মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে মনোনীত হওয়ার পর কর্মী-সমর্থকদের ভিড়ে জয়রাম। শিমলায় রবিবার। ছবি: পিটিআই।
ঠাকুর জিতলে নতুন সরকারে তাঁকে গুরুত্বপূর্ণ পদ সামলাতে হবে। হিমাচল প্রদেশের সেরাজে নির্বাচনী জনসভায় এমনটাই বলেছিলেন বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। তবে সেটা যে মুখ্যমন্ত্রী-পদ, সেই সময় কেউ সম্ভবত তেমনটা ভাবেননি।
কিন্তু বিজেপি শেষ মুহূর্তে যাকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী করেছিল, সেই প্রেমকুমার ধুমল হেরে যাওয়ার পর থেকেই ঠাকুরের নাম ভাসতে শুরু করে। আর নানা মতানৈক্যের পর বড়দিনের ঠিক আগের দিন দলীয় বিধায়করা মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে তাঁর নামেই সম্মতি দেন।
আগামী ২৭ ডিসেম্বর নয়া মন্ত্রিসভা শপথ নেবে হিমাচল প্রদেশে। তার আগে টেলিফোনে রাজ্যের ভাবী মুখ্যমন্ত্রী জয়রাম ঠাকুরের একান্ত সাক্ষাৎকার নিল আনন্দবাজার।
• মান্ডি থেকে এই প্রথম কেউ মুখ্যমন্ত্রী হলেন। কেমন লাগছে?
জয়রাম: ভীষণ, ভীষণ ভাল। কেন জানেন? সাধারণ মানুষের দীর্ঘ দিনের আশা ছিল। আমাদের দল তা পূরণ করেছে।
হাতে হাত: হিমাচল প্রদেশে জয়রামেই ভরসা রেখেছেন নরেন্দ্র মোদী।—ফাইল চিত্র।
• কিন্তু, প্রেমকুমার ধুমল জিতলে তো দল কিছুই করতে পারত না! সে ক্ষেত্রে...
জয়রাম: (থামিয়ে দিয়ে) এ বিষয়ে শুধু একটা কথাই বলার, (হাল্কা হেসে) প্রেমকুমারজি-ই কিন্তু আমার নাম মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে প্রস্তাব করেছেন। দল তাতে সম্মতি দিয়েছে। দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পাশাপাশি আমি তাঁকেও আন্তরিক ভাবে ধন্যবাদ জানিয়েছি।
• প্রেমকুমার এবং আপনি দু’জনেই রাজপুত। বিজেপি কি এ বার রাজ্যে ‘রাজপুত’ মুখ্যমন্ত্রীই চেয়েছিল?
জয়রাম: আমাদের দল এমন কোনও নীতি নিয়ে চলে না। মানুষ ভোট দিয়েছেন। আমাদের দলকে তারা পূর্ণ সমর্থন করেছেন। তাঁদের সমর্থন পেয়েই একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসাবে বিজেপি সরকার গড়বে। আসলে হিমাচল প্রদেশে সাধারণ মানুষের সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে। তাই মুখ্যমন্ত্রী বিশেষ কোনও জাতি বা সম্প্রদায়ের হবেন না, তিনিও সাধারণ মানুষের।
আরও পড়ুন
অটল ৯৩, পুজোর ছলে যেন মানুষটাকেই ভুলে থাকা
• হিমাচলে পাঁচ বছর অন্তর সরকার পাল্টানোটা যেন দস্তুর হয়ে গিয়েছে। গত দু’দশক ধরে এমনটাই দেখে এসেছে এই রাজ্য। দস্তুর মেনে এ বার বিজেপিরই সরকার গড়ার কথা ছিল। সেই সমীকরণই কি বিজেপিকে জয় এনে দিল?
জয়রাম: না ওই সমীকরণ মেনে এ বার ভোট দেননি হিমাচলবাসী। দেখুন, এক দিকে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে মানুষের বিপুল আস্থা রয়েছে। অন্য দিকে, এ রাজ্যে গত পাঁচ বছরে কংগ্রেস সরকার কী কাজ করেছে তা সবাই দেখেছেন। ভীষণই হতাশাজনক ছিল সেই কাজ। রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। গুড়িয়া-কাণ্ডের মতো ন্যক্কারজনক ঘটনাও ঘটেছে। আর সবটা মিলিয়েই জনাদেশ বিজেপি-র পক্ষে এসেছে। এর অন্য কোনও সমীকরণ নেই। থাকতে পারে না।
জনজোয়ার: ভাবি মুখ্যমন্ত্রীকে ঘিরে জনতার উচ্ছ্বাস। শিমলায় রবিবার। ছবি: পিটিআই।
• পাঁচ বছর পর ২০২২-এ বিজেপি না জিতলে মানুষ যদি ওই সমীকরণের কথাই বলেন?
