সারা শরীরের মতো, মস্তিষ্কের জন্যও চিনি ভাল নয়৷ ছবি: সংগৃহীত
সমস্যা কি আর একটা! ওজন কমাবেন বলে ডিমের কুসুমটা বাদ দিয়ে দিলেন৷ প্রোটিনের অর্ধেক তো জলে গেলই, জলে চলে গেল কোলিন নামের উপাদান, যে কিনা স্মৃতিশক্তি ভাল রাখতে সাহায্য করে। শরীরে ও ব্রেনে অনাবশ্যক প্রদাহ হতে দেয় না। মস্তিষ্কের কার্যকারিতা ঠিক রাখে৷ জলে গেল ট্রিপটোফান, সেরেটোনিন নামের হ্যাপিনেস হরমোনের মূল কান্ডারি, যার প্রভাবে মন ভাল থাকে৷ আর মন ভাল থাকলে, মানসিক চাপ কমলে স্মৃতিও যে ভাল থাকে, সে তো জানা কথাই৷
আরও আছে
ধরুন মাছ৷ ওজন কমাবেন বলে বেছে বেছে ছোট মাছ আনেন বা বড় মাছের তৈলাক্ত অংশ ফেলে দিয়ে খান৷ সঙ্গে বাদ যায় উপকারী ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, যা কিনা মস্তিষ্কের প্রধান খাদ্য৷ চিকিৎসকদের মতে, ভুলে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচতে চাইলে সপ্তাহে অন্তত দু’বার ১০০-১৫০ গ্রাম তৈলাক্ত মাছ খাওয়া দরকার৷ তাতে উপরি পাওনা হৃদ্যন্ত্রের সুস্থতা৷ কমে আথ্র্রাইটিস ও ডিপ্রেশনের প্রকোপ৷
ওমেগা থ্রি-র জোগানদার হিসেবে যদিও তৈলাক্ত সামুদ্রিক মাছের কদর বেশি, যেমন স্যামন, কড, টুনা ইত্যাদি, কিন্তু বাঙালি মুখে সে সব রোচে না বলে বা সামর্থ্যে কুলোয় না বলে বাজারে যা পাওয়া যায়, তাই খেতে পারেন৷ আর মাঝেমধ্যে ইলিশ হলে তো কথাই নেই৷ এমনকি, ইলিশের তেলও খেতে পারেন, ভাত মেখে খেতে, তাতে ভালই হবে৷
স্ন্যাক্সে বাদাম
ক্যালোরি বেশি বলে ব্রাত্য না করে স্মৃতিশক্তি বাড়াতে দিনে ৪-৫টা অ্যামন্ড খান৷ পেস্তা খান গোটা কয়েক৷ মস্তিষ্কে প্রদাহ কম হবে৷ ম্যাকাডেনিয়া নাট খেলে মস্তিষ্কের কার্যকারিতায় চট করে ভাটা পড়বে না৷ আর আখরোট যদি খেতে পারেন, তা হলে তো কথাই নেই৷ দিনে গোটাকয়েক, ব্যাস৷ দ্বিগুণ অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টে মস্তিষ্ক কাজ করবে দ্বিগুণ তেজে৷ স্মৃতিশক্তি বাড়বে, রক্তচাপ কমবে৷ ভাল থাকবে হার্ট৷ চিনেবাদামও কম যায় না৷ কাজেই অল্প করে খেতে পারেন৷ এই গোটা ২০-২৫টা৷
চা ও কফি
প্রধান কান্ডারি ক্যাফেইন৷ গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে দিনে ২-৩ কাপ ডার্ক রোস্টেড কফি খেলে মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভাল থাকে, স্মৃতিশক্তি বাড়ে৷ তবে তার বেশি খেলে ঘুম, হৃদ্যন্ত্র ইত্যাদির উপর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে৷
দিনে ৩-৪ কাপ চা-ও খেতে পারেন৷ কালো চা, সবুজ চা৷ ক্যাফেইন ও এল-থিয়ানিন নামের উপাদানের দৌলতে স্মৃতিশক্তি, মনোযোগ, স্ফূর্তি, সবই বাড়বে৷
তবে চিনি দিয়ে নয়৷ কারণ সারা শরীরের মতো, মস্তিষ্কের জন্যও চিনি ভাল নয়৷
ফলের মধ্যে বেরি
কম ক্যালোরি ডায়েটের অঙ্গ হিসেবে যে কোনও ফল খেতে পারেন৷ সকালে বা দুপুরে খাওয়ার পর খেলে সবচেয়ে ভাল৷ আর সে ফল যদি হয় ব্লুবেরি, তা হলে তো কথাই নেই৷ অন্য ফলের সঙ্গে অল্প করে বেরি খেলে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট ও ফ্ল্যাভোনেয়েডের গুণে স্মৃতিশক্তির উপর ভাল প্রভাব পড়ে৷
শেষ পাতে ডার্ক চকোলেট
দুপুরে খাওয়ার পর শেষ পাতে মিষ্টির জন্য মন আনচান করলে এক টুকরো খেয়ে নিন৷ ফ্ল্যাভোনয়েডের গুণে মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন ভাল হবে৷ বাড়বে স্মৃতিশক্তি৷ ভরা পেটে খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা বহু ক্ষণ ঠিক থাকে বলে বেশি ক্ষণ স্ফূর্তি পাওয়া যায়৷ খিদে নিয়ন্ত্রণে থাকে৷ তার হাত ধরে বশে থাকে ওজনও৷
মন ভাল করার সঙ্গী রেড ওয়াইন ও চিজ
ক্লান্ত দিনের শেষে এক গ্লাস রেড ওয়াইন৷ অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট রেসভারেট্রলের গুণে বয়সজনিত ক্ষয়ক্ষতির হার কম থাকবে মস্তিষ্কের, কম ভুলবেন৷ সঙ্গে মাঝেমধ্যে অল্প করে কিছু বিশেষ ধরনের চিজ, যেমন, ফেটা, মোৎজ্জারেলা, সুইস বা গোট চিজ খেলে তো কথাই নেই৷ সাম্প্রতিক গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে ওয়াইন ও চিজ অ্যালঝাইমার ঠেকাতেও কাজে লাগে৷
তবে অভ্যাস না থাকলে নতুন করে শুরু করার দরকার নেই৷ কারণ বেশি খেলে স্নায়ুর ক্ষতি হয়ে ভুলে যাওয়ার মাত্রা বাড়তে পারে৷ কাজেই আসক্তির প্রবণতা থাকলে ওয়াইনের বদলে লাল আঙুর, চিনেবাদাম ও কিছু বেরি খান৷ এ সবেও রেসভারেট্রল আছে মোটামুটি ভাল মাত্রাতেই৷
চিজেও কিন্তু আসক্তি হয়৷ কাজেই মাত্রা রাখতে পারবেন না মনে হলে, খাবেন না৷
আর ওজনের কী হবে?
ভাবছেন, এত ফ্যাটসমৃদ্ধ খাবার খেলে ফ্যাট বাড়বে! কোলেস্টেরল বাড়বে? বাড়বে না৷ পর্যাপ্ত সবুজ শাক-সব্জির সঙ্গে মাত্রা রেখে ভাল ফ্যাট খেলে ওজন বাড়বে না৷ সবুজ শাক-সব্জিও স্মৃতিশক্তি বাড়াতে কাজে লাগে৷ কাজে লাগে ওজন কম রাখতেও৷ কাজেই ভয় নেই৷
ভাবছেন, ফ্যাট মানেই তো খারাপ! তা কিন্তু নয়৷ খারাপ ফ্যাট যেমন আছে, আছে ভাল ফ্যাটও৷ ভাজাভুজি, কেক, কুকিজ, প্রসেস করা খাবার, ফাস্টফুড, অতিরিক্ত তেল-ঘি-মাখন, ডাল়ডা ইত্যাদি হল খারাপ ফ্যাটসমৃদ্ধ খাবার৷ কাজেই এ সব খাওয়া কমিয়ে বা ছেড়ে দিয়ে যদি কম ক্যালোরির পুষ্টিকর খাবারের সঙ্গে অল্প করে পুফা ও মুফাসমৃদ্ধ ভাল ফ্যাট খান, যেগুলির কথা বলা হয়েছে, বা অল্প করে স্যাচুরেটেড ফ্যাটও খান, যা আছে ডিমের কুসুমে, রেডমিটে, ফুল ফ্যাট দুধ-দই-চিজে, উপকার যা হওয়ার তা তো হবেই, সঙ্গে ওজনও কমবে৷ কারণ ফ্যাট খাবারের স্বাদ বাড়ায়৷ ফ্যাটসমৃদ্ধ খাবার অল্প খেলেই পেট ভরে যায় ও বহু ক্ষণ ভরা থাকে৷ তৃপ্তি হয়৷ ফলে ফ্যাটের সূত্রে একটু বেশি ক্যালোরি শরীরে ঢুকলেও খাবারের পরিমাণ কমে যায় বলে মোট ক্যালোরি কম থাকে৷ ওজন কমার সুরাহা হয়৷
কাজেই ভয় নেই, ওজন কমানোর জন্য স্মৃতিশক্তির সর্বনাশ করার কোনও দরকার নেই৷
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy