চেয়ার-টেবিলে বসে কাজের পরিমাণ যত বাড়ছে, ততই ওবেসিটি এবং ডায়াবিটিসের মতো সমস্যার আধিক্য দেখা যাচ্ছে। এমন যুগে ব্যায়ামের কোনও বিকল্প নেই। হাঁটাহাঁটি, দৌড়নো, জিমে যাওয়া, অথবা যোগাভ্যাস, নানা রকমের শরীরচর্চার নানাবিধ উপকার। কিন্তু কোনও কিছুই যে অতিরিক্ত ভাল নয়। মাত্রা ছাড়ানো ব্যায়ামেরও অনেক ক্ষতি রয়েছে। আর এখন সমাজে নতুন দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে অতিরিক্ত ব্যায়াম। এমন সময়ে আপনারও বিরতি নেওয়া উচিত। এ কথা ঠিক যে, শরীরকে সক্রিয় রাখলে মানসিক সমস্যার হাত থেকে অনেকখানি মুক্তি পাওয়া যায়, এবং শারীরিক সুস্থতার ক্ষেত্রে তো কার্যকরী বটেই। কিন্তু জানেন কি, কত মানুষ ইন্টারনেটের কাছে অতিরিক্ত ব্যায়ামের অপকারিতার বিষয়ে জানয়ে চান? ‘গুগল ট্রেন্ড’-এর তথ্য অনুসারে, ‘আমি কি অতিরিক্ত ব্যায়াম করছি’, এই বিষয়ে খোঁজ করার পরিমাণ গত মাসে, অর্থাৎ মার্চে ৯,৯০০ শতাংশ বেড়েছে।
আরও পড়ুন:
হয়তো জীবনযাপনে বদল আনার জন্য স্বাস্থ্যকর রুটিন তৈরি করেছেন, কিন্তু কখনও কখনও নিজেদের উপর প্রয়োজনের চেয়ে বেশি চাপ দিয়ে ফেলছেন কেউ কেউ। আমেরিকার চিকিৎসক মাইক কোকসিস বলছেন, ‘‘অতিরিক্ত ব্যায়ামের সবচেয়ে বিপজ্জনক দিক হল, বেশির ভাগ মানুষই বুঝতে পারেন না যে, তাঁরা বেশি শরীরচর্চা করছেন।’’ অতি ব্যায়ামের ফলে হৃদপিণ্ডের কার্যকারিতা থেকে শুরু করে হাড়ের ঘনত্ব, সব কিছুতে প্রভাব পড়ে।
দুবাইয়ের মেডিসিনের চিকিৎসক আবির আল আফিফি এমন কয়েকটি লক্ষণের কথা বলছেন, যা দেখে বুঝবেন, আপনি অতিরিক্ত ব্যায়াম করছেন। বিরতির প্রয়োজন আপনার শরীরের।

মহিলারা যদি অতিরিক্ত ব্যায়াম করেন, তা হলে ঋতুস্রাব অনিয়মিত হতে পারে, অথবা বন্ধও হয়ে যেতে পারে। ছবি: সংগৃহীত।
কী কী সেই ৫টি লক্ষণ?
ওজন বৃদ্ধি
আবির আল আফিফি বলছেন, ‘‘অস্বাভাবিক মনে হতে পারে, কিন্তু অতিরিক্ত জিম করলে ওজন বাড়তে পারে। কঠোর পরিশ্রম সত্ত্বেও কর্মক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে। এর কারণ হল, শরীর পর্যাপ্ত সময় পাচ্ছে না বিশ্রামের। এর ফলে বিপাক ক্রিয়ার গতি কমে যেতে পারে, যা ওজন হ্রাসের পদ্ধতিতে বাধা দিতে পারে।’’
হরমোনের ভারসাম্যে ব্যাঘাত
প্রবল শরীরচর্চা বা দীর্ঘ ক্ষণের ব্যায়ামের শরীরের কর্টিসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। ক্রমাগত উচ্চ কর্টিসল নিঃসরণ হতে থাকলে থাইরয়েডের কার্যকারিতা ব্যাহত করে। টিথ্রি-র মাত্রা হ্রাস করে এবং ওজন বৃদ্ধি হতে থাকে, চুল পাতলা হয়ে যায় এবং মস্তিষ্ক সুস্থ ভাবে চিন্তা করার ক্ষমতা হারায়।
ঘুমের ব্যাঘাত
শরীরকে সক্রিয় রাখলে ঘুম ভাল হয়। কিন্তু অতি সক্রিয় রাখলে এর ঠিক বিপরীত ঘটনা ঘটতে পারে। হয় ঘুম আসেই না, নয়তো রাতে বার বার ঘুম ভেঙে যায়। তার কারণ অতিরিক্ত ব্যায়ামের ফলে স্ট্রেস হরমোনের (কর্টিসল) মাত্রা সব সময়ে উপরের দিকে থাকে। কর্টিসলের কারণে নিদ্রায় ব্যাঘাত ঘটা খুবই স্বাভাবিক। আর এর ফলে অতি শরীরচর্চার পরও বিশ্রাম পায় না শরীর।
অনিয়মিত ঋতুস্রাব
মহিলারা যদি অতিরিক্ত ব্যায়াম করেন, পাশাপাশি শরীরে চর্বির পরিমাণ যদি কম থাকে এবং যদি ক্যালোরির ঘাটতি থাকে, তা হলে হাইপোথ্যালামিক-পিটুইটারি-গোনাডাল অ্যাক্সিস (এন্ডোক্রাইন সিস্টেমের গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা প্রজনন এবং যৌন বিকাশ নিয়ন্ত্রণ করে) বাধা পায়। এর ফলে ঋতুস্রাব অনিয়মিত হতে পারে, অথবা বন্ধও হয়ে যেতে পারে। এই সঙ্কেতের মাধ্যমে শরীর আপনাকে বোঝাতে চায়, আপনাকে এ বার বিরতি নিতে হবে।
যৌন-ইচ্ছা কমে যাওয়া, ক্লান্তি-অবসাদ
শরীর প্রয়োজনীয় বিশ্রাম না পেলে মন-মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। চিকিৎসক জানাচ্ছেন, অতিরিক্ত ব্যায়ামের সাধারণ প্রাথমিক লক্ষণগুলি হল, সারা ক্ষণের ক্লান্তি, বদমেজাজ এবং বিশ্রাম নেওয়ার পরেও দুর্বলতা এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস। খুব বেশি জিম করলে টেস্টোস্টেরনের উৎপাদন কমে যায়। তার ফলে ব্যক্তির (পুরুষ হোন বা মহিলা) যৌন ইচ্ছা কমে যায়, পেশি ক্ষয়ে যায়, চরম ক্লান্তি এবং বিষণ্ণতা দেখা দেয়।
আঘাত পাওয়া বেড়ে যায়
অতিরিক্ত ব্যায়ামের কারণে ক্লান্তি, আর ক্লান্তির ফলে অসুস্থতা এবং আঘাতের ঝুঁকি বেড়ে যায়। ঘন ঘন অসুস্থ হওয়া এবং গাঁটে ব্যথার মতো সমস্যা দেখা দেয় অনেক বেশি। গড়পড়তা জিম-প্রেমী এবং ফিটনেস নিয়ে মাতামাতি করা মানুষদের মধ্যেই এই লক্ষণগুলি বেশি দেখা যায়।