E-Paper

ক্যানসার ফিরে আসতে পারে

ক্যানসার মুক্তির পরে ভয় থেকেই যায় তা ফিরে আসার। তবে ক্যানসার ফিরে এলেও চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ হওয়া সম্ভব।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

ঊর্মি নাথ 

শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২৫ ০৯:৪৮
Share
Save

স্তন ক্যানসার থেকে মুক্তির সাত বছর পরে আবার শরীরে ক্যানসার ফিরে এসেছে অভিনেতা আয়ুষ্মান খুরানার স্ত্রী তাহিরা কাশ্যপের। সমাজমাধ্যমে এ কথা প্রকাশ্যে লিখেছেন তিনি। তা হলে কি ক্যানসারমুক্ত হওয়ার পরেও লুকিয়ে থাকে এই রোগের বীজ? যে কোনও সময় তা দেখা দিতে পারে? এই বিষয়ে আলোকপাত করলেন ক্যানসারের শল্যচিকিৎসক ডা. গৌতম মুখোপাধ্যায়, ‘‘সাধারণত ক্যানসারের সম্পূর্ণ চিকিৎসার পরে পাঁচ বছরের মধ্যে সে অসুখ আর ফিরে না এলে ধরে নেওয়া হয়, রোগী সুস্থ হয়ে গিয়েছেন। কিন্তু ব্যতিক্রম তো আছেই। যে ধরনের ক্যানসার হয়েছিল সেটা ফিরে আসতে পারে বা অন্য আর একটা নতুন ধরনের ক্যানসার হতে পারে, যাকে বলে সেকেন্ড প্রাইমারি। ক্যানসারের ধর্ম মেটাসটাসিস অর্থাৎ ছড়ানো বা ছড়িয়ে পড়া।’’

চিকিৎসার পরে ফলোআপ জরুরি

ক্যানসার শুধু শরীরে নয়, মনের উপরে যথেষ্ট প্রভাব ফেলে। একবার ক্যানসার মুক্তির পরে ভয় থেকেই যায়, তা আবার ফিরে না আসে! দ্বিতীয়বার ক্যানসার ফিরে এলেও চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ হওয়া সম্ভব। এ ব্যাপারে ডা. মুখোপাধ্যায় বললেন, ‘‘ক্যানসারের ট্রিটমেন্টের পরে পাঁচ বছর সময়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমরা প্রথম দু’বছর তিন মাস অন্তর একবার, তার পরের তিন বছর ছ’মাস অন্তর একবার ও পাঁচ বছরের পর থেকে বছরে একবার করে ফলোআপ করতে বলি।’’ অনেক ক্ষেত্রে ক্যানসার নিঃশব্দে ফিরে আসে, শরীরের আগের জায়গায় বা মূল জায়গা থেকে অন্যত্র ছড়িয়েও পড়ে। এই জন্যই ফলোআপ জরুরি। ফলোআপের সময়ে চিকিৎসক নিজে পরীক্ষা করার পরে প্রয়োজন মতো কয়েকটি শারীরিক টেস্ট করতে দেন। ফলাফলে অস্বাভাবিক কিছু পেলে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা যায়।

স্টেজ বনাম নেচার

ক্যানসার সম্পর্কে বলা হয়, যত তাড়াতাড়ি রোগ ধরা পড়বে এবং চিকিৎসা শুরু হবে, তত তাড়াতাড়ি সেরে ওঠা সম্ভব। “এ কথা সত্যি। তবে ক্যানসারের দুটো বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, প্রথমত কোন স্টেজ, দ্বিতীয়ত, এর চরিত্র বা নেচার (ডাক্তারি পরিভাষায় বায়োলজিক্যালি অ্যাগ্রেসিভ)। আর্লি স্টেজে ধরা পড়ল কিন্তু চরিত্র অ্যাগ্রেসিভ, সে ক্ষেত্রে রোগমুক্তির পরে আবার শরীরে ক্যানসার ফিরে আসার সম্ভাবনা বেশি। আবার এ-ও দেখা যায় দেরি করে ধরা পড়া ক্যানসার অ্যাগ্রেসিভ না হওয়ায় মানুষটি ক্যানসারমুক্ত হয়ে দীর্ঘ জীবন যাপন করলেন,” বললেন ডা. মুখোপাধ্যায়। বায়পসি, পেট স্ক্যান, ম্যামোগ্রাফি, সোনোগ্রাফি ইত্যাদি প্রয়োজন মতো বিভিন্ন পরীক্ষার ফলাফল, রোগীর বয়স, তাঁর প্রতিরোধ ক্ষমতা, শারীরিক পরিস্থিতি ইত্যাদি বেশ কিছু বিষয় একসঙ্গে দেখে ধারণা করা যেতে পারে দ্বিতীয়বার ক্যানসার ফিরে আসার আশঙ্কা কতটা।

লাং, প্যানক্রিয়াস, লিভার, ব্রেন ক্যানসার বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অ্যাগ্রেসিভ। এই প্রসঙ্গে ডা. মুখোপাধ্যায় বললেন, “সব ক্যানসার রোগীকে একই রকম চিকিৎসা দেওয়া হবে, সার্জারি করা হবে, রেডিয়েশন দেওয়া হবে, তা নয়। ক্যানসারের চরিত্র, রোগীর বয়স ও তাঁর শারীরিক পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রত্যেকটা কেস আলাদা ভাবে দেখা হয়। ব্যক্তি অনুযায়ী চিকিৎসা করা হয়, তাই রেজাল্টও ভাল হয়।”

