লোকসভার অধিবেশন শুরু হল বুধবার। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রথম তাতে যোগ দিলেন নরেন্দ্র মোদী। পরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি। ছবি: পিটিআই।
আর একটু হলেই মুখোমুখি ধাক্কা খেতেন নরেন্দ্রভাই আর সনিয়াজি!
নতুন লোকসভার প্রথম দিনের অধিবেশন শুরু হতে তখন আর কয়েক মিনিট বাকি। সবাই প্রায় এসে গিয়েছেন। শুধু এক জনের অপেক্ষাতেই ট্রেজারি বেঞ্চের উসখুস। তিনিও এলেন। সঙ্গে সঙ্গে টেবিল চাপড়ে হাততালি বিজেপি নেতাদের। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী অপেক্ষমান সাংসদদের সঙ্গে হাত মেলাতে মেলাতে এগোলেন।
কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত আসনটিতে তো বসলেন না মোদী! সকলকে খানিকটা চমকে দিয়েই তিনি এগিয়ে গেলেন বিরোধী নেতাদের বেঞ্চে। হাত মেলালেন সমাজবাদী পার্টির নেতা মুলায়ম সিংহ যাদব, তৃণমূল নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, কংগ্রেসের প্রধান বিরোধী নেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে-সহ আরও নেতাদের সঙ্গে। মোদীকে ঘিরে বিরোধী বেঞ্চের সামনেই তখন এমন জটলা যে, উল্টো দিক থেকে যে সনিয়া গাঁধী ঢুকছেন, সেটাই মালুম হয়নি কারও।
স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে দ্রুত হাঁটছিলেন কংগ্রেস সভানেত্রী। যখন মোদীর একেবারে সামনে চলে এসেছেন, তখনও কেউ কাউকে দেখতে পাননি! দু’জনেই যখন টাল সামলালেন, তখন তাঁরা একদম মুখোমুখি! হাতজোড় করে পারস্পরিক সম্ভাষণ জানালেন একে অন্যকে। স্মিতহাস্যে দু’জনকে কথাও বলতে দেখা গেল কিছুক্ষণ।
ভোটের মহারণ শেষ। সংসদীয় দ্বৈরথ শুরু হবে আগামী কাল থেকে। আজ গোপীনাথ মুন্ডের স্মৃতিতে অধিবেশন বসেই মুলতুবি হয়ে গিয়েছে। তার মাঝখানে এই রাজনৈতিক সম্প্রীতিরই সাক্ষী থাকল সংসদ। সিপিএম সাংসদ মহম্মদ সেলিম যেখানে এগিয়ে এসে করমর্দন করছেন লালকৃষ্ণ আডবাণীর সঙ্গে। বিজেপি-র রথযাত্রার নায়ক পরমুহূর্তে মাথায় হাত বুলিয়ে স্নেহ জানাচ্ছেন, তৃণমূলের নায়িকা সাংসদ শতাব্দী রায়কে! বহুক্ষণ কংগ্রেসের শশী তারুরের হাত ধরে তাঁর খবরাখবর নিলেন বিজেপি সাংসদ কিরণ খের।
লোকসভা কক্ষের এই মিলন মেলা গড়াল সেন্ট্রাল হলেও। গত এক-দেড় বছর ধরে প্রবল টেনশনের সাক্ষী থেকেছে এই সেন্ট্রাল হল। আজ যেন সম্পূর্ণ বিপ্রতীপ একটি ছবি। বদলে গিয়েছে লোকসভায় গত দশ বছরের বসার ব্যবস্থাও! বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ তো কক্ষে ঢুকেই সোজা হাঁটা দিয়েছিলেন বিরোধীদের জন্য নির্ধারিত আসনে। গত এক দশক যাবত্ সেখানেই বসেছেন তিনি! পরে ভুল বুঝে হাসিমুখে ফিরে এসে রাজনাথ সিংহকে বললেন, “আরে আমি তো ওই দিকে হাঁটতে শুরু করেছিলাম!”
বিজেপি-র বাবুল সুপ্রিয় তৃণমূলের সঙ্গে তুমুল লড়াই করে জিতে এসেছেন। আজ কিন্তু তৃণমূলের কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বাবুলকে দেখে সহাস্যে বললেন, “আমার মামাবাড়ি কিন্তু আসানসোল! আর তুমি জিতেছ সেখান থেকেই!” শতাব্দী, তাপস, সুদীপ, সৌগত একে একে সবাই অভিনন্দন জানালেন গায়ক-সাংসদকে। শতাব্দী প্রশ্ন ছুড়লেন, “তোমাকে কি আমরা শিল্পী হিসেবে দেখব, নাকি প্রতিপক্ষ সাংসদ হিসেবে?”
গত কালের মতোই সোনালি পাড় দেওয়া ঘিয়ে রঙের শাড়ি পরে এসেছিলেন মুনমুন সেন। বসেছিলেন রাহুল গাঁধীর পাশেই। গত কাল লাইব্রেরিতে গিয়ে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। আজ ঘুরে ঘুরে দেখেছেন সংসদের স্থাপত্য, তৈলচিত্র, বিভিন্ন স্মরণিকা। তৃণমূলের নতুন প্রমীলা সাংসদদের মধ্যে তিনি ছাড়াও ছিলেন অর্পিতা ঘোষ, সন্ধ্যা রায়, মমতা সঙ্ঘমিতা, উমা সরেন, প্রতিমা মণ্ডল, রেণুকা সিংহরা। অর্পিতা জানাচ্ছেন, “প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা খুব থ্রিলিং! যেখানে অম্বেডকরের মত মানুষ বসে কাজ করেছেন, সেখানে পৌঁছতে পেরেছি ভেবেই ভাল লাগছে।”
একই রকম উচ্ছ্বসিত বাকি সাংসদরাও। সেন্ট্রাল হলে বসে অনেক ক্ষণ গল্প করলেন শুভেন্দু অধিকারী এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সাদা পাঞ্জাবি-পায়জামা পরে এসেছিলেন অভিষেক। গত কালও এসেছিলেন ফর্ম সই করতে। দু’দিনই তাঁকে দেখা গিয়েছে লাজুক, শান্ত চেহারায়। অবশ্য কাকলি ঘোষ দস্তিদার, সুব্রত বক্সীরা আগাগোড়া ঘিরে ছিলেন তাঁকে।
আজ রাতে নতুন সাংসদদের জন্য সংসদের রীতিনীতি সম্পর্কে একটি কর্মশালা হল বঙ্গভবনে। সেখানে বিভিন্ন সংসদীয় স্থায়ী কমিটির দায়িত্ব পালন, সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে সম্পর্ক, সাংসদ হিসাবে করণীয় কাজ এই সব নিয়ে সেখানে আলোচনা করলেন সৌগত রায়, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, মুকুল রায়, ডেরেক ও ব্রায়েনের মতো অভিজ্ঞরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy