ব্যর্থতার দায় নিয়েই নিজেই কি সরে গেলেন? নাকি সরে যেতে বাধ্য করল নেতৃত্ব? —ফাইল চিত্র।
নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহের চাপে নিজেই গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দেওয়ার কথা ঘোষণা করলেন আনন্দীবেন পটেল। তাঁর বদলে নতুন মুখ্যমন্ত্রীর নাম শীঘ্রই ঘোষণা করতে চলেছেন বিজেপি নেতৃত্ব।
সামনের বছরেই বিধানসভা ভোট মোদীর নিজের রাজ্য গুজরাতে। কিন্তু কয়েক মাস আগে দলের সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী হয়ে যাঁর হাতে রাজ্যপাট ছেড়ে দিয়েছিলেন মোদী, তাঁর জমানায় বিজেপির গড় দুর্বল থেকে দুর্বলতর হয়েছে। পটেল-আন্দোলন থেকে দলিত-বিতর্কে বদনাম হচ্ছে রাজ্যের। অগত্যা আনন্দীবেনকে সরানো ছাড়া আর কোনও গতি ছিল না। সে বার্তা আগেই তাঁকে দেওয়া হয়েছিল। তাঁকে সরিয়ে দেওয়ার থেকে নিজেই সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা করে বিদায়কে আরও ‘সম্মানজনক’ করলেন আনন্দী। এখন রাজ্যে বিজেপি সভাপতি বিজয় রূপাণি কিংবা নিতিন পটেলদের মধ্যে কাউকে নতুন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে কাউকে বেছে নিতে হবে মোদী-শাহকে। অমিত শাহ বলেন, সংসদীয় বোর্ডের বৈঠকে শীঘ্রই নতুন নামের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
আনন্দীবেন অবশ্য সরে দাঁড়ানোর পিছনে অজুহাত দেখিয়েছেন তাঁর বয়সকে। বিজেপিকে ৭৫ বছরের বেশি বয়সের কাউকে পদে রাখা হবে না, এমন এক অঘোষিত নিয়মকে সামনে রেখেই তিনি বিদায় জানালেন। ফেসবুক ও পরে এক ভিডিও বার্তায় আনন্দীবেন বলেন, এ বছরের নভেম্বরে তিনি ৭৫ বছরে পা দিচ্ছেন। সামনের বছরের শেষে ভোট, আর জানুয়ারিতে রাজ্যে ‘ভাইব্র্যান্ট গুজরাত’-এর মহা শিল্প-সম্মেলন। তার আগে নতুন মুখ্যমন্ত্রী যাতে হাতে আরও সময় পান, তার জন্য জন্মদিনের দু’মাস আগেই তিনি অবসরের ঘোষণা করলেন। বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ দিল্লিতে বলেন, ‘‘এর আগেও দু’বার উনি পদ ছাড়ার কথা বলেছিলেন। আজ সকালেও তাঁর চিঠি পেয়েছি। সংসদীয় বোর্ডে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে। তখনই নতুন মুখ্যমন্ত্রীর নামের সিদ্ধান্ত হবে।’’
বিজেপি সূত্রের মতে, নতুন মুখ্যমন্ত্রীর দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি বিজয় রূপাণি। যাঁর সঙ্গে সব পক্ষের সুসম্পর্ক রয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রী নিতিন পটেলের নাম থাকলেও তাঁকে দিয়ে পটেল সমস্যা মেটানো সম্ভব কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। আর এক প্রভাবশালী মন্ত্রী সৌরভ পটেল এবং বিধানসভার স্পিকার গণপতসিন ভাসাভাও এই মুখ্যমন্ত্রিত্বের দৌড়ে রয়েছেন। কিন্তু বিজেপি নেতারা বলছেন, মুখ্যমন্ত্রী এমন কাউকে করা হবে, যাঁর উপরে নরেন্দ্র মোদীর পূর্ণ আস্থা রয়েছে। আর নিজের রাজ্যের বেহাল দশা কাটাতে পারবেন তিনি। কারণ, যে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী হয়ে নরেন্দ্র মোদী নিজের রাজ্যের দৃষ্টান্ত গোটা দেশ ও দুনিয়ার তুলে ধরে আজ প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে বসেছেন, সে রাজ্য এখন নানান বিতর্কে শিরোনামে এসেছে। এই ছবা বদলানোই নতুন মুখ্যমন্ত্রীর কাছে সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ হবে। কারণ মোদী এমনটাই চাইবেন।
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল ইতিমধ্যেই দাবি করেছেন, তাঁদের চাপের জন্যই সরতে হল আনন্দীবেনকে। কিন্তু বিজেপি নেতৃত্ব সে সবে কান না দিয়ে এখন মোদীর নিজের রাজ্যের পুরনো গৌরব ফেরাতে চান। দু’মাস আগে দলের নেতা ওম মাথুরকে পাঠিয়ে একটি সমীক্ষা করানো হয়। সেই সমীক্ষায় দেখা যায়, প্রশাসক হিসেবে সম্পূর্ণ ব্যর্থ আনন্দীবেন। মোদী-শাহ জুটির জমানায় বিজেপির যে জনসমর্থন ছিল, তাতেও ভাটা পড়েছে বিস্তর। আনন্দীবেনকে নিয়ে অসন্তোষ বেড়েছে দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যেও। গত মে মাসেই দিল্লিতে ডেকে প্রধানমন্ত্রী ও অমিত শাহ আনন্দীবেনকে বার্তা দেন, তাঁকে সরতে হবে। স্থির হয়, নভেম্বরে তিনি ৭৫ হলে সরানো হবে। কিন্তু দলিত-বিতর্ক ফের মাথাচাড়া দেওয়ায় তার আগেই সরতে হচ্ছে আনন্দীবেন পটেলকে।
হায়দরাবাদ কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রোহিত ভেমুলার আত্মহত্যার পর বিতর্কের মুখ হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন প্রাক্তন মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি। তাঁর দলিত বিরোধী ভাবমূর্তিও তৈরি হয়ে গিয়েছিল। স্মৃতিকে সরতে হয়েছে। উত্তরপ্রদেশ, গুজরাত এবং পঞ্জাবে নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে বিজেপিকে এখন দলিতদের আরও কাছে টানার চেষ্টা করতে হচ্ছে। তাই গুজরাতে যে মুখ্যমন্ত্রীর শাসনে দলিতদের উপর আক্রমণ হল, সেই মুখ্যমন্ত্রীকে আর পদে রাখা যাচ্ছে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy