একটানা কয়েক দিন বা এক সপ্তাহ অথবা তারও বেশি একই রকম খাবার খেয়ে কি ওজন কমানো যায়? অনুষ্কা শর্মা একবার এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, দ্রুত ওজন কমানোর জন্য এমন ডায়েট তিনি করেন। ডায়েটের নানা পদ্ধতি রয়েছে। আজকাল তো সেগুলির নানা গালভরা নাম। কেউ কেবলমাত্র প্রোটিন জাতীয় খাবার খেয়ে ডায়েট করছেন, কেউ আবার ফাইবার বেশি খাচ্ছেন, কেউ কার্বোহাইড্রেট পুরোপুরি বাদ দিয়ে ওজন কমানোর চেষ্টা করছেন। সব ডায়েটরই যেমন কিছু ভাল দিক রয়েছে, আবার কিছু খারাপ দিকও আছে। সকলের জন্য সব ডায়েট একেবারেই প্রযোজ্য নয়।একই রকম খাবার খেয়ে যাওয়ার যে ধরন, তার নাম হল ‘মোনো ডায়েট’ বা ‘মোনোট্রফিক ডায়েট’। সেটি আসলে কী?
মোনো ডায়েট করলে যে কোনও একটি বা এক রকম খাবারই রোজ খেয়ে যেতে হবে। ধরুন, চিকেন খাচ্ছেন, তা হলে চিকেনই টানা ৫ থেকে ৭ দিন খেতে হবে। সঙ্গে আর কিছু খেতে পারবেন না। আবার যদি তরল খাবার খান, তা হলে সেটিই খেয়ে যেতে হবে। অনেকে আবার ফাইবারের জন্য ফল খান। তা হলে যে কোনও এক রকম ফল বেছে নিয়ে সেটিই খেয়ে যেতে হবে। এটাই হল মোনোট্রফিক ডায়েটের পদ্ধতি।
কোন ধরনের খাবার বাছবেন, তারও কিছু নিয়ম আছে। যেমন, প্রোটিনের মধ্যে চিকেন বা বেকড ফিশ, নানা রকম বাদাম, বীজ, অথবা ব্রাউন রাইস, আঙুর, আপেল বা কলা। অনেকে আবার কেবল তরমুজ খেয়েই কাটিয়ে দেন টানা কয়েকটা দিন।
এখন প্রশ্ন হল, এমন ডায়েট কি স্বাস্থ্যকর?
মোনো ডায়েট তখনই ভাল, যখন খুব দ্রুত ওজন ঝরানোর প্রয়োজন হয়। এই বিষয়ে পুষ্টিবিদ শম্পা চক্রবর্তীর মত, অনুষ্কা শর্মা হোন বা যে কোনও তারকা, তাঁরা তাঁদের শরীর বুঝে ডায়েট করেন। অনুষ্কা যদি টানা সাত দিন তরল খাবার খান, তা হলে আনুষঙ্গিক সাপ্লিমেন্টও নেন এবং নিয়ম মেনে শরীরচর্চা করেন। তাই তারকাদের দেখে কোনও কিছু অনুসরণ করতে যাওয়া ঠিক নয়। মোনো ডায়েট করতে হলে অবশ্যই পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিতে হবে। ভুল খাবার খেয়ে এই ডায়েট করতে গেলে অপুষ্টি, রক্তাল্পতার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
আরও পড়ুন:
কী কী শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে?
যে কোনও এক রকম খাবার কখনওই সমস্ত ভিটামিন, প্রোটিন ও খনিজের চাহিদা পূরণ করতে পারে না। পুষ্টিবিদের কথায়, সুষম ডায়েট মেনে ওজন কমানোই ভাল। এতে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট ও ফ্যাট সম মাত্রায় থাকে। পাশাপাশি, শরীরের পুষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় অ্যামাইনো অ্যাসিড ও ফাইবারও পাওয়া যায়। কিন্তু যিনি রোজ আপেল বা তরমুজ খেয়ে কাটিয়ে দিচ্ছেন, অথবা একই ধরনের শাকপাতা খেয়ে যাচ্ছেন, তাঁর শরীরে পুষ্টির ঘাটতি হতে বাধ্য। শরীর যদি প্রয়োজনীয় কার্বোহাইড্রেট না পায়, তা হলে পেশির শক্তি কমবে, হজম প্রক্রিয়াও ধীর গতিতে হবে।
আরও একটি সমস্যা হবে, যার নাম ‘নিউট্রিয়েন্ট টক্সিসিটি’, অর্থাৎ একই রকম খনিজ উপাদান বেশি মাত্রায় শরীরে জমা হয়ে তা বিপদ আরও বাড়াবে। যদি কেউ রোজ নারকেল বা ডাবের জল খেয়ে থাকেন, তা হলে শরীরে পটাশিয়ামের মাত্রা বেড়ে গিয়ে হৃৎস্পন্দন অনিয়মিত হয়ে যাবে। কেবল চিকেন খেয়ে গেলে, ফাইবার ও ভিটামিন সি-এর ঘাটতি হবে। শুধু ফল খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা আচমকা বেড়ে বা কমে যেতে পারে। এর প্রভাব পড়তে পারে মানসিক স্বাস্থ্যেও। কাজেই ডায়েট নিজে থেকে স্থির করা কখনওই ঠিক হবে না।