একজন প্রযোজক। একজন প্রোডাকশন কন্ট্রোলার। একজন পরিচালক। কয়েক জন স্পট বয় এবং সবশেষে আসরে নামেন নায়ক। এক গুলিতেই নিশানা ভেদ করে চলে যান তিনি। তড়িঘড়ি বিপণন। শেষে মুনাফার ভাগাভাগি। এটা কোনও চলচ্চিত্র তৈরির সরল সূত্র নয়। এটা দেশের গন্ডার শিকারের ছক।
কথায় আছে, ‘মারি তো গন্ডার/লুটি তো ভাণ্ডার’। এই ভাণ্ডার লুটের পিছনে থাকে দীর্ঘ পরিকল্পনা। অনেক খুঁটিনাটি। পুলিশ ও বনরক্ষীদের যৌথ অভিযানে সম্প্রতি ধরা পড়েছে তিন চোরাশিকারি। আর তাদের জেরা করতে করতেই এই চক্রের বিশদ তথ্য সামনে এসেছে।
ওরাংয়ের রাজীব গাঁধী জাতীয় উদ্যানের ডিএফও রমেশচন্দ্র গগৈ জানান, রেঞ্জার চক্রপাণি রায় ও শোণিতপুরের এএসপি শুভলক্ষ্মী দত্তের নেতৃত্বে একটি দল অভিযান চালিয়ে নূরজামাল ও তার দুই সঙ্গী সহিদুল ইসলাম ও নিয়ামত আলিকে সম্প্রতি গ্রেফতার করেছে। কী ভাবে একটি গন্ডার শিকারের প্রস্তুতি শুরু হয়, তা জানা গিয়েছে তাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলতে বলতেই। প্রথমে স্থানীয় এক জন পয়সাওয়ালা মানুষ ‘গন্ডার-মারি’ অভিযানে টাকা ঢালেন। জোগাড় করা হয় শিকারে উৎসাহী মানুষজনকে। তাদের মধ্যে একজন নাগাল্যান্ডে গিয়ে খড়্গের খদ্দের আগেভাগে ঠিক করে আসে। নিয়ে আসে .৩০৩ রাইফেল ও গুলি। যদি গন্ডার মারার পরে রাইফেল ফেরত না মেলে বা খড়্গ অন্যত্র বিক্রি করে দেয় ‘পার্টি’, সে কারণে রাইফেলের বদলে কাউকে ‘বন্ধক’ রেখে আসতে হয় নাগা জঙ্গি তথা মহাজনের কাছে। এরপর জঙ্গলের খুঁটিনাটি যারা জানে তাদের নিয়ে শুরু হয় গন্ডারের গতিবিধির উপরে নজর রাখা। যাবতীয় খুঁটিনাটি তথ্য জোগাড় হলে নাগা বা মণিপুরি শার্প শুটারদের ডাকা হয়। সে আসবে, গন্ডার মেরে চলে যাবে। এরপর খড়্গ বিক্রি করে, তিন লক্ষ টাকা কেটে রাখে নাগা ‘মহাজন’।
জেরায় নূরজামাল জানিয়েছে, তাদের অভিযানের সূচনা জুন মাসে। শার্প শ্যুটারকে নিয়ে শিকারির দল জঙ্গলে ঢুকলেও মাথায় গন্ডগোল থাকা এক ‘ট্র্যাকার’-এর জন্য রক্ষীরা আঁচ পেয়ে যাওয়ায় শিকারিরা পালায়। ক্ষুব্ধ নাগা শিকারি ওই যুবককেও সঙ্গে নিয়ে নাগাল্যান্ডে যায়। তার মা থানায় অপহরণের অভিযোগ জানালে বিষয়টি পুলিশ জানতে পারে। সম্প্রতি ফের নাগা শিকারি এসেছে জানতে পেরে অভিযানে নামে পুলিশ ও বনরক্ষীরা। তাকে ধরতে না পারলেও গত ২৪ ঘণ্টায় অভিযান চালিয়ে ওই তিন জনকে ধরা হয়।
বনকর্তা ও পুলিশের কাছে ভেঙে পড়া নূর জানায়, আগাম টাকা দিয়ে রাইফেল এনেছিল সে। পাশাপাশি, নিজের তিন ছেলের মধ্যে এক জনকে নাগা মহাজনের কাছে বন্ধক রেখে এসেছে। প্রথম বার শিকার ভেস্তে যাওয়ার পরেই সে রাইফেল ফেরত দিয়ে ছেলেকে নিয়ে আসতে চেয়েছিল। কিন্তু বাকিরা বলে, রাইফেল যখন হাতে আছে ফের চেষ্টা করে দেখতেই হবে। এখন তার দু’কূলই গেল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy