ইচ্ছে হলেই নানা রকম খাওয়াদাওয়া এখন শুধু স্মার্টফোনে মৃদু টোকা দেওয়ার অপেক্ষা। কাজের ফাঁকে অফিসে কিংবা ছুটির দিন বাড়িতে একটু অন্য রকম খেতে ইচ্ছে হলে পছন্দমতো খাবার বাইরে থেকে আনিয়ে নেওয়া আর কোনও ব্যাপার নয়। কিন্তু শুধু খেলেই তো হল না, সে খাবার স্বাস্থ্যের পক্ষে ভাল কি না, তা-ও বোঝা দরকারি। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)-এর একটি সাম্প্রতিক সমীক্ষা বলছে, ভারতীয়রা নানা রকম খাওয়াদাওয়া করছেন ঠিকই, কিন্তু সেই খাওয়াদাওয়া অধিকাংশ ক্ষেত্রেই স্বাস্থ্যকর হচ্ছে না। সমীক্ষা চালিয়ে দেখা গিয়েছে, ‘‘ভারতীয়রা যে বিভিন্ন রোগে ভোগেন, তার অর্ধেকের বেশিই (৫৬.৪ শতাংশের ক্ষেত্রে) হচ্ছে অস্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়ার কারণে।’’ পরিস্থিতি এতটাই গুরুতর যে, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেও খাওয়াদাওয়া নিয়ে দেশের মানুষকে পরামর্শ দিতে শোনা যাচ্ছে। এমতাবস্থায় খোদ প্রধানমন্ত্রীর নামেই একটি ‘ডায়েট চার্ট’ বা খাদ্যতালিকা নিয়ে ভারতীয়দের স্বাস্থ্যোদ্ধারে নামলেন এক যাপন প্রশিক্ষক। তাঁর তৈরি ডায়েট চার্টের নাম ‘দ্য মোদী ডায়েট’। দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী মোদীর উদ্বোধন করা একটি আন্তর্জাতিক সম্মলেন সেই ডায়েট চার্টের বিস্তারিত ব্যখ্যাও দিলেন তারকা 'যাপন-গুরু' লিউক ক্যুটিনহো।
লিউক মুম্বইয়ের মানুষ। পুষ্টি বিজ্ঞান এবং বিকল্প চিকিৎসা নিয়ে চর্চা করেন। চলচ্চিত্র জগতের বহু তারকাই অনুসরণ করেন তাঁকে। লিউককে দিল্লিতে আয়োজিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। দিল্লিতে ওই সম্মেলন শুরু হয়েছে ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে। চলবে দু’দিন। ১ মার্চ পর্যন্ত। ওই অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেছেন মোদী। সম্মেলনে যোগ দিতে এসেছেন কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীরা। এসেছেন শ্রীলঙ্কার প্রাক্তন প্রেসিডেন্টও। সেই অনুষ্ঠানেই লিউক জানিয়েছেন, তাঁর পরিকল্পিত 'মোদী ডায়েট'-এর কথা। জানিয়েছেন, ভারতীয়দের অস্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়ার অভ্যাসে রাশ টানার পাশাপাশি, ওই খাদ্যতালিকা তাদের প্রয়োজনীয় পুষ্টিও জোগাবে। লিউক বলেছেন, ‘‘যে হেতু প্রধানমন্ত্রী মোদীর বাহুল্যবর্জিত জীবন যাপন থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে ওই খাদ্যতালিকা আমি বানিয়েছি , তাই তার নাম দিয়েছি ‘দ্য মোদী ডায়েট’।’’
লিউক জানিয়েছেন, তাঁর তৈরি মোদী ডায়েট নিছক খাওয়াদাওয়ার তালিকা নয়। বরং বিষয়টিকে যথাযথ ভাবে বর্ণনা করলে বলতে হবে, ‘দ্য মোদী ডায়েট অ্যান্ড লাইফস্টাইল প্ল্যান’। যা শারীরিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্য এবং জীবনযাপনের শৃঙ্খলার প্রতিও নজর রাখবে।
কী কী থাকছে লিউকের সেই মোদী ডায়েটে?
লিউক জানিয়েছেন, তিনি যে খাদ্যতালিকা প্রস্তুত করেছেন, তার গোটাটাই নিরামিষ। তবে তা দিয়ে ভারতীয়দের পুষ্টির ঘাটতিপূরণ সম্ভব। কী কী মানতে হবে?
১। সুপারফুড: লিউক বলছেন, ভারতে সুপারফুডের ছড়াছড়ি। তাই প্রতিদিনের খাবারে অবশ্যই সেইসব সুপারফুড রাখা যেতে পারে। লিউকের মতে, মাখানা, আমলকী, ঘি, সজনে পাতা-ফুল এবং ডাঁটা, হলুদ, গরম মশলা, স্থানীয় ফল-মূল-শাক-সব্জি, বিভিন্ন ডাল এবং দানা শস্য— সবই ভারতীয় সুপারফুড।
২। তাজা খাবার: তাজা স্থানীয় শাক-সব্জি, মরসুমি আনাজপাতি, জোয়ার-বাজরা, ছাতু, সাদা মাখন ইত্যাদি খাদ্যতালিকায় রাখতে বলেছেন লিউক। উপযুক্ত প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর স্নেহ পদার্থ, কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট খাওয়ায় জোর দিতে বলেছেন।
৩। সময়ে খাওয়া, মেপে খাওয়া: সূর্যাস্তের ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই নৈশাহার শেষ করতে বলছেন যাপন প্রশিক্ষক। একই সঙ্গে বলছেন, দিনের বাকি সময়েও যথা সময়ে যথা পরিমাণে খাওয়াদাওয়া করা উচিত। পেট ভরে গেলে আর না খাওয়াই ভাল। আবার মানসিক চাপে থাকাালীন বেশি খাওয়ার প্রবণতা তৈরি হয় সেটাও না করা উচিত।
৪। বাইরের খাবার কম: বাড়ির খাবার খাওয়া, খাবার খাওয়ার সময়ে চিবিয়ে খাওয়ায় জোর দিয়েছেন লিউক সেই সঙ্গে বলেছেন ভাজাভুজি এবং ফাস্টফুডে নিয়ন্ত্রণ আনতে।
৫। তেল কম: তেলের ব্যবহার ১০-১৫ শতাংশ কমিয়ে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন লিউক। পাশাপাশি বলেছেন, ডুবো তেলে ভাজা খাবার খাওয়ার বদলে ঘি দিয়ে ভাজা খাবার খেতে।
৬। ঘুম জরুরি: উপযুক্ত ঘুম শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য দরকারি। ভাল ঘুমের জন্য প্রাণায়াম করুন। শোয়ার ৪৫ মিনিট আগে ফোন বা অন্য গ্যাজেট দেখা বন্ধ করুন। ঘুমের পরিবেশ হবে অন্ধকারাচ্ছন্ন।
৭। দিনের শুরুতে সূর্য: সকালে উঠে সূর্যের আলো গায়ে লাগাতে বলছেন লিউক। পাশপাশি, সকালে শরীরচর্চা, ধ্যান করার পরামর্শও দিচ্ছেন। অনেকেই সময়ের অভাবে শরীরচর্চা করতে পারেন না। লিউক বলছেন, ১৫ মিনিট সময় বার করুন। সেটুকু সময়েই রোজ শরীরচর্চা করার চেষ্টা করুন।
৮। যাপনে বদল: লিউকের মতে, সামাজিক জীবন ভাল রাখাটাও জরুরি। তাই পরিবারকে সময় দেওয়ার পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগও বৃদ্ধি করুন। সামাজিক কাজে যুক্ত হোন। স্বেচ্ছায় শ্রম দান করুন।