ভাতের সঙ্গে রুটি খাওয়ার অভ্যাস অনেকেরই আছে। বেশির ভাগ অবাঙালি বাড়িতেই ভাত ও রুটি মিলিয়ে খাওয়া হয়। এই অভ্যাস বাঙালি বাড়িতেও রয়েছে। এখন যাঁরা ওজন কমাতে ডায়েট করছেন, তাঁরা এক কাপ ভাত আর রুটি মিলিয়েই খান। কিন্তু কথা হল, ভাত ও রুটির মতো দু’ধরনের কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার কি একসঙ্গে মিলিয়ে খাওয়া স্বাস্থ্যকর?
ভাতের সঙ্গে রুটি মিলিয়ে খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। এমনটাই মত অনেক পুষ্টিবিদেরই। এই বিষয়ে পুষ্টিবিদ শম্পা চক্রবর্তী বলছেন, “রুটি ও ভাত দু’য়ের মধ্যেই কার্বোহাইড্রেটের মাত্রা বেশি এবং গ্লাইসেমিক ইনডেক্সও বেশি। দুটি কী ভাবে খাচ্ছেন, তার উপরে নির্ভর করছে। ভাত খেলে তার সঙ্গে অল্প প্রোটিন, ভিটামিন জরুরি। সে জন্য ডাল-সব্জি, মাছ খেতে পারেন। রুটি দিয়ে ডাল বা তরকারি, স্যালাড অথবা কম তেলে রান্না মাংস খাওয়া ভাল। অনেকেই দুধ-রুটি একসঙ্গে খান। ডায়াবিটিসের রোগীদের পক্ষে তা একেবারেই ঠিক নয়। কারণ দুধের সঙ্গে গুড় বা মিষ্টি জাতীয় কিছু মেশালে তা ক্ষতিকর হয়ে উঠবে। ”
এক কাপ ভাতের সমান একটি রুটি। যদি কেউ এক কাপ ভাতের সঙ্গে দু’টি রুটি খান, তা হলে একবারে ৫০০ গ্রামের মতো কার্বোহাইড্রেট শরীরে ঢুকবে। কিন্তু একজন প্রাপ্তবয়স্কের ক্ষেত্রে দৈনন্