স্তন ক্যানসারে এগিয়ে ভারতীয় মহিলারা

ভারতীয় মহিলারা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন স্তন ক্যানসারে। এই প্রসঙ্গে ডা. মুখোপাধ্যায় বললেন, “স্তন ক্যানসারের ক্ষেত্রে যদি দেখা যায় ইআর/পিআর (ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরন) পজ়েটিভ, এইচইআর২ নেগেটিভ তাহলে ক্যানসার থেকে রোগীর সেরে ওঠার সম্ভাবনা বেশি। কিন্তু ইআর/পিআর নেগেটিভ থাকলে পুনরায় ক্যানসার ফিরে আসার সম্ভাবনা বেশি, এমনকি আর্লি স্টেজে ধরা পড়লেও। কিছু ক্ষেত্রে হরমোনাল থেরাপির মাধ্যমে স্তন ক্যানসার সারিয়ে তোলা যায়। এ ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় ধরে ওষুধ খেতে হয়। কিন্তু ইআর/পিআর নেগেটিভ হলে হরমোনের ওষুধ খেয়ে লাভ নেই।” স্তন ক্যানসারের ক্ষেত্রেও স্টেজ, চরিত্র ও বয়স গুরুত্বপূর্ণ। ৩২ বছরের স্তন ক্যানসারের রোগীর যে ভাবে চিকিৎসা হবে, ৮০ বছর বয়সির তা হবে না। যেমন ফলোআপ পিরিয়ডে ৪০-৪৫ বছর বয়সিদের ম্যামোগ্রাফি এবং এর চেয়ে কমবয়সিদের সোনোগ্রাফি করার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা, সঙ্গে চেস্ট এক্সরে। স্তন ক্যানসার থেকে লাং, লিভারে ক্যানসার ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। তাই ফলোআপ বড্ড জরুরি।

প্রিভেনটিভ অঙ্কোলজি

কিছু বছর আগে হলিউড তারকা অ্যাঞ্জেলিনা জোলি প্রকাশ্যে এনেছিলেন, তাঁর দিদিমা, মা, মাসি অনেকেরই ক্যানসার হয়েছিল। অ্যাঞ্জেলিনা জেনেটিক টেস্টিং করে দেখেছিলেন তিনি বিআরসিএ-১ জিন বহন করছিলেন। এতে তাঁর স্তন ক্যানসারের সম্ভাবনা রয়েছে ৮৭ শতাংশ আর ডিম্বাশয়ের ক্যানসারের আশঙ্কা ৫০ শতাংশ। ক্যানসারের ঝুঁকি এড়াতে তিনি প্রথমে অস্ত্রোপচার করে বাদ দিয়েছিলেন তাঁর দুটি স্তন, দু’বছর বাদে বাদ দিয়েছেন ডিম্বাশয় ও ফ্যালোপিয়ান টিউব দু’টি।

ডা. গৌতম মুখোপাধ্যায় বললেন, “ফ্যামিলি হিস্ট্রি থাকলে সচেতন হতে হবে, কিন্তু থাকলেই যে রোগটা হবেই, সেটা নিশ্চিত করে বলা যায় না। কারণ ক্যানসার হওয়ার পিছনে জেনেটিক কারণ ৫ থেকে ১০ শতাংশ দায়ী। তবুও একটা চান্স থেকে যায়। তাই ৪০ থেকে ৪৫-এর পরে সব মহিলারই বছরে একবার ম্যামোগ্রাফি করলে ভাল। অ্যাঞ্জেলিনা যেটা করেছিলেন তাকে বলে প্রিভেনটিভ অঙ্কোলজিক্যাল সার্জারি, যা ক্যানসার আটকাতে অনেকটাই সাহায্য করে। দুর্ভাগ্য, এই ব্যবস্থা আমাদের দেশে খুব একটা শুরু হয়নি।”

ক্যানসারের বাড়বাড়ন্তের জন্য জীবনযাত্রা অনেকটা দায়ী। “যাঁরা অতিরিক্ত ধূমপান, মদ্যপান করেন, পান-গুটখা খান, ওবেসিটি আছে, তাঁদের সচেতন হওয়া জরুরি। বছরে একবার ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে কয়েকটা শারীরিক পরীক্ষা করে নিলে নিশ্চিন্ত থাকা যায়। ফ্যামিলি হিস্ট্রিতে ক্যানসার বা বিরল কোনও রোগ থাকলে ডাক্তারকে জানানো উচিত। কিন্তু দুর্ভাগ্য, আমাদের এখানে এই সচেতনতা অধিকাংশেরই নেই। এমনকি পরীক্ষার কথা প্রেসক্রিপশনে লিখে দিলেও অনেকেই অবজ্ঞা করেন,” বললেন ডা. মুখোপাধ্যায়।

ক্যানসার পুনরায় ফিরে আসবে, এ কথা যেমন চিকিৎসকেরা বলতে পারেন না, তেমন ফিরে আসার সম্ভাবনা একেবারে শূন্য, তা-ও বলা যায় না। তাই অবহেলা না করে সচেতন হওয়া জরুরি।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Cancer

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।