Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
politics

বিজেপির বড় ধাক্কা, রাহুলের হাসি চওড়া করল গোবলয়ের তিন রাজ্য

পাঁচ রাজ্যের এই বিধানসভা নির্বাচন ছিল ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে সবচেয়ে বড় ভোটযুদ্ধ। ‘দিল্লি দখলের সেমিফাইনাল’ হিসেবেই এই লড়াইকে ব্যাখ্যা করছিল রাজনৈতিক শিবির। সামগ্রিক ফলের ইঙ্গিত কোন দিকে?

চার বছর ধরে ক্রমাগত সাফল্যের পরে বড়সড় ধাক্কার মুখে বিজেপি।

চার বছর ধরে ক্রমাগত সাফল্যের পরে বড়সড় ধাক্কার মুখে বিজেপি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৭:০৪
Share: Save:

চার বছর ধরে ক্রমাগত সাফল্যের পরে বড়সড় ধাক্কার মুখে বিজেপি। ২০১৪ সালে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসার পর থেকে দেশের কোনও প্রান্তে বিজেপি এত বড় ধাক্কা খায়নি। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে ধাক্কাটা এল হিন্দি বলয়ের সুবিশাল গেরুয়া দুর্গ থেকেই। মোদীর শিবিরে অতএব বিষণ্ণতার ছায়া। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উচ্ছ্বাস বাড়ল রাহুল বলয়ে।

পাঁচ রাজ্যের এই বিধানসভা নির্বাচন ছিল ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে সবচেয়ে বড় ভোটযুদ্ধ। ‘দিল্লি দখলের সেমিফাইনাল’ হিসেবেই এই লড়াইকে ব্যাখ্যা করছিল রাজনৈতিক শিবির। সেই সেমিফাইনালের সামগ্রিক ফল যে কংগ্রেসের দিকে অনেকখানি ঝুঁকে পড়ল, তা নিয়ে কোনও সংশয় নেই।

সবচেয়ে চমকে দেওয়া ফলাফল ছত্তীসগঢ়ে। বিজেপি সে রাজ্যে ১৫ বছর ক্ষমতায় ছিল ঠিকই, কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী রমন সিংহের বিরুদ্ধে ক্ষমতা বিরোধিতার হাওয়া প্রবল ছিল— এমন কথা প্রায় কোনও শিবিরই খুব জোর দিয়ে বলতে পারেনি।

ভোটের আগে হওয়া অধিকাংশ জনমত সমীক্ষা এবং ভোটের দিন হওয়া অধিকাংশ বুথফেরত সমীক্ষা ইঙ্গিত দিয়েছিল, চতুর্থ বারের জন্য রমন সিংহের নেতৃত্বে ছত্তীসগঢ়ে সরকার গড়তে চলেছে বিজেপি। তবে আসন কমতে পারে।

কিন্তু ছত্তীসগঢ়ে ভোটযন্ত্র খুলতেই অপ্রত্যাশিত ফলাফলের আঁচ মেলা শুরু হয়। বিজেপির পরাজয় শুধু নয়, শোচনীয় পরাজয়ের ইঙ্গিত মেলা শুরু হয়। সরকারের বিরুদ্ধে খুব বেশি ক্ষোভ ছিল না, কিন্তু ১৫ বছর ধরে বিজেপি ক্ষমতায়, তাই ক্ষমতা বিরোধিতার হাওয়ায় অল্পের জন্য গদি হাতছাড়া হয়ে গেল রমন সিংহের— এমন কিন্তু নয় ছত্তীসগঢ়ের ছবিটা একেবারেই।

আরও পড়ুন: টিআরএস ঝড়ে উড়ে গেল কংগ্রেস-টিডিপি জোট, দাগই কাটল না বিজেপি

৯০ আসনের বিধানসভায় ৬০-এর বেশি আসন পাওয়া প্রায় নিশ্চিত করে ফেলেছে কংগ্রেস। অর্থাৎ মধ্য ভারতের জনজাতি প্রধান রাজ্যে দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি সংখ্যাগরিষ্ঠতার পথে রাহুল গাঁধীর দল। রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অজিত যোগীর দল জেসিসি এবং মায়াবতীর বিএসপির সম্মিলিত আসনসংখ্যা পৌঁছতে চলেছে ১০-এর কাছাকাছি।

ভোটের আগে হোক বা পরে, প্রায় সব সমীক্ষায় ইঙ্গিত ছিল, রাজস্থান বিজেপির হাতছাড়া হচ্ছেই। মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজের বিরুদ্ধে যে বিস্তর ক্ষোভ রয়েছে মরুরাজ্যের প্রায় প্রতিটি প্রান্তে, তা বিজেপি নেতারাও জনান্তিকে স্বীকার করছিলেন। কিন্তু ছত্তীসগঢ়, মধ্যপ্রদেশ এবং মিজোরামের ভোট মিটিয়েই বিজেপির গোটা নেতৃত্ব জোরদার ঝাঁপ দিয়েছিলেন রাজস্থানের রণাঙ্গনে। তীব্র মেরুকরণের চেষ্টা হচ্ছে বলে কংগ্রেসের তরফ থেকে অভিযোগ উঠেছিল। আর ভোটগ্রহণের এক সপ্তাহ আগে থেকে বিজেপি বলতে শুরু করেছিল, মরুরাজ্যের হাওয়া ঘুরছে।

ফলাফল বোঝাল, হাওয়া কিছুটা হলেও ঘুরিয়েছে বিজেপি। বসুন্ধরা রাজের সরকারের বিরুদ্ধে যে বিপুল ক্ষোভের ইঙ্গিত ছিল, ফলাফলে তার সম্পূর্ণ প্রতিফলন নেই। নিঃসন্দেহে নিজেদের আসনসংখ্যা অনেকটা বাড়িয়ে নিয়েছে কংগ্রেস। নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতাতেও পৌঁছে গিয়েছে। কিন্তু রাজস্থানে বিজেপি যতগুলো আসন পেয়েছে, ততটাও অনেকের কাছেই প্রত্যাশিত ছিল না।

মঙ্গলবার সকাল থেকেই সবচেয়ে কঠিন লড়াইয়ের আভাস অবশ্য দিয়েছে মধ্যপ্রদেশের রণাঙ্গন। মধ্যপ্রদেশে লড়াইটা যে এ বার কাঁটায় কাঁটায়, তা সব পক্ষই মানছিলেন। দেড় দশক ধরে ক্ষমতা ধরে রাখা বিজেপির নেতারাও আড়ালে-আবডালে বলছিলেন, ‘‘টক্কর ইস বার কাঁটে কি, লেকিন হম নিকাল লেঙ্গে।’’ বেলা সাড়ে ১১টার পর থেকে মধ্যপ্রদেশে ভোটগণনার প্রবণতা যে দিকে এগিয়েছে, তাতে আক্ষরিক অর্থেই কাঁটায় কাঁটায় লড়াই দেখা গিয়েছে। একনাগাড়ে ১০৬ থেকে ১১৬-র মধ্যে ঘোরাফেরা করেছে বিজেপি এবং কংগ্রেসের আসনসংখ্যা। কখনও বিজেপি এগিয়ে গিয়েছে, ম্যাজিক ফিগার ছুঁয়ে ফেলার ইঙ্গিত দিয়েছে। আবার কয়েক মিনিটের মধ্যে ব্যবধান কমাতে কমাতে বিজেপি-কে পিছনে ফেলে দিয়েছে কংগ্রেস। ভোট গণনার পশেষ লগ্ন পর্যন্ত সেই প্রবণতাই বহাল থেকেছে। তবে দুই দলই ১১৬-র নীচে থেমে যেতে পারে— এমন সম্ভাবনাও তৈরি হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে ছোট দলগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে সরকার গঠনের খেলায়।