জয়রাম: সে অবকাশ আমরা দেব না। এই জনাদেশের ভিত্তিতে আগামী পাঁচ বছর এ রাজ্যে বিজেপি বিপুল কাজ করবে। মানুষের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে উন্নয়নের রাস্তায় হাঁটবে। আর পাঁচ বছর পর মিলিয়ে নেবেন, আমরাই ফের সরকার গড়ব। এবং সে বার ৬০-এর উপরে আসন পাবে বিজেপি। অন্যদের সুযোগ দেওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনেই তার ঝলক দেখতে পাবেন।
• সেই ১৯৯৩ থেকে ভোটের ময়দানে রয়েছেন। পাঁচ বারের বিধায়ক। মাঝে মন্ত্রীও ছিলেন। এ বার মুখ্যমন্ত্রী। অনেকেই বলছেন, আপনার সঙ্ঘ-যোগটা কাজে লেগেছে। কী বলবেন?
জয়রাম: আমি কলেজ জীবনে অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ (এবিভিপি) করতাম। ১৯৯৩-তে প্রথম বার ভোটে দাঁড়িয়ে হেরে গিয়েছিলাম। তার পর ১৯৯৮ থেকে চচৌট এবং সেরাজ আমাকে পর পর পাঁচ বার বিধানসভায় পাঠিয়েছে। কখনও ফেরায়নি। যুব মোর্চার রাজ্য সম্পাদক থেকে সভাপতি, বিজেপির ভাইস প্রেসিডেন্ট থেকে বিধায়ক, মন্ত্রী— সব দায়িত্ব সামলেছি। এ বার আরও বড় দায়িত্ব। আসলে মানুষ আমার পাশে রয়েছেন। নেতৃত্ব আমাকে পছন্দ করেন। আর সহকর্মীদের ভালবাসাও রয়েছে। এর বেশি আর কিছু বলতে পারব না (আবার হাসি)।
পাশাপাশি: প্রেমকুমার ধুমলের সঙ্গে জয়রাম। মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে জয়রামের নাম
মনোনীত হওয়ার পরে শিমলায় বিজেপি-র রাজ্য সদর দফতরে। ছবি: পিটিআই।
• আপনি নরম সুরে এবং ভীষণ আস্তে কথা বলেন। বিধানসভা বা জনসভায় সকলে আপনার কথা শুনতে পায়?
জয়রাম: (টেলিফোনের ও পারে হাসি ছাড়া আর কিছুই শোনা গেল না।)
• একটা পোর্টাল ব্যক্তি জয়রাম সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য প্রকাশ করেছে। সেখানে দেখলাম, আপনি নাকি পুরনো হিন্দি গান শুনতে ভীষণ পছন্দ করেন!
জয়রাম: (হাসির রেশ লেগে রয়েছে ও পারে) ঠিকই লিখেছে। কিশোরজি, লতাজি— কী সব গান গেয়েছেন বলুত তো ওঁরা! আমি তো সময় পেলেই শুনি। আর এক জনের গানও ভীষণ ভাল লাগে জানেন, তিনি শ্রেয়া ঘোষাল।
• মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পেয়ে কোন কাজটি আগে করবেন?
জয়রাম: অনেক কিছু করার রয়েছে। প্রায় কিছুই হয়নি গত পাঁচ বছরে। অথচ গোটা দেশ মোদীজির নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে তর তর করে। আমরা তো আর পিছিয়ে থাকতে পারি না। উন্নয়নের সব রাস্তাতেই হাঁটতে হবে।
• আপনার মন্ত্রিসভায় কারা থাকছেন?
জয়রাম: এখনও কিছু ঠিক হয়নি। আগামী কাল সবটা জেনে যাবেন (হাসি)।
হিমাচল প্রদেশ বিধানসভা নির্বাচন সংক্রান্ত বিভিন্ন খবর পড়তে এখানে ক্লিক করুন
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy