দলিতদের এই বিপুল সমাবেশ কি চিন্তায় রাখছে শাসক দলকে? —ফাইল চিত্র।
ফের উত্তপ্ত গুজরাতের উনা। সোমবার বিশাল দলিত সমাবেশের পর ফের ছড়াতে শুরু করেছে বর্ণবিদ্বেষের আগুন। সংঘর্ষে জখম অন্তত ১৯ জন। তাঁদের মধ্যে তিন পুলিশ কর্মীও রয়েছেন। সমাবেশ শেষে গ্রামে ফেরার পথে দলিতদের উপর ফের হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ।
যে চার দলিতকে গাড়ির সঙ্গে বেঁধে বেধড়ক প্রহারের ছবি ভাইরাল হওয়ার পর দলিত বিক্ষোভে উত্তাল হয়েছে গুজরাত, সেই চার জনের অন্যতম বালুভাই সারভাইয়াও সোমবার ফের আক্রান্ত হয়েছেন। উনায় একটি স্কুলের খেলার মাঠে সোমবার দলিত সমাবেশের ডাক দেওয়া হয়েছিল। অন্তত হাজার দশেক মানুষ সেখানে সমবেত হন। মরা গরুর চামড়া ছাড়ানোর ‘অপরাধে’ চার দলিতকে যে ভাবে গাড়ির সঙ্গে বেঁধে মারা হয়েছিল, তার তীব্র নিন্দা হয় এ দিনের সমাবেশে। মৃত গরুর দেহ সরানো বা চামড়া ছাড়ানোর কাজ আর দলিতরা করবেন না বলেও সমাবেশ শপথ গ্রহণ করে।
সমাবেশে যাঁরা যোগ দিয়েছিলেন, বাড়ি ফেরার পথে তাঁরা বিবিন্ন এলাকায় হামলার মুখে পড়েন বলে অভিযোগ। বিভিন্ন এলাকায় সংঘর্ষ শুরু হয়। বালুভাই সারভাইয়া জানিয়েছেন, বাইকে চড়ে সামতের গ্রামের কাছে পৌঁছতেই তথাকথিত উচ্চবর্ণের লোকজন তাঁদের উপর হামলা চালায়। ঘটনার আর এক প্রত্যক্ষদর্শী তথা আক্রান্ত মারভিভাই সারভাইয়া সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে বলেন, ‘‘আগে থেকে ছক কষেই হামলা চালানো হয়েছিল। কারণ অন্য সব রাস্তা বন্ধ করে রেখে আমাদের ওই রাস্তা দিয়ে ফিরতে বাধ্য করা হয়েছিল।’’ হামলার সময় পুলিশ নিষ্ক্রিয় ছিল বলেও মারভিভাই সারভাইয়ার অভিযোগ। তিনি বলেন, ‘‘যখন আমাদের উপর হামলা হল, পুলিশ কিছুই করেনি। যখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেল, তখন কয়েকটা কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটিয়ে পুলিশ সবাইকে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করল।’’ সংঘর্ষে তিন পুলিশ কর্মীও জখম হয়েছেন। তাঁরা উনারই একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ২৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গাড়ির সঙ্গে বেঁধে চার দলিতকে মারার অভিযোগে যে ৩০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল, তাঁদের অর্ধেকেরই বাড়ি ওই সামতের গ্রামে। প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতেই ফের বালুভাইদের উপর হামলা হয়েছে বলে দাবি দলিতদের। বালুভাই সারভাইয়াকে নিজের গ্রামে ফিরতে হয়েছে পুলিশ পাহারায়। আট পুলিশ কর্মী তাঁকে তাঁর গ্রামের বাড়িতে পৌঁছে দেন।
আরও পড়ুন: আইনমন্ত্রীর সামনেই প্রধানমন্ত্রীকে আক্রমণ প্রধান বিচারপতির
দলিত নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর থেকেই গুজরাতে ব্যাপক দলিত বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। আমদাবাদে রাস্তা-ঘাট অবরোধ করে প্রবল বিক্ষোভ দেখানো হয়। বাস, গা়ড়ি, দোকানপাটে ভাঙচুর চলে। ক্ষমতাসীন বিজেপি’র বিরুদ্ধেই মূলত বিক্ষোভ শুরু করেছেন দলিতরা। শাসক দল দলিতদের রক্ষা করতে ব্যর্থ, আওয়াজ উঠেছে দলিত আন্দোলন থেকে। বিজেপি চাপের মুখে মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে আনন্দীবেন পটেলকে সরিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। গুজরাতের জনসংখ্যার অন্তত ৮ শতাংশ দলিত। নির্যাতনকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া এই দলিত ঐক্য তাই যথেষ্ট চাপে রাখছে শাসক দলকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy