৮৯ বছর বয়স, কে বলবে! এই বয়সেও তরতাজা বলিউডের ‘হিম্যান’। সম্প্রতি সুইমিং পুলে নেমে ব্যায়াম করার একটি ভিডিয়ো ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করেছেন ধর্মেন্দ্র। আর সেই ভিডিয়ো দেখে অবাকই হয়েছেন সকলে। নব্বই ছুঁইছুঁই বয়সে রীতিমতো ‘পুল এক্সারসাইজ়’ করছেন তিনি। পিছনে দাঁড়িয়ে হাত ও পায়ের নানা রকম কসরত শিখিয়ে দিচ্ছেন তাঁর প্রশিক্ষক। যে বয়সে হাঁটু ব্যথা, কোমর ব্যথায় শয্যা নেন অনেক বৃদ্ধই, সেই বয়সে ধর্মেন্দ্রকে জলের ব্যায়াম করতে দেখে অনুপ্রেরণা পেয়েছেন প্রবীণেরাই। এই ধরনের ব্যায়াম বয়স্কদের জন্য কতটা উপকারী?
পাবমেড থেকে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে জানানো হয়েছে বয়স্কদের জন্য জলের ব্যায়াম খুবই কার্যকরী। একে বলা হয় ‘অ্যাকোয়া অ্যারোবিক থেরাপি’। পা বা কোমর ব্যথার কারণে যাঁরা শরীরচর্চা করতে পারছেন না, তাঁরা নিশ্চিন্তে জলে নেমে ব্যায়াম করতে পারেন। কেন জলের ব্যায়াম বয়স্কদের জন্য সুবিধাজনক, সে ব্যাখ্যাও দিয়েছেন গবেষকেরা। মাটিতে দাঁড়িয়ে যখন শারীরিক কসরত করা হয়, তখন শরীরের উপরে মাধ্যাকর্ষণ বলের প্রভাবও কাজ করে। গবেষকেরা জানাচ্ছেন, কেউ যখন ওজন তুলে ব্যায়াম করছেন, তখন শরীর যতটা না পরিশ্রম করছে, তার চেয়েও দ্বিগুণ কসরত করতে হচ্ছে মাধ্যাকর্ষণের বিরুদ্ধে সেই ওজনটিকে উপরে তুলতে। সে জন্যই এই ধরনের ব্যায়ামে পরিশ্রম ও কষ্ট, দুটোই বেশি হয়। বয়স্কদের ক্ষেত্রে তা করা সম্ভব নয়। তাই তাঁদের জন্য স্ট্রেংথ এক্সারসাইজ মানেই হল ‘পুল অ্যারোবিক্স’। জলে নামলে শরীরের ওজন কম মনে হয়, যাঁর ওজন ৬০ কেজি তিনি জলে নামলে মনে হবে, ওজন অর্ধেক হয়ে গিয়েছে। ওই অবস্থায় ব্যায়াম করলে শরীরের উপর বেশি চাপ পড়বে না।
আরও পড়ুন:
ধরা যাক, যিনি হাঁটুর ব্যাথায় পা তুলতে পারছেন না, তিনি যদি জলে নেমে সাধারণ পা ছোড়াছুড়ি করেন, তাতেও কার্ডিয়ো করার মতোই ব্যায়াম হবে। এতে হাঁটু ও শরীরের অস্থিসন্ধিগুলির জোর বাড়বে। বয়সকালে শরীরের ভারসাম্য কমে যায়, তাই জলে নেমে ব্যায়াম করা সুবিধাজনক। ধীরে ধীরে সাঁতার ও পুল অ্যারোবিক্স নিয়ম মেনে প্রশিক্ষকের সাহায্য নিয়ে করতে পারলে হার্ট ও ফুসফুসের ব্যায়ামও হয়ে যায়।

অ্যাকোয়া অ্য়ারোবিক্স। ছবি: ফ্রিপিক।
জলে কোন ব্যায়ামগুলি করতে পারবেন বয়স্কেরা?
আর্ম কার্লস
পুলের মাঝামাঝি দাঁড়াতে হবে। জল যেন বুক অবধি থাকে। এ বার দুই হাতে ওজন নিয়ে বা না নিয়ে, হাত এক বার উপরে তুলতে হবে, তার পর নীচে নামাতে হবে। তা ছাড়া হাত উপরে তুলে কাঁধ বরাবর ঘড়ির কাঁটার দিকে ও বিপরীতে ঘোরাতে হবে।
অ্যাকোয়া ওয়াকিং
জলের ভিতরে ধীরে ধীরে হাঁটতে হবে। ৫ থেকে ১০ মিনিট হাঁটার পরে শরীর সয়ে গেলে, কোনও কিছু ধরে দাঁড়িয়ে স্পট জগিং করতে পারেন।
চেস্ট ফ্লাই
জলে দাঁড়িয়ে দুই হাত দু’পাশে প্রসারিত করতে হবে। এ বার ধীরে ধীরে হাত দুটো দু’পাশ থেকে সামনের দিকে আনতে হবে। কিছু ক্ষণ রেখে আবার আগের অবস্থানে যেতে হবে। এ ভাবে ৫-১০টি সেট করলে বুকের ব্যায়াম হবে। এই ব্যায়ামে হার্ট ও ফুসফুস ভাল থাকবে।
অ্যাকোয়া সাইক্লিং বা স্পিনিং
জলের নীচে সাইক্লিং করা খুব ভাল ব্যয়াম। জিমে যে শরীরচর্চা ম্যাটে শুয়ে পা উপরে তুলে করতে হত, এখানে সেটা উল্টো ভাবে করতে হবে। সাইকেলে যে ভাবে প্যাডেল করা হয়, সে ভাবেই জলের নীচে করার চেষ্টা করলেই ধীরে ধীরে শরীর ভেসে উঠবে।
লেগ লিফ্ট
জলে দাঁড়িয়ে কিছু ধরে নেবেন। তার পর এক পা তুলে ১০ সেকেন্ড রেখে নামিয়ে নিতে হবে। একই ভাবে অন্য পা-ও তুলতে হবে। এই ভাবে দুই পা পর্যায়ক্রমে ওঠা-নামা করলে সারা শরীরেরই ব্যায়াম হবে।