আরও পড়ুন: সচিনের সোনালি ইনিংস, রাজস্থানে মসনদ খোয়াচ্ছেন রানি বসুন্ধরা

কংগ্রেসের ভাল ফলে রাস্তায় নেমে আনন্দ করছেন সমর্থকরা। মঙ্গলবার, ত্রিপুরায়। ছবি: পিটিআই।

মায়াবতীর বিএসপি এ বার মধ্যপ্রদেশে ৫টি থেকে ৭টি আসন পেতে পারে। গণনার গতিপ্রকৃতি তেমনই ইঙ্গিত দিচ্ছে। উচ্চবর্ণ, অনগ্রসর শ্রেণি ও সংখ্যালঘুদের দাবি-দাওয়া আদায়ের কথা বলে তৈরি হওয়া দল সপাক্স পার্টিও এগিয়ে রয়েছে অন্তত ৩টি আসনে। এই দুই দলের গুরুত্ব তাই হু হু করে বাড়ছে। বিজেপি এবং কংগ্রেস ঠিক কত আসন পায়, ম্যাজিক ফিগারের আগেই তারা থেমে যায় কি না, সে রকম হলে ম্যাজিক ফিগারে পৌঁছতে কোন দলকে ক’টা আসন জোগাড় করতে হবে— সেই সব হিসেব-নিকেশের উপরেই নির্ভর করছে বিএসপি এবং সপাক্স পার্টির গুরুত্ব বাড়া-কমা।

এই নির্বাচনে অংশ নেওয়া একমাত্র দক্ষিণী রাজ্য তেলঙ্গানায় ত্রিশঙ্কু বিধানসভার ইঙ্গিত দিয়েছিল বেশ কিছু সমীক্ষা। কিন্তু সব আভাস উড়িয়ে দিয়ে শাসক দল তেলঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতি (টিআরএস) বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় ধরে রাখছে। গত বার অবিভক্ত অন্ধ্রপ্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনে প্রস্তাবিত তেলঙ্গানা অঞ্চলের ১১৯টি আসনের মধ্যে ৬৩টি জিতেছিল টিআরএস। পরে অন্যান্য দল ভেঙে বেশ কিছু বিধায়ক টিআরএস-এ যোগ দেন, ফলে তেলঙ্গানার শাসক দলের আসন সংখ্যা বেড়ে ৯০-তে পৌঁছয়। এ বার টিআরএস-এর টিকিটেই জয়ী হতে চলেছেন প্রায় সমসংখ্যক বিধায়ক। চন্দ্রবাবুর তেলুগু দেশম পার্টিকে সঙ্গে নিয়েও কংগ্রেসের অবস্থা যথেষ্ট বেহাল কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের দুর্গে।

আরও পড়ুন: কংগ্রেস পার্টি অফিসে বাজছে ঢোল-পুড়ছে বাজি, বিজেপির অফিস শুনশান!

হিন্দি বলয়ের কংগ্রেস শিবিরে যে উৎসবের মেজাজ, তা কিন্তু ধাক্কা খেয়ে গিয়েছে উত্তর-পূর্ব ভারতেও। উত্তর-পূর্বে কংগ্রেসের শেষ দুর্গ মিজোরাম হাতছাড়া হয়ে গিয়েছে। গত দশ বছরের মুখ্যমন্ত্রী লাল থানহাওলা দুটি আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিলেন। দু’টিতেই তিনি পরাজয়ের মুখে। বিজেপি নেতৃত্বাধীন ‘নেডা’ জোটের শরিক দল মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্ট (এনএনএফ) নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতা দখল করার পথে।

ইতিহাসের পাতায় আজকের তারিখ, দেখতে ক্লিক করুন — ফিরে দেখা এই দিন

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE