প্রসাধনী থেকে খাবার-দাবার— সবেতেই মিশছে রাসায়নিক। কোনও কিছুই যেন আর নিরাপদ নয়। নতুন এক গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, শিশুদের শোয়ার জন্য যে নরম গদি কেনা হয়, তাতেও নাকি রাসায়নিকের ছড়াছড়ি। সেই সব রাসায়নিক বিছানাপত্র থেকে শিশুর শরীরেও ঢোকে।
ইউনিভার্সিটি অফ টরন্টোর গবেষকেরা শোয়ার গদিতে কী কী রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়, সে নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরেই গবেষণা করছিলেন। তাঁরা দাবি করেছেন, ফোমের গদি নরম ও টেকসই রাখার জন্য নানা ধরনের রাসায়নিকের প্রয়োগ হয়। যেমন— ফায়ার রিটার্ডেন্ট, অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল এজেন্ট, ইউভি ফিল্টার ও পলিমার। নতুন গদি কিনলে এই সব রাসায়নিক শরীরে ঢুকে শ্বাসকষ্ট ও অ্যালার্জির কারণ হতে পারে।
‘এনভায়রমেন্ট সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’ জার্নালে এই গবেষণার খবর প্রকাশিত হয়েছে। ইউনিভার্সিটি অফ টরন্টোর ‘আর্থ অ্যান্ড সায়েন্স’ বিভাগের গবেষক মিরিয়াম ডায়মন্ড জানিয়েছেন, ৬ থেকে ১৪ বছর বয়সিদের শোয়ার গদি পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, বেশির ভাগ শিশুই অ্যালার্জিজনিত রোগের শিকার। তাদের বিছানা থেকে এমন সব রাসায়নিক পাওয়া গিয়েছে, যা ফুসফুসের জন্য বিষ। এই সব রাসায়নিক দিনের পর দিন শরীরে ঢুকলে মাথা ঘোরা, বমি ভাব, শ্বাসকষ্ট, শ্বাসনালীর প্রদাহ জনিত রোগ হতে পারে। পাশাপাশি, বিভিন্ন রকম ব্যাক্টেরিয়া ও ছত্রাকের সংক্রমণও হতে পারে।
আরও পড়ুন:
গবেষণায় আরও দেখা গিয়েছে গদিকে জীবাণুমুক্ত রাখতে এমন কীটনাশক মেশানো হয়, যা শিশুর শরীরে ঢুকলে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে। স্নায়ুর জটিল রোগের আশঙ্কাও বাড়তে পারে। গদিতে থ্যালেট নামে আরও এক ধরনের রাসায়নিকের খোঁজ পাওয়া গিয়েছ্ যা প্লাস্টিক তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। এই জাতীয় রাসায়নিক প্লাস্টিকের কৌটো, শ্যাম্পু, কয়েক ধরনের প্রসাধনীতেও থাকে। তা ছাড়া অ্যান্টিমনি, বেরিয়াম, ব্রোমিন, ক্যাডমিয়াম, সেলেনিয়ামের মতো বিপজ্জনক রাসায়নিক উপাদাও পাওয়া গিয়েছে, যেগুলি শিশুর শরীরে দিনের পর দিন ঢুকতে থাকলে, মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতাই নষ্ট হয়ে যাবে।
ফোম দেওয়া গদির বদলে তাই তুলোর গদি কিনতে বলছেন গবেষকেরা। তুলো দিয়ে তৈরি গদি কম ক্ষতিকারক, এতে হাওয়া চলাচলও করে এবং পরিবেশবান্ধব। শিশুদের জন্য বিছানা কেনার আগে তাই সতর্ক থাকারই পরামর্শ দিচ্ছেন গবেষকেরা।