মুখরোচক, ভাজাভুজি খাবার ছোটদের অত্যন্ত পছন্দের। স্কুলের টিফিনে রুটি-তরকারি বা ফল দিয়ে দেখবেন, এক দিনের বেশি দু’দিন তা খেতে চাইবে না। চাউমিন, ম্যাগি বা পিৎজ়ার জন্য বায়না করবে। শিশুরা তো বটেই, তরুণদের মধ্যেও প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়ার প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। এই জাতীয় খাবার দোকানে, অনলাইনে সর্বত্র সহজলভ্য। ফলে স্বাস্থ্যের ঝুঁকি বাড়ছে। এখন যদি মনে করেন, এক দিনেই এই অভ্যাস ছাড়ানো যাবে, তা হলে সম্ভব নয়। বাড়িতে তৈরি খাবার জোর করে রোজ খাওয়ানোও মুশকিল। তা হলে উপায়?
জাঙ্ক ফুডের প্রতি ছোটদের এই আকর্ষণের কারণ হল— খাবারটি খুবই আকর্ষক ভাবে সাজানো থাকে। পরিবেশনও করা হয় সেই ভাবেই। দোকান থেকে কেনা বার্গার যে ভাবে সাজিয়ে দেওয়া হয়, বাড়িতে তৈরি স্যান্ডউইচ যদি সে ভাবেই সাজিয়ে শিশুর টিফিন বাক্সে ভরে দেন, তা হলে সে দিব্যি খাবে। অর্থাৎ, দেখতে যা ভাল লাগে, তার প্রতিই বেশি আকর্ষণ অনুভব করে ছোটরা, এমনটাই জানালেন পেরেন্টিং কনসালট্যান্ট পারমিতা মুখোপাধ্যায়। তাঁর মতে, বাইরের খাবারের নেশা ছাড়াতে হলে সবচেয়ে আগে শিশুকে সাজিয়ে-গুছিয়ে বাড়ির খাবার খাওয়াতে হবে। যেমন, রুটি যদি দেন, তার উপরে গাজর, শসা বা টম্যাটো দিয়ে চোখ-মুখ-নাকের মতো করে দিন। পাশে ছোট ছোট ফল কেটে সুন্দর করে সাজিয়ে দিন। সেই ভাবে থালায় সাজিয়ে দিলে সেই খাবারটি খুশি মনেই খাবে শিশু। টিফিনবাক্সে খাবারও তেমন ভাবেই গুছিয়ে দিন। ফল এমনি কেটে দিলে শিশু খাবে না, তার চেয়ে নানা রকম ফল দিয়ে ফ্রুট স্যালাড বানিয়ে দিন। সেটি পুষ্টিকরও হবে, দেখতেও ভাল লাগবে।
আরও পড়ুন:
দ্বিতীয়ত, শিশুকে ছোট ছোট রান্না শেখান। গ্যাসের কাছেই যে যেতে হবে, তা নয়। যেমন, আপনি রান্নার সময়ে তাকে সব্জি ধুয়ে দিতে বলুন। স্যালাড কেটে দিয়ে বলুন সাজিয়ে দিতে। ফল ছোট ছোট করে কেটে দিয়ে শিখিয়ে দিন কী ভাবে সার্ভিং বোলে ঢেলে স্যালাড বানাতে হবে। খাবার তৈরির আগ্রহ বাড়লে, তা খেতেও চাইবে শিশু।
মাঝেমধ্যে শিশুকে বাজারেও নিয়ে যান। নানা রকম সব্জি চেনান। কোন সব্জি পছন্দ, তা বেছে নিতে বলুন। কোনটি স্বাস্থ্যকর, কোনটির কী রকম স্বাদ, কেমন ভাবে রান্না করলে খেতে ভাল হয়— এই সব আলোচনায় শিশুর স্বাস্থ্যকর খাবারের প্রতি রুচি তৈরি হবে।
সময়ের অভাবে বড়রাই জাঙ্ক ফুড কিনে দেন ছোটদের। এই অভ্যাস আগে বন্ধ করতে হবে। বাড়িতেই পুষ্টিকর খাবার বানিয়ে দিন। প্যাকেটের ফলের রসের জায়গায়, বাড়িতে টাটকা ফলের রস করে দিন। তাতে ড্রাই ফ্রু্ট্স ছড়িয়ে দিন। শিশুর ভাল লাগবে। আইসক্রিম খেতে চাইলে ঘরে পাতা দইয়ের উপরে নানা রকম ফল বা ট্রুটি ফ্রুটি দিয়ে পরিবেশন করুন। দেখতে ভাল হবে, শিশু খেতেও চাইবে। পিৎজ়ার বদলে ওট্সের পরোটার উপরে নানা রকমের সব্জি, সেদ্ধ চিকেন দিয়ে সাজিয়ে দিন। এই ভাবে স্বাস্থ্যকর খাবারে রুচি ফেরানোর চেষ্টা করা যেতে পারে।