Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪
Assembly Elections 2018

উত্তরপূর্বে নিশ্চিহ্ন কংগ্রেস, মিজোরামে ক্ষমতায় ফিরল এমএনএফ, খাতা খুলল বিজেপি

এই হারের ফলে উত্তরপূর্ব ভারত থেকে পুরোপুরি মুছে গেল কংগ্রেস। অন্য দিকে উত্তরপূর্ব ভারতের সবকটি রাজ্যেই কোথাও সরাসরি, কোথাও জোটসঙ্গী হিসেবে ক্ষমতায় চলে এল বিজেপি। যে কারণে মিজোরামকে উত্তরপূর্ব ভারতের শেষ রণাঙ্গন বলে মনে করা হচ্ছিল বিজেপির তরফে।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৮ ১২:৪৪
Share: Save:

মধ্য ও পশ্চিম ভারতে দুর্দান্ত ভাবে ফিরে এলেও দেশের উত্তরপূর্বের শেষ দুর্গ হাতছাড়া হল কংগ্রেসের। দিনের শুরু থেকেই ভোটগণনার প্রাথমিক গতিপ্রকৃতি থেকে স্পষ্ট হয়ে যায়, কংগ্রেসের হাত থেকে মিজোরামের দখল নিচ্ছে কেন্দ্রে বিজেপির জোটসঙ্গী মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্ট ( এমএনএফ)।

বুথ ফেরত সমীক্ষাতেও দেখা গিয়েছিল কংগ্রেসকে ভালই বেগ দেবে এমএনএফ। কিন্তু সেই সমীক্ষায় ছিল ত্রিশঙ্কু ফলাফলের পূর্বাভাস। সেই পূ্র্বাভাসকেও ছাপিয়ে একক ভাবে উত্তর পূর্ব ভারতের এই রাজ্যের দখল নিল মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্ট (এমএনএফ)। পূর্ব আইজল(১) আসনে জিতছেন এমএনএফ সভাপতি এবং রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জোরামথঙ্গা। ১৯৯৮ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন তিনি। অর্থাৎ দশ বছর পর ফের ক্ষমতায় ফিরছে তারা।

২০১৩ সালে পঞ্চমবারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন কংগ্রেসের লাল থানহাওলা। ২০০৮ থেকে টানা দশ বছর তিনিই ক্ষমতায়। এই নির্বাচনে জিতে ষষ্ঠবারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার রেকর্ড গড়ার হাতছানি ছিল তাঁর সামনে। কিন্তু তাঁর সেই স্বপ্নে জল ঢালল মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্ট। সরছিপ আর চাম্ফাই-দক্ষিণ, এই দু’টি কেন্দ্রেই নিশ্চিত হারের মুখে লাল থানহাওলা। ১৯৮৪ সাল থেকে সরছিপ কেন্দ্রে লড়ছেন তিনি। এই আসন থেকে মোট সাতবার জিতে মিজো বিধানসভায় গিয়েছেন তিনি। শুধু মাত্র ১৯৯৮ সালে প্রবল কংগ্রেস বিরোধী হাওয়ায় এক বারের জন্য হারতে হয়েছিল তাঁকে। মিজোরাম বিধানসভায় এই নির্বাচনের ফলাফলে জারি থাকল দশ বছর ছাড়া ক্ষমতা বদলের মিজো ট্রেন্ড।

২৮ নভেম্বর মিজোরাম বিধানসভার নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৮০ শতাংশ। মদ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা এবং উন্নয়ন, এই দু’টি বিষয় হয়ে উঠেছিল এই নির্বাচনের প্রধান ইস্যু। লাল থানহাওলা নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস সরকার মদ পুরোপুরি ভাবে নিষিদ্ধ করার বিরুদ্ধে ছিল। সেই জন্য বিশেষ পারমিট ব্যবস্থার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত মদ্যপানে সম্মতি দিয়েছিল কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকার। অন্য দিকে মদ পুরোপুরি ভাবে নিষিদ্ধ করার দাবি তুলেছিল মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্ট। মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্টের সঙ্গে এক মত হয়ে একই দাবি রেখেছিল মিজোরামে অত্যন্ত প্রভাবশালী খ্রিস্টান চার্চ। মিজোরামের ৮৭ শতাংশ মানুষই খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের। মদ নিষিদ্ধ করতে খ্রিস্টান চার্চের এই অবস্থান বিধানসভা নির্বাচনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হয়ে উঠল বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা, যার জেরে ক্ষমতা হারাতে হল কংগ্রেসকে।

আরও পড়ুন: সচিনের সোনালি ইনিংস, রাজস্থানে মসনদ খোয়াচ্ছেন রানি বসুন্ধরা

কংগ্রেসকে ক্ষমতা থেকে সরতে হলেও এই নির্বাচনে মিজোরাম বিধানসভায় প্রথম বারের জন্য খাতা খুলল বিজেপি। তুইচং আসনে জিতেছেন বিজেপি প্রার্থী চাকমা সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি বি ডি চাকমা। ভোটে খাতা খুলতে এই বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর ওপরই ভরসা রেখেছিল বিজেপি। বিজেপির এই জয় তাৎপর্যপূর্ণ কারণ, খ্রিস্টান প্রভাবিত মিজোরামে অনেকেই এই চাকমা জনগোষ্ঠীকে মিজো সমাজের অংশ বলে মনে করেন না। আজও তাঁদের দেখা হয় বাংলাদেশ থেকে আসা অনুপ্রবেশকারী হিসেবেই। সেই চাকমা সমাজের ভোটকে কাজে লাগিয়েই মিজো বিধানসভায় খাতা খুলে ফেলল বিজেপি।

আরও পড়ুন: ছত্তীসগঢ়ে রমনের ‘উন্নয়ন’-এর রথ আটকে দিল কংগ্রেস

এই হারের ফলে উত্তরপূর্ব ভারত থেকে পুরোপুরি মুছে গেল কংগ্রেস। অন্য দিকে উত্তরপূর্ব ভারতের সবকটি রাজ্যেই কোথাও সরাসরি, কোথাও জোটসঙ্গী হিসেবে ক্ষমতায় চলে এল বিজেপি। যে কারণে মিজোরামকে উত্তরপূর্ব ভারতের শেষ রণাঙ্গন বলে মনে করা হচ্ছিল বিজেপির তরফে। কংগ্রেসের হারে সেই যুদ্ধে নিশ্চিত ভাবেই জয় পেল গেরুয়া ব্রিগেড।

(ভোটের খবর, জোটের খবর, নোটের খবর, লুটের খবর- দেশে যা ঘটছে তার সেরা বাছাই পেতে নজর রাখুন আমাদের দেশ বিভাগে।)

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE