের স্ত্রীকে।

পুলিশের সন্দেহ, খুন হওয়ার সময়ে হাসিদেবী রান্নাঘরেই ছিলেন। ফ্রাইং প্যান হাতে শর্মিষ্ঠা তাঁর পিছনে গিয়ে দাঁড়ান। তার পর সেই ফ্রাইং প্যানের ঘা। মুখে-মাথায়। অন্তত ১৪ বার।

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Murder Delhi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy