কাশি থামার লক্ষণ নেই কিছুতেই। অ্যান্টিবায়োটিক, কাফ সিরাপ, অ্যান্টি-অ্যালার্জিকের প্রভাবে কিছু দিন চাপা পড়ে থাকছে, এই যা। কিন্তু পুরোপুরি সারছে না। রাতবিরেতে শ্বাসকষ্টও খুব ভোগাত। ঘুমের মধ্যে দরদর করে ঘাম হত। হৃদ্রোগ হল নাকি, এই ভেবে চিকিৎসকের কাছে যেতেই চক্ষু চড়কগাছ হল কিশোরী ও তার পরিবারের লোকজনের। জানা গেল, হার্টের অসুখ নয়, ফুসফুসেরই বিরল রোগে আক্রান্ত হয়েছে বছর সতেরোর মেয়েটি। এই অসুখের নাম ‘পপকর্ন লাংস’।
আমেরিকার নেভাডার বাসিন্দা ওই কিশোরীর নাম ব্রায়ান কালেন। লকডাউন পর্বে করোনায় আক্রান্ত হয়েছিল সে। পরে ফুসফুসের সংক্রমণ ধরা পড়ে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, গত তিন বছর ধরেই ফুসফুসের রোগ বাসা বাঁধছিল নীরবে। সংক্রমণ ঘটেছিল শ্বাসনালিতে। গোটা ফুসফুস জুড়েই ছোট ছোট সিস্ট তৈরি হয়েছিল। শ্বাসকষ্ট থেকে হাঁপানিও দেখা দেয় তার।
‘পপকর্ন লাংস’ কেন হয়?
আমেরিকান লাং অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য বলছে, ফুসফুসের এই রোগ বিরল। একে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় ‘ব্রঙ্কিয়োলাইটিস অবলিটেরানস’। যাঁরা প্রচণ্ড ধূমপান করেন অথবা ধুলো-ধোঁয়া বেশি রয়েছে এমন জায়গায় থাকেন, তাঁদের এই রোগ দেখা দেয়। পপকর্ন লাংস রোগটির নাম এসেছে পপকর্ন ফ্যাক্টরি থেকে। যাঁরা মাইক্রোঅয়েভে পপকর্ন তৈরি করেন, তাঁরা এই রোগে ভুগতেন। পপকর্ন তৈরির সময়ে ডায়াসিটাইল নামে এক ধরনের রাসায়নিক নির্গত হয়, যা ফুসফুসে মারাত্মক সংক্রমণ ঘটায়। এই রোগের উপসর্গ হল শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, সারা শরীরে কাঁপুনি, জ্বর, বমি ভাব ও প্রচণ্ড দুর্বলতা।
আরও পড়ুন:
নেভাডার ওই কিশোরী ১৪ বছর বয়স থেকে ই-সিগারেটের নেশা করত। আর সেই থেকেই তার ওই রোগ ধরেছে বলেই জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। সিগারেটের বিকল্প হিসেবে সাধারণ সিগারেটের বিকল্প হিসেবে ‘ইলেক্ট্রনিক নিকোটিন ডেলিভারি সিস্টেম’ (এন্ডস) বা ‘ইলেক্ট্রনিক সিগারেট’ ব্যবহার করে এমন সমস্যায় পড়েছেন অনেকেই। ফাইবার বা প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি এই ব্যাটারিচালিত যন্ত্রগুলির মধ্যে একটি প্রকোষ্ঠ থাকে। তার মধ্যে ভরা থাকে বিশেষ ধরনের তরল মিশ্রণ। যন্ত্রটি গরম হয়ে ওই তরলের বাষ্পীভবন ঘটায় এবং ব্যবহারকারী সেই বাষ্প টেনে নেন ফুসফুসে। এই পদ্ধতিকে বলে ‘ভেপিং’। এই বাষ্পেই মিশে থাকে অ্যাসিটালডিহাইড নামে এক ধরনের যৌগ, যা ফুসফুস ছারখার করে দেয়। ই-সিগারেটের তরল মিশ্রণ (ই-লিকুইড)-এর মধ্যে থাকে প্রপেলিন গ্লাইসল, গ্লিসারিন, পলিইথিলিন গ্লাইসল, নানাবিধ ফ্লেভার এবং নিকোটিন, যা ফুসফুসের ক্যানসারের কারণও হয়ে উঠতে পারে।