চৈত্র-শেষের জ্বালাধরানো গরমে সুস্থ থাকতে দেওয়া হয়েছে একগুচ্ছ নিদান। রয়েছে পরিমিত আহারের পরামর্শও। কিন্তু কব্জি ডুবিয়ে খেতে পেটুক বাঙালির এমনিতেই কোনও অজুহাত লাগে না। আর পয়লা বৈশাখ আসছে। বৈশাখের প্রথম দিনে ভূরিভোজ না হলে কি আর বাঙালির রসনা তৃপ্তি হয়! তাই গরমকে যতই তুড়ি মেরে ওড়ানোর চেষ্টা করুন না কেন, পেট কিন্তু সে কথা শুনবে না। একে গরম, তার উপরে তেল-ঝাল-অম্বল খেলে পেটের অবস্থা বেহাল হবেই। বদহজমে বর্ষবরণের আনন্দই মাটি হবে। তাই আগে থেকেই পেট ঠান্ডা করে রাখা জরুরি।
গরমে পেট ঠান্ডা রাখতে পুষ্টিবিদেরা নানা রকম ডিটক্স পানীয় খাওয়ারই পরামর্শ দিচ্ছেন। কোনওটি ফলের কুচি দিয়ে, কোনওটা আবার নানা রকম সব্জি জলে ভিজিয়ে। কিন্তু এই ব্যস্ততার সময়ে এত রকম ডিটক্স পানীয় তৈরি করা সম্ভব হয় না অনেক সময়েই। তার উপর বাড়ির বড়রা এমন হরেক রকম ডিটক্স পানীয় খেতেই চাইবেন না। গরমের কথা মাথায় রেখে চিরন্তন আমপোড়া শরবত বা ডাবের জলের পাশাপাশি বেলের পানার কথা ভুলে গেলে চলবে না। আগেকার সময়ে মা-ঠাকুরমারা পেট ভাল রাখতে বেলের শরবতই বানিয়ে দিতেন। তখন এত রকম ডিটক্ট পানীয়ের রমরমা ছিল না। বলা হত, বেল খেলে নাকি গায়ে রোদের তেজ লাগবে না। আবার কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থাকলে তা-ও দূর হবে। কাজের ফাঁকে এক গ্লাস বেলের শরবত খেলে নিমেষে শরীর-মন চাঙ্গা হয়ে উঠবে।
বেলের গুণের কথা বলে শেষ করা যাবে না। এতে আছে ভিটামিন, আছে ফাইবারও। বেলের আবার অ্যান্টি-ব্যাক্টেরিয়াল গুণও আছে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে নানা জীবাণুর সংক্রমণ থেকে রক্ষা করবে। এতে আছে ট্যানিন, যা পেটের গোলমাল হতে দেবে না। বেলে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট ও ফাইটোকেমিক্যাল রয়েছে, যা শরীরের প্রদাহ নাশ করতে পারে। গরমের সময়ে পেটফাঁপা, পেট ফুলে যাওয়ার সমস্যা বাড়ে। সেই সময়ে অ্যান্টাসিড না খেয়ে বরং বেলের শরবত খেলে উপকার হবে অনেক বেশি। দীর্ঘ সময়ে পেট ভর্তিও থাকবে এবং ভাজাভুজি খাওয়ার ইচ্ছাও কমবে। আলসারের সমস্যায় দীর্ঘ সময় ধরে যাঁরা ভুগছেন, তাঁরা যদি রোজ এক গ্লাস করে বেলের শরবত খান, তা হলে উপকার হবে।
আরও পড়ুন:
এখন মনে হতে পারে ডায়াবিটিসের রোগীরা কি বেল খেতে পারবেন? বলে রাখা ভাল, বেলের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স খুবই কম। তাই রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ করতেও এই ফলের জুড়ি মেলা ভার। বেল আবার ত্বকের জন্যও ভাল। গরমের সময়ে ত্বকে ব্রণ-ফুস্কুড়ির সমস্যা বাড়লে বেলের পানা খেয়ে দেখতে পারেন। এতে ত্বকের স্বাস্থ্য ভাল থাকবে।
বেলের শরবত তৈরির প্রণালী
একটা বেল ভেঙে নিন মাঝখান থেকে। ভিতর থেকে ফলের শাঁস বার করে আনুন। শাঁসটা ভাল করে চটকে মেখে বীজগুলো আলাদা করে নিন। তার পরে শাঁসের সঙ্গে ঠান্ডা জল মিশিয়ে ভাল ভাবে ঘেঁটে নিন। এ বার ছেঁকে নিন সেই মিশ্রণ। ছাঁকার পরে তরল যে রস পড়ে রইল তাতে অল্প চিনি মেশান। চিনি না খেলে দরকার নেই, গুড়ও দিতে পারেন। ভাল করে ঘেঁটে নিয়ে ফ্রিজে রেখে দিন ঘণ্টা দুয়েক। পরে গ্লাসে ঢেলে পরিবেশন করুন। দেওয়ার সময় এক চিমটি নুন দিয়ে ঘেঁটে নেবেন শরবতটি। চাইলে উপরে পুদিনাপাতাও ছড়িয়ে দিতে পারেন।