মানবদেহে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে মজুত প্রোটিনটি হল কোলাজেন। শুধু ত্বক নয়, হাড়, নখ, রক্তনালি, কার্টিলেজ, পেশিতে থাকে এই প্রোটিন। কিন্তু বয়সের সঙ্গে, মহিলাদের ক্ষেত্রে মেনোপজ়ের পর থেকেই শরীরে এই প্রোটিন উৎপাদন কমতে থাকে। ত্বকে প্রভাব ফেলে ধূমপান, মানসিক চাপ, ঘুমের অভাব, চড়া রোদে দীর্ঘক্ষণ কাটানো বা অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাসও। কিছু রোগের কারণেও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে কোলাজেনের মাত্রা। প্রয়োজনের তুলনায় প্রোটিনটির উৎপাদন যে কম হচ্ছে, সেটা রক্তপরীক্ষা ছাড়াও বোঝা সম্ভব। ত্বকে বলিরেখা বা চোখে-মুখে ক্লান্তির ছাপ, পেশি দুর্বল হয়ে যাওয়া, গাঁটে দীর্ঘমেয়াদি ব্যথা হল কোলাজেন উৎপাদন কম হওয়ার লক্ষণ।
কোলাজেন বৃদ্ধির উপায়
ক্লিনিকাল নিউট্রিশনিস্ট প্রিয়াঙ্গী লাহিড়ির কথায়, “নিয়ম মেনে চললে শরীরে কোলাজেন উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব। এর জন্য অন্যতম উপায় হল খাদ্যাভ্যাসে প্রয়োজনীয় বদল আনা।” বিষয়টি ভেঙে বলছেন পুষ্টিবিদ সুবর্ণা রায়চৌধুরীও। তাঁর মতে, ব্যালান্সড ডায়েট, অর্থাৎ পর্যাপ্ত পরিমাণে এবং নির্দিষ্ট গুণমানের খাবার পাতে থাকা অত্যন্ত জরুরি। আর সেটা হলে কোলাজেন উৎপাদন বাড়াতে কৃত্রিম কোনও উপায়ের দরকার পড়ে না।
পুষ্টিগুণে ভরপুর খাবার
কিছু বিশেষ ধরনের খাবার শরীরে কোলাজেনের মাত্রা বাড়াতে পারে। এর মধ্যে অন্যতম হল অ্যামিনো অ্যাসিড এবং ভিটামিন সি-যুক্ত খাবার।
- প্রোটিন: কোলাজেনের জন্য জরুরি গ্লাইসিন ও প্রোলিন জাতীয় অ্যামিনো অ্যাসিড। এই ধরনের অ্যামিনো অ্যাসিড শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকলে ত্বক টানটান হবেই। পরিমাণ মতো মাংস, দুধ, দুগ্ধজাত পণ্য, ডাল, সয়াবিন, বাদাম বা তিল খাদ্যতালিকায় রাখা যেতে পারে। মাংসের ক্ষেত্রে অনেকেই ‘বোন ব্রথ’ বা মাংসের হাড় দিয়ে স্টু বানিয়ে খাওয়াকে উপকারী বলে মনে করেন। আর্থ্রাইটিসের মতো সমস্যার সঙ্গে লড়তেও বোন ব্রথ বেশ কাজে দেয়। এ ছাড়া, ডিমের সাদা অংশ বা মাছও অত্যন্ত উপকারী।
- ভিটামিন সি: কোলাজেনের আর একটি উপাদান হল হাইড্রক্সিপ্রোলিন। আর তা বৃদ্ধির চাবিকাঠি রয়েছে ভিটামিন সি জাতীয় খাবারে। আমলকী, পেঁপে, পেয়ারা, লেবু, আঙুর, ক্যাপসিকাম, আলু, করলার মতো ফল ও আনাজে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে। স্ট্রবেরি, রাস্পবেরি, ব্লুবেরিও ভিটামিন সি-এ ভরপুর। ফলে এই সব খাবার নিয়মিত খেলে ত্বকের গুণমানে উন্নতি হয়।
- জ়িঙ্ক ও কপার: কোলাজেনের সংশ্লেষণে জ়িঙ্ক সহায়ক। কাজু বাদাম, ডাল, সামুদ্রিক মাছ, অয়েস্টার, কাঁকড়া, চিংড়ি এবং রেড মিটে প্রচুর পরিমাণে জ়িঙ্ক ও কপার থাকে।
তবে কোন খাবার কী পরিমাণে দরকার, সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)