মানুষের দেহে রক্ত সংবহনে সাহায্য করে শিরা এবং ধমনী। ধমনীর মাধ্যমে অক্সিজেনযুক্ত বিশুদ্ধ রক্ত শরীরের প্রতিটি অঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে। অন্য দিকে শিরা দূষিত রক্ত বহন করে। তবে নানা ধরনের দূষণ, খাবারে থাকা ভেজাল বিশুদ্ধ রক্তে টক্সিনের মাত্রা বাড়িয়ে তুলতে পারে। সেই রক্তই শরীরে বিভিন্ন অঙ্গে সঞ্চালিত হলে বিবিধ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। সংক্রমণের মাত্রাও বেড়ে যেতে পারে। চিকিৎসকেরা বলছেন, রক্ত থেকে বিষাক্ত পদার্থ ছেঁকে বার করে দেওয়ার কাজ সম্পাদন করে লিভার এবং কিডনি। কিন্তু রক্তে টক্সিনের মাত্রা অতিরিক্ত হয়ে গেলে ছাঁকার কাজ সামাল দেওয়া সম্ভব হয় না। পুরো ব্যবস্থাই বিকল হয়ে পড়ে। রক্ত পরিশুদ্ধ করতে অনেক বাড়িতেই চিরতা ভেজানো জল খাওয়ার চল রয়েছে। এ ছাড়া কোন কোন খাবার খেলে রক্ত থেকে দূষিত পদার্থ দূর করা যেতে পারে?
আরও পড়ুন:
১) জল:
শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বার করতে দু’টি কিডনি ছাঁকনির কাজ করে। আর জল ছাড়া ছাঁকনি পরিষ্কার করার ভাল কোনও পন্থা হতে পারে না। পর্যাপ্ত পরিমাণে জল খেলে রক্তজালিকাগুলি প্রসারিত হয়। তার মধ্যে দিয়ে রক্তকণিকা স্বাভাবিক ভাবে প্রবাহিত হতে পারে। শরীরে জলের অভাব হলে ডিহাইড্রেশন হয়। যে কারণে এই অঙ্গ দু’টি বিকল হয়ে যেতে পারে। কে কতটা জল খাবেন বা যতটুকু জল খাচ্ছেন তার পরিমাপ আদৌ সঠিক কি না, সে বিষয়ে ধন্দ থাকতে পারে। তবে ‘ন্যাশনাল কিডনি অ্যাসোসিয়েশন’-এর দেওয়া তথ্য বলছে, দিনে ৬ কাপ পরিমাণ প্রস্রাব উৎপাদন হচ্ছে কি না, তা দেখলেই বুঝতে পারবেন, জল খাওয়ার পরিমাণ ঠিক আছে।
২) বিট:
খাবার এবং পানীয়ের মাধ্যমে শরীরে যেমন দূষিত পদার্থ জমে, তেমনই নানা ধরনের বিষাক্ত ধাতুও থাকে। অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট সমৃদ্ধ বিট কিন্তু এই সব অশুদ্ধ পদার্থ শরীর থেকে বার করে দিতে পারে। বিটের লাল রঙের নেপথ্যে যে উপাদানটি রয়েছে, সেটি ‘বিটালাইন’ নামে পরিচিত। এই উপাদানটিই রক্ত পরিস্রুত করতে সাহায্য করে। রক্ত সঞ্চালনও ভাল হয়। রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতেও সাহায্য করে সব্জিটি।
৩) গ্রিন টি:
কিডনির মতো লিভারও শরীরে জমা দূষিত পদার্থ ছাঁকতে সাহায্য করে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, সারা দিনে অন্ততপক্ষে চার কাপ গ্রিন টি খেলে লিভারে ফ্যাট জমার পরিমাণ কমে। পাশাপাশি, তা বিপাকক্রিয়া উন্নত করতেও সাহায্য করে। আবার, কিডনি ভাল রাখতে জবা ফুলের চায়েও চুমুক দেওয়া যায়।
আরও পড়ুন:
৪) পালং শাক:
রক্ত পরিস্রুত করতে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট, আয়রনের মতো উপাদান জরুরি। এ ছাড়া পালং শাকে ফাইবারও রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণে, যা শরীর থেকে টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে। পরিস্রুত রক্ত শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে পৌঁছোলে তারাও সঠিক ভাবে কাজ করতে পারে।
৫) কাঁচা হলুদ:
কাঁচা হলুদে ‘কারকিউমিন’ নামক একটি উপাদান রয়েছে। এই কারকিউমিন এক দিকে যেমন অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টে সমৃদ্ধ, অন্য দিকে তেমনই এতে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদানও রয়েছে। পরিমিত পরিমাণে কাঁচা হলুদ রক্তে যত ধরনের ‘টক্সিন’ রয়েছে তা দূর করতে সাহায্য করে। সেই সঙ্গে প্রদাহজনিত সমস্যাকেও নিয়ন্ত্রণে রাখে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা জোরদার করতেও কাঁচা হলুদ খেয়ে থাকেন অনেকে।