ফ্যাব ইন্ডিয়ার ট্রায়াল রুম বিতর্কে ধৃত ওই সংস্থার চার কর্মীকে জামিন দিল গোয়ার এক আদালত। শনিবার বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট দ্বজা পাটকর জানান, অভিযুক্তদের নিজেদের হেফাজতে রেখে জেরা করার জন্য কোনও কারণ দেখাতে পারেনি গোয়া পুলিশ। তাই ওই চার জনকে জামিন দেওয়া হচ্ছে। তবে এর পরেও অস্বস্তি কাটছে না। বরং তৈরি হয়েছে নয়া বিতর্ক। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানির গত কালের অভিযোগের পরই জানা যায়, ক’দিন আগে ফ্যাব ইন্ডিয়ার কোলহাপুরের এক দোকানের ট্রায়াল রুমে এক মহিলার পোশাক বদলের ছবি মোবাইল ক্যামেরায় তুলছিলেন সংস্থার এক কর্মী। তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।
গোয়ায় দিন দু’য়েকের ছুটি কাটাতে এসে কান্দোলিম গ্রামে ফ্যাব ইন্ডিয়ার দোকানে কেনাকাটা করতে গিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি। ট্রায়াল রুমে পোশাক বদলাতে গিয়ে তাঁর নজরে আসে, এক গোপন ক্যামেরায় ছবি উঠছে তাঁর। তড়িঘড়ি বেরিয়ে এসে স্বামী জুবিন ইরানিকে ঘটনাটি জানান। ফোন করেন কালাঙ্গুটের বিজেপি বিধায়ক মাইকেল লোবোকেও। তার পরই সংস্থা-কর্তৃপক্ষের কাছে ওই ক্যামেরার ফুটেজ দেখার দাবি জানাতে থাকেন তাঁরা। সেই ফুটেজে দেখা যায়, স্মৃতির কোমর থেকে উপরের অংশের ছবি উঠেছে। কালাঙ্গুট থানায় এফআইআর করেন লোবো। রাতেই গ্রেফতার করা হয় চার কর্মীকে। এ দিন জামিন পান তাঁরা। চৈত্রালি সাওয়ান্থাস নামে যে স্টোর ম্যানেজার ওই দোকানের দায়িত্বে ছিলেন, তিনি অবশ্য আগাম জামিন নেন।
এ দিন আদালতে তদন্তকারী অফিসার দাবি করেন, ধৃত চার ব্যক্তি যে ওই ক্যামেরার ফুটেজ দেখেছিলেন তার প্রাথমিক প্রমাণ রয়েছে পুলিশের কাছে। ওই ফুটেজ বা ছবি ই-মেল, হোয়াটস্অ্যাপ, ফেসবুকের মাধ্যমে অন্য কারও কাছে গিয়েছে কি না, তা জানতে ধৃতদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন বলে জানান তিনি। কিন্তু সে আর্জি খারিজ করে দেন বিচারক।
এ দিন ফ্যাব ইন্ডিয়া এই হেনস্থার জন্য স্মৃতির কাছে ক্ষমা চেয়ে জানিয়েছে, তাদের কোনও দোকানে গোপন ক্যামেরা লাগানো নেই। কান্দোলিমের ওই দোকানেও কোনও গোপন ক্যামেরা ছিল না। ট্রায়াল রুমের বাইরে যেটি লাগানো ছিল, তার উদ্দেশ্য বিতর্কিত ছবি তোলা নয়। বরং নজরদারির স্বার্থেই প্রকাশ্যে ওই ক্যামেরা লাগানো হয়েছিল। কিন্তু কেন ট্রায়াল রুমের দিকে বিশেষ ভাবে তার ‘নজর’ ঘোরানো হয়েছিল, তা জানতে একটি তদন্তকারী দল তৈরি করেছেন ফ্যাব ইন্ডিয়া কর্তৃপক্ষ। তাঁদের আরও যুক্তি, ফ্যাব ইন্ডিয়ার বেশিরভাগ কর্মীই মহিলা। ফলে মহিলাদের সম্মান নিয়ে তাঁরা যথেষ্ট সচেতন। গোটা ঘটনা নিয়ে পুলিশের সঙ্গে সব রকম সহযোগিতা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংস্থা-কর্তৃপক্ষ।
মাইকেল লোবো অবশ্য এখনই নিশ্চিন্ত হতে রাজি নন। শনিবার তিনি বলেন, ‘‘হতে পারে পুরো বিষয়টা ওই দোকানের কর্মীদেরই কারসাজি। আবার এটি কোনও বড়সড় ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিতও হতে পারে। যাতে ম্যানেজাররাও জড়িয়ে থাকতে পারেন।’’ কোনও সম্ভাবনাই যে উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়, তা জানে পুলিশও। ক্যামেরা ও সংশ্লিষ্ট কম্পিউটারটির হার্ড ডিস্ক বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। সেখান থেকে ভিডিও ও ছবি অন্য কোথাও গিয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। ফ্যাব ইন্ডিয়ার ম্যানেজিং ডিরেক্টর উইলিয়াম বিসসেল-সহ একাধিক উচ্চপদস্থ কর্তাকে জেরা করার কথাও রয়েছে।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর অভিযোগ ও তার জের সামলাতে যখন রীতিমতো ব্যস্ত সংস্থার কর্তারা, তখনই শোনা গেল নয়া অভিযোগ। গত ৩১ মার্চ ফ্যাব ইন্ডিয়ার কোলহাপুরের এক দোকানের ট্রায়াল রুমে এক মহিলার গোপন ভিডিও তোলার অভিযোগ ওঠে সংস্থার কর্মী প্রকাশ আনন্দ ইসপুরলের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, যখন ওই মহিলা পোশাক বদলাচ্ছিলেন, তখন ট্রায়াল রুমের দরজার নীচে যে ফাঁক থাকে, তাতে মোবাইল ক্যামেরা ধরে ভিডিও রেকর্ডিং করছিলেন প্রকাশ। মহিলা তা দেখে চিৎকার করে উঠলে দ্রুত বাইরে বেরিয়ে আসেন প্রকাশ। মোবাইল থেকে ভিডিওটা মুছেও দেন। কিন্তু পরে সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ থেকেই পুলিশ জানতে পারে, প্রকাশ মোবাইলে ওই মহিলার ছবি তুলছিলেন। ১ এপ্রিল তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। আপাতত বিচারবিভাগীয় হেফাজতে রয়েছেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy