ইন্ডিয়া হ্যাজ ওয়ন(won)! অচ্ছে দিন আনে ওয়ালে হ্যায়।
১৬ মে, ২০১৪। লোকসভা ভোটের ঐতিহাসিক ফল স্পষ্ট হতেই নরেন্দ্র মোদীর সেই বিখ্যাত টুইট। তার পর দু’বছর পেরিয়ে গিয়েছে। মোদীর মুখ থেকে সেই ‘অচ্ছে দিন’ বা সুদিনের কথা আর শোনাই যায় না। কেন শোনা যায় না, তার বিস্ফোরক ব্যাখ্যাটি এ বার করে বসলেন তাঁর মন্ত্রিসভারই এক গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। তা-ও আবার খোদ নরেন্দ্র মোদীকে উদ্ধৃত করে!
লোকসভা নির্বাচনের সময় এত জনপ্রিয় হওয়া ‘অচ্ছে দিন’ স্লোগানটি নাকি এখন নরেন্দ্র মোদীর গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। খোদ মোদীই সে কথা বলেছেন তাঁর সতীর্থদের। একঘর মানুষের সামনে সেই কথাই জানিয়েছেন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী নিতিন গডকড়ী। আর ‘অচ্ছে দিন’-এর কাঁটা গলা থেকে নামাতে এখন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের ঘাড়ে দায় চাপাচ্ছে সরকারপক্ষ। এই শব্দটি নাকি তাঁরই মুখনিঃসৃত। মনমোহনের থেকেই কথাটি ধার করেছিলেন মোদী।
এক প্রশ্নের উত্তরে গডকড়ী বলেন, ‘‘আমাদের গলায় ‘অচ্ছে দিন’ শব্দটি বিঁধে গিয়েছে। নরেন্দ্র মোদীই আমাদের বলেছেন, এখন যে কেউ চিৎকার করে প্রশ্ন করেন, ‘অচ্ছে দিন’ কবে আসবে? কিন্তু ‘অচ্ছে দিন’ কখনও আসে না। আমাদের দেশ অতৃপ্ত আত্মার মহাসাগর। যাঁর কাছে সাইকেল আছে, তাঁর স্কুটার চাই। যাঁর স্কুটার আছে, তাঁর চাই গাড়ি।
এমনকী যাঁদের বাংলো, ঘোড়া রয়েছে, তাঁরাও অতৃপ্ত!’’
এর পরে মোদীকে উদ্ধৃত করে গডকড়ী জানান, ‘‘এক সময় দিল্লিতে অনাবাসী ভারতীয় সম্মেলনে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ‘অচ্ছে দিন’ কবে আসবে? মনমোহন সিংহ জবাব দিয়েছিলেন, ভবিষ্যতে আসবে অচ্ছে দিন। তখন থেকেই মোদীজি এই শব্দটি বলতে শুরু করেছেন। আর এখন সেটাই আমাদের গলায় আটকে রয়েছে।’’ তবে বিষয়টি নিয়ে যাতে বিতর্ক না হয়, সে জন্য গডকড়ী সতর্ক হয়ে বলেন, ‘‘তা-ও আমি মানি, অচ্ছে দিনের জন্য মানুষের প্রত্যাশা রয়েছে। সংবাদ মাধ্যম যেন এর ভুল ব্যাখ্যা না করে।’’
এর আগে নির্বাচনী প্রচারের অনেক কথাই ‘ভোট-অলঙ্কার’ বলে পরে উড়িয়ে দিয়েছেন বিজেপির নেতারা। সেই সময় মোদী বলেছিলেন, বিদেশ থেকে সব কালো টাকা উদ্ধার করা গেলে দেশের ব্যাঙ্কে মাথাপিছু ১৫ লক্ষ টাকা আসবে। মোদী সরকার বছর কাটাতেই এ নিয়ে প্রশ্ন তুলতে থাকেন বিরোধীরা। তখন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ বলেন, মোদী আসলে ভোটের সময়ে ‘মামুলি’ মন্তব্য করেছেন। কিন্তু ‘অচ্ছে দিন’ আনার যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন মোদী, সরকারের আড়াই বছরের মাথায় তা থেকে পিছু হটে আসা কি কোনও কৌশল? নাকি ঘরোয়া আলোচনায় মোদীর মন্তব্যকে প্রকাশ্যে এনে বেফাঁস বললেন গডকড়ী? বিজেপি সূত্র অবশ্য বলছে, গডকড়ী বাস্তব পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেছেন। বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, মানুষের পাহাড়প্রমাণ প্রত্যাশা থাকে। সেই প্রত্যাশা কখনওই মেটার নয়। মানুষ যা পায়, তাতে কোনও দিন সন্তুষ্ট থাকে না। কিছু পেলেও তাঁদের আরও চাই। প্রধানমন্ত্রী যতই কাজ করুন না কেন। ফলে ‘সুদিন’ একটি মানসিক অবস্থা। কিন্তু যে ভাবে ঘরোয়া কথা ভরা হাটে বলে ফেলেছেন গডকড়ী, তাতে দলের অনেকেই অভিসন্ধির গন্ধ পাচ্ছেন। তাঁরা বোঝার চেষ্টা করছেন, আরএসএসের ঘনিষ্ঠ গডকড়ী মোদীকে বিপাকে ফেলার জন্যই এমন মন্তব্য করেননি তো?
তবে উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনের আগে এমন মওকা হাতে পেয়ে বিরোধীরা হাতছাড়া করবে কেন? কংগ্রেসের মুখপাত্র অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি আজ তাই এই নিয়েই সাংবাদিক বৈঠক করে বলেন, ‘‘দেশের ১২৫ কোটি মানুষকে ধোঁকা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর দলের নেতাই কবুল করলেন, এই সরকার আর সুদিন আনতে পারবে না। সরকার সব ক্ষেত্রেই ব্যর্থ। এ বার সেই ব্যর্থতাই স্বীকার করতে হল।’’ যদিও বিজেপির মুখপাত্র সম্বিত পাত্রের পাল্টা যুক্তি, ‘‘নিতিন গডকড়ী কখনও বলেননি যে সরকার কোনও কাজে পিছিয়ে এসেছে। প্রধানমন্ত্রী সাধারণ মানুষের জন্য দিনরাত কাজ করে চলছেন।’’
তবে বাস্তব হল, মোদী নিজেও সুদিন আনার কথা আর বলছেন না। সরকারের এক বছর পূর্তিতে তিনি বলেছিলেন ‘দুর্দিন ঘুচেছে’। আর দ্বিতীয় বছরে বলেছেন, ‘দেশ বদলাচ্ছে।’ মুখ ফুটে তবুও বলতে পারেননি, সুদিন এসেছে বা আসবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy