শারীরিক গঠনের কারণে মেয়েদের প্রস্রাবের সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি।
তলপেটের ব্যথা, বারবার বাথরুমে দৌড়ানো, জ্বালা ব্যথার সঙ্গে শীত শীত ভাব আর কাঁপুনি— এ সবই হল প্রস্রাবের সংক্রমণের প্রাথমিক উপসর্গ। শারীরিক গঠনের কারণে মেয়েদের প্রস্রাবের সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি। প্রতি পাঁচ জন পূর্ণ বয়সি মহিলার মধ্যে এক জন মূত্রনালীর সংক্রমণে কষ্ট পান। বিশ্বের প্রায় ১৫ কোটি মানুষ (নারী, পুরুষ, শিশু মিলিয়ে) প্রতি বছর প্রস্রাবের সংক্রমণে ভোগেন।
মূত্রথলি বা ইউরিনারি ব্লাডার থেকে ইউরেথ্রা বা মূত্রনালী নামক একটা সরু নলের মতো সূক্ষ্ম নালী দিয়ে প্রস্রাব শরীরের বাইরে আসে। মেয়েদের ইউরেথ্রা মাত্র তিন থেকে চার সেন্টিমিটার লম্বা। আর মলদ্বারের সংলগ্ন থাকায় চট করে ব্যাক্টেরিয়া ইউরেথ্রা দিয়ে সোজা ব্লাডারে পৌঁছে যায়। অন্য দিকে ছেলেদের ইউরেথ্রা বা মূত্রনালীর দৈর্ঘ্য ২০ সেন্টিমিটার। তাই তুলনামূলক ভাবে মেয়েদের মধ্যে প্রস্রাবের সংক্রমণের সম্ভাবনা বেশি। ইন্টেস্টিন বা অন্ত্রে ই-কোলাই ব্যাক্টেরিয়া থাকে যা মলের সঙ্গে বাইরে বেরোয়। মলদ্বার ও প্রস্রাবের জায়গা কাছাকাছি হওয়ায় সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে, জানালেন মূত্রনালী চিকিৎসক অমিত ঘোষ।
কেন হয় এই সংক্রমণ
ঠান্ডার সময়ে জল কম খেলে প্রস্রাবের সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। এ ছাড়া আরও কয়েকটি কারণে সংক্রমণ হতে পারে। খুব আঁটোসাঁটও অন্তর্বাস বা টাইট জিনস পরলে, অপরিচ্ছন্ন থাকলে, কুচো কৃমি থাকলে, দীর্ঘ ক্ষণ বাথরুমে না গেলে, মূত্রনালীর কোনও গঠনগত ত্রুটি থাকলে বার বার প্রস্রাবের সংক্রমণ হতে পারে।
কী করে বুঝবেন
কোভিড অতিমারির সময় জ্বর হলে সকলেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। কিন্তু ইউটিআই-এরও একটি উপসর্গ কাঁপুনি দিয়ে জ্বর। অমিত ঘোষ বললেন, ‘‘প্রস্রাবের সংক্রমণ জনিত জ্বর হলে সর্দি কাশি বা গলা ব্যথা থাকে না। শীত করে, প্রস্রাব করার সময়ে ব্যথা ও জ্বালা করে, তলপেটে ব্যথা করে, প্রস্রাবে দুর্গন্ধ হয়, প্রস্রাব ঘোলাটে বা লালচে হতে পারে। এ ছাড়া সামগ্রিক ভাবে দূর্বল লাগে, খেতে ভাল লাগে না, বমি হয় বা বমি বমি ভাব থাকে। এই ধরনের লক্ষণ দেখলে রুটিন ইউরিন টেস্ট ছাড়া ইউরিন কালচার এবং দরকার হলে আলট্রাসাউন্ড স্ক্যান, এক্সরে, ডিএমএসএ স্ক্যান করতে হতে পারে।’’
ঋতুবন্ধের পর মাঝবয়সি মহিলাদের মধ্যে প্রস্রাবের সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই এ ব্যাপারে কিছু সতর্কতা মেনে চলা উচিত। যেমন দীর্ঘ ক্ষণ প্রস্রাব চেপে রাখা ঠিক নয়। এর ফলে প্রস্রাবে থাকা জীবাণু বেড়ে গিয়ে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। অনেক সময় কোষ্ঠ্যকাঠিন্য থাকলে ইউটিআই এর ঝুঁকি বেড়ে যায়। নাইলন বা সিন্থেটিক অন্তর্বাস ইউরিন ইনফেকশনের সম্ভাবনা বাড়ায়। তাই সুতির হাল্কা অন্তর্বাস পরতে হবে। কৃমি থেকে প্রস্রাবের সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে তাই কৃমির চিকিৎসা করাতে হবে।
অমিত বললেন, ‘‘অনেক সময় কিডনিতে পাথর (কিডনি স্টোন) হলেও উপরের দিকের পেটে তীব্র ব্যথা হয় ও একাধিক বার প্রস্রাবের সংক্রমণ হয়। প্রস্রাব নালীর (ইউরেথ্রা) নীচ এবং উপর— দু’দিকেই সংক্রমণ হতে পারে। উপরের পেটে পাঁজরের নীচে ব্যথা অনেক সময়ে কিডনি স্টোনের কারণে হতে পারে। একসঙ্গে বমি বা বমি ভাব দেখা যায়। নীচের দিকে সংক্রমণ হলে প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত বেরোনর ঝুঁকি থাকে ও তলপেটে খুব ব্যথা করে। প্রস্রাবের সংক্রমণের কারণ যাই হোক না কেন, পর্যাপ্ত জল পান ও কমলালেবু ও ডাবের জল খেলে তাড়াতাড়ি রোগ সারে। পরিচ্ছন্নতা অসুখ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy