দেশে ক্যানসার আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ক্যানসারে মৃতের সংখ্যাও। প্রতি পাঁচ জন ক্যানসার আক্রান্তের মধ্যে তিন জনেরই মৃত্যু হয়। সমীক্ষায় এমনই দাবি করেছে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)। ২০২২ থেকে চালানো সমীক্ষায় দাবি করা হয়েছে, দেশে প্রতি ১ লক্ষ জনের মধ্যে ক্যানসারে মৃতের সংখ্যা ৬৪.৭ থেকে বেড়ে প্রায় ১০৯.৬ জনে পৌঁছবে। ২০৫০ সালের মধ্যে তা বিপদসীমা ছাড়িয়ে যাবে।
মেডিক্যাল জার্নাল ‘দ্য ল্যানসেট’-এ এই সমীক্ষার খবর ছাপা হয়েছে। জানানো হয়েছে, ক্যানসার আক্রান্ত রোগীদের সংখ্যায় বিশ্বে তিন নম্বর জায়গায় রয়েছে ভারত। বিশ্ব জুড়ে ক্যানসার রোগীদের সংখ্যা কত, মৃত্যুহার কতটা বাড়ছে এই নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করে ‘গ্লোবাল ক্যানসার অবজ়ারভেটরি’। তাদের তথ্যই জানাচ্ছে, ক্যানসারে মৃত্যুর হার ক্রমাগাত বেড়ে চলেছে ভারতে। ফুসফুসের ক্যানসার, স্তন ক্যানসারে আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেশি। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন মহিলারাই। ক্যানসারের কারণে মহিলাদের মৃত্যুহার প্রতি বছর প্রায় ৪ শতাংশ করে বেড়ে চলেছে, যেখানে পুরুষদের মধ্যে তা ২.৪ শতাংশের কাছাকাছি।
গত ১০ বছরে মহিলাদের মধ্যে স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা জরায়ু ক্যানসারের তুলনায় বেড়েছে। বছর দশেক আগে স্তন ক্যানসারে আক্রান্তের হার ছিল ১২ শতাংশ। তা এখন প্রায় ২০ শতাংশ। এর নেপথ্যে রয়েছে দেরিতে সন্তানধারণ, গর্ভনিরোধক ওষুধ খাওয়া, ফাস্ট ফুড খাওয়া এবং স্তন্যপান না করানো। দীর্ঘ দিন ধরে পেটের সমস্যা, ওজন বৃদ্ধি, হজমের গোলমাল, ঋতুস্রাবের পরে রক্তপাত, অনিয়মিত ঋতুস্রাবের মতো সমস্যা দেখা গেলে তা উপেক্ষা করেন মহিলারা। এমন ক্ষেত্রে অসচেতনতাই ক্যানসার বৃদ্ধির অন্যতম বড় কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।
তামাক সেবন ও দূষণের কারণে পুরুষদের মধ্যে ফুসফুসে ক্যানসার বেড়েছে। প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে মুখের ক্যানসারের। অন্য দিকে, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাত্রার কারণে গত কয়েক বছরে পাকস্থলী, বৃহদন্ত্রের ক্যানসারে আক্রান্তের হারও বেড়েছে। আইসিএমআরের সমীক্ষায় আরও একটি উদ্বেগজনক তথ্য রয়েছে, তা হল ক্যানসারে আক্রান্তের হার শিশুদের মধ্যেও বেড়ে চলেছে। এর নেপথ্যে আছে অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভাস ও শরীরচর্চা না করা। এখনকার শিশুরাও সুষম খাবারের বদলে প্রক্রিয়াজাত খাবার খেতে অভ্যস্ত হয়ে উঠছে। এই সব খাবারে এমন কিছু রাসায়নিক থাকে, যা ক্যানসারের আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়। অনেক নামী ব্র্যান্ডে যে সব প্রক্রিয়াজাত মাংস দিয়ে সসেজ, বার্গার তৈরি হচ্ছে, সেই মাংসের স্বাদ বাড়াতে প্রাণীদের বিশেষ হরমোন ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়। এই হরমোন মানুষের শরীরে ঢুকলে মানবশরীরের স্বাভাবিক হরমোনের ভারসাম্য বিগড়ে দিতে পারে। তাই ছোট থেকেই খাওয়াদাওয়ায় নিয়ন্ত্রণ জরুরি।
ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে বয়স ত্রিশ পেরোলে কিছু স্ক্রিনিং টেস্ট করিয়ে রাখা জরুরি। যেমন, মহিলাদের প্রতি মাসে নিজের স্তন পরীক্ষা, প্রতি বছর ম্যামোগ্রাম টেস্ট, প্যাপ টেস্ট করানো জরুরি। পুরুষদের ‘পিএসএ টেস্ট’ বা ‘প্রস্টেট স্পেসিফিক অ্যান্টিজেন টেস্ট’ করিয়ে রাখা ভাল।