প্রতীক্ষা: প্রথম দফার নির্বাচনে ভোটের লাইনে অপেক্ষা। ছত্তীসগঢ়ের সুকমায়। ছবি: পিটিআই।
‘‘একটা কোল্ডড্রিংক দে দেখি! সঙ্গে চাখনা,’’ দন্তেওয়াড়ার গীদমের মোড়ের দোকানে এসে হাঁক পাড়ে বিজলু গাওয়াই। মুখের হাসিতেই মালুম, মনে ভারী ফূর্তি। সবে ভোট দিয়ে এসেছেন।
দোকানদার প্রশ্ন করেন, ‘‘ভোট দিয়ে ক্যাশ পেলি মনে হচ্ছে! কাকে ভোট দিলি?’’ টাকা নিয়ে রা না-কেড়ে বিজলুর জবাব, ‘‘চাউল-ওয়ালে বাবা।’’ ছত্তীসগঢ়ের গ্রামে গ্রামে মুখ্যমন্ত্রী রমন সিংহকে লোকে ওই নামেই ডাকে। কারণ, তিনি এক টাকা কেজি দরে বিজলুদের জন্য ৩৫ কেজি চাল বিলি করছেন। সেখানেই শেষ নয়। বিজলুর দাদার মেয়ে সাইকেল পেয়েছে। বুড়ো বাপ পেনশন পান। গ্রামের অনেককে অটল-বাড়িও বানিয়ে দিয়েছে সরকার। তবে সেরা উপহার বিজলুর পকেটে। আঙুলে ভোটের কালি মাখার ছ’মাস আগেই মিলেছে পাঁচ হাজার টাকা দামের স্মার্ট ফোন। সুইচ টিপলেই প্রথমে স্ক্রিনে রমন সিংহের হাসি মুখের ছবি।
পাঁচ রাজ্যের ভোটে ছত্তীসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রীই বিজেপির সেরা বাজি। ১৫ বছর গদিতে থাকার পরেও ‘রমন পর বিশ্বাস’ স্লোগান তুলে বিজেপি ভোটে নেমেছে। আর ক্ষমতায় ফিরতে রমনের সেরা বাজি তাঁর নানা সরকারি প্রকল্প। সাইকেল, স্মার্ট ফোন তাঁর নিজের ভাবনা হলে, নরেন্দ্র মোদীর স্বচ্ছ ভারতে গরিবদের জন্য শৌচালয়, উজ্জ্বলা যোজনায় নিখরচায় রান্নার গ্যাসও অকাতরে বিলিয়েছেন তিনি। কৃতিত্বও তিনিই পাচ্ছেন। মোদী নন।
দন্তেওয়াড়ার নবীন পূর্ব-মাধ্যমিক স্কুলে ভোট দিতে এসেছিলেন নিশা নাইকো। ভোট দিয়ে তাঁর হাসি মুখে জবাব, “চাউল-ওয়ালে বাবা চাল দিতেন। এখন টয়লেটও বানিয়ে দিচ্ছেন।” রমনের এই সাফল্য মানতে বাধ্য হচ্ছেন কংগ্রেসের নেতারাও।
কিন্তু গোলাপেও কাঁটা থাকে। তেমনই রমন সিংহের কাঁটা হলেন তাঁর নেতা-মন্ত্রীরা। তাঁদের নিয়ে নালিশ অনেক। মাওবাদীদের ভয়ে কম্যান্ডো নিয়ে ঘুরে বেড়ান। কাজের সময়ে দেখা মেলে না। ঘুষ না-দিলে সরকারি কাজ হয় না। রমনের নিজের ভাবমূর্তি স্বচ্ছ হলেও মন্ত্রী-বিধায়কদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির ফিরিস্তি লম্বা।
আরও পড়ুন: ভোটের সঙ্গেই দিনভর চলল গেরিলা-যুদ্ধ
ছত্তীসগঢ়ে প্রথম দফায় আজ মাওবাদী অধ্যুষিত ১৮টি আসনে ভোট হল। যার ১২টি আসন এখন কংগ্রেসের দখলে। ৯০ আসনের বিধানসভায় বিজেপির দখলে ৪৯টি আসন। কংগ্রেসের ৩৯টি। বিজেপিকে হটাতে হলে কংগ্রেসকে এই ১২টি আসন দখলে রাখতেই হবে। আর বিজেপিকে ক্ষমতায় ফিরতে হলে এই দন্তেওয়াড়া, বস্তার, সুকমা, বিজাপুরে আরও বেশি আসন দখল করতে হবে।
এ দিন সকালে ভোটদানের হার ছিল ঢিমেতালা। পরে অবশ্য গুটিগুটি পায়ে বুথমুখো। নির্বাচন কমিশনের হিসেব, বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত ভোট পড়েছে ৫৮.৫৫ শতাংশ। তবে তখনও অনেকেই লাইনে। ফলে শেষ পর্যন্ত সংখ্যাটা ৭০ শতাংশ ছাড়াবে বলেই ধারণা।
ভোট ঘিরে চাপান-উতোরও কম নেই। বস্তার এলাকায় বিজেপি ইভিএম-এ রিগিং করেছে বলে অভিযোগ তুলেছেন কংগ্রেসের পরিষদীয় দলনেতা টিএস সিংহদেও। তাঁর দাবি, “হাত থেকে খেলা বেরিয়ে যাচ্ছে দেখে বিজেপি মরিয়া হয়ে ইভিএম-এ রিগিং করছে বলে গোটা বস্তার থেকে রিপোর্ট এসেছে।” নির্বাচন কমিশন, বিজেপি— উভয়েই এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
আরও পড়ুন: পিঙ্ক বুথ নির্বিঘ্নে ভোট করিয়ে খুশি বাঙালি শিক্ষিকা
তবে সরকারি প্রকল্পের বাইরেও উপহারের ব্যবস্থা যে করতে হয়েছে শাসক দলকে, সেটা লেও, জগদলপুর, দন্তেওয়াড়ার গ্রামে গ্রামে ঘুরলেই স্পষ্ট। জগদলপুরের বিজেপি বিধায়ক সন্তোষ বাফনা যেমন। গত অগস্টে রাখি-বন্ধনে গোটা বিধানসভা কেন্দ্রের গ্রামে গ্রামে ঘুরে মহিলাদের দিয়ে নিজের হাতে রাখি বাঁধিয়েছেন। ভাইয়ের উপহার হিসেবে দিদি-বোনেরা দামি শাড়ি পেয়েছে।
কংগ্রেসের অভিযোগ, ভোটের আগে বিজেপি মাথাপিছু ৫০০ টাকা করে দিয়েছে। বিজেপি পাল্টা বলছে, ওরা ২৫০ টাকা করে দিয়ে পিছিয়ে পড়েছে। তাই নালিশ।
আর ভোটের পরে? বিজলুদের গ্রামে রাতে ভাতের সঙ্গে শুয়োরের মাংস রান্নার ব্যবস্থা হচ্ছে। বিজলু দাঁত বার করে হাসেন, “আজ সব নেশা করে বেদম নাচবে। ভোটের নাচ!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy