সপ্তাহভর কাজের পরে যে দিন ছুটি পেলেন, সেই দিনটাও হয়তো সারা দিন বিছানায় গড়িয়েই কেটে গেল! হয়তো মায়ের তাড়া খেয়ে কোনও মতে উঠে স্নান করা-খাওয়া হল। বিবাহিত হলে সঙ্গী বার বার বলায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে কিছু এনে দিলেন। কিন্তু তার পরে ফিরে এলেন সেই বিছানাতেই। কারণ, সারা সপ্তাহের পরিশ্রমের পরে বাড়তি কিছু করার ইচ্ছে বা শক্তি কোনওটিই অবশিষ্ট নেই আর। অনেকের মনে হতেই পারে, বিছানায় এই যে পড়ে থাকা, এ ভাবেই মিলবে বিশ্রাম। রেড সিগন্যাল জ্বলে যাওয়া শারীরিক ব্যাটারি ‘রিচার্জ’ হবে। পরের দিন বাড়ি থেকে বেরোবেন তরতাজা হয়ে, আরও একটা সপ্তাহের জন্য শক্তি জমিয়ে নিয়ে। কিন্তু সব ক্ষেত্রে তা না-ও হতে পারে। বিছানায় পড়ে থাকা মানেই কিন্তু ভাল বিশ্রাম নয়। তারও রকমফের আছে। আছে আলাদা আলাদা নামও। এর মধ্যে নতুন প্রজন্মের মধ্যে ক্রমেই জনপ্রিয় হচ্ছে দু’টি নাম। ‘বেড রটিং’ আর ‘বেড ম্যারিনেটিং’।
বেড রটিং কী?
আক্ষরিক অর্থে ‘রটিং’ মানে নষ্ট হয়ে যাওয়া! বেড রটিং ব্যাপারটার সঙ্গে সেই অর্থের সামান্য হলেও মিল আছে। বিছানায় শুয়ে চোখের সামনে মোবাইল নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ‘স্ক্রল’ করে যাওয়া, কাজ করার কোনও ইচ্ছে না থাকা, মানসিক ভাবেও পরিপার্শ্ব থেকে নিজেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে নেওয়া— এই সবই বেড রটিং-এর লক্ষণ। ‘বেড রটিং’ করতে হবে ভেবে কেউ করেন না। বেড রটিং আপনা হতেই হয়। এমন হলে বুঝতে হবে, আপনি মানসিক ভাবে এবং শারীরিক ভাবে ক্লান্ত। তাই আপনার মন সব কিছু থেকে পালাতে চাইছে।

বেড ম্যারিনেটিং কী?
বেড রটিং আর বেড ম্যারিনেটিংয়ের মিল হল— দু’টিই বিছানায় পড়ে থাকা। তবে পার্থক্য হল, দ্বিতীয়টি ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিয়ে করা হয়। প্রথমটি তা নয়। বিছানায় পড়ে থেকে নিজেকে বিশ্রাম দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে হয় সচেতন ভাবে। সে ক্ষেত্রে হয়তো আপনি সারা দিন বিছানায় শুয়ে থেকে কিছু লিখলেন বা কিছু পড়লেন বা ধ্যান করলেন অথবা সমাজমাধ্যম থেকে নিজেকে মুক্ত রেখে শুধু বিছানায় পড়ে থাকার আরামটাকেই প্রতি মুহূর্তে অনুভব করলেন। আর এই সব কিছুই করলেন একটি উদ্দেশ্য পূরণের জন্য। নিখাদ বিশ্রাম।
কোনটি বেশি কার্যকরী?
বেড রটিং হয়তো মানসিক এবং শারীরিক ক্লান্তিতে সাময়িক আরাম দিতে পারে। জীবন যখন কঠিন মনে হয়, তখন ভাবনাচিন্তার শক্তিকে অল্প সময়ের জন্য ছুটি দিলে তাতে কিছু ক্ষণের জন্য ভাল লাগতে পারে। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে ওই ধরনের বিশ্রামের সুপ্রভাব পড়ে না। বরং পরবর্তী কালে ‘সময় নষ্ট হয়েছে’ ভেবে অপরাধবোধ জাগতে পারে, এমনকি, হতাশার দিকেও এগিয়ে দিতে পারে বলে মনে করেন মুম্বইয়ের মনোবিদ প্রিয়ংবদা তেণ্ডুলকর। তিনি বলছেন, ‘‘আমাদের ভিতরে যে শিশু সত্তা রয়েছে, সে মনে করে আমরা যদি কিছু করতে না পারি, তা হলে আমরা মূল্যহীন। এই অযৌক্তিক ভাবনা এবং আবেগ কী ভাবে সামলাতে হবে, তা-ও বুঝে উঠতে পারে না আমাদের শিশু সত্তা। বেড রটিং আসলে সেই শিশু সত্তারই প্রকাশ। যা আদতে বড় একটা ফলদায়ী নয়।’’

অন্য দিকে, বেড ম্যারিনেটিং হল নিজের প্রতি সদয় হওয়া এবং নিজেকে ভাল রাখার সচেতন সিদ্ধান্ত নেওয়া। প্রিয়ংবদা বলছেন, ‘‘আমরা অনেকেই নিজেকে অনুপ্রাণিত করার জন্য নিজের সঙ্গে কথা বলি। বেড ম্যারিনেটিং তারই একটি অংশ হতে পারে। যেখানে আমরা নিজেকে বলব, আমারও বিশ্রাম নেওয়ার অধিকার আছে। বিশ্রাম নিচ্ছি মানে আমি অলস নয় বা কাজের মানুষ হিসাবে আমার মূল্য কোনও অংশে কমে যাচ্ছে না।’’
মনোবিদ জানাচ্ছেন, বাইরে থেকে দু’টি বিষয়কে এক মনে হলেও মনের উপর এর প্রভাব আলাদা আলাদা। কতটা আলাদা? তিনি বলছেন, ‘‘বেড রটিং যদি মনের ফাস্টফুড হয়, তবে বেড ম্যারিনেটিং হল ভাত-ডাল-তরকারির মতো পুষ্টিকর। প্রথমটি সুস্বাদু হতে পারে কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতিকর। দ্বিতীয়টি আপাতদৃষ্টিতে ততখানি মনোরঞ্জক মনে না হলেও মন এবং শরীর ভাল রাখার কার্যকরী উপায়।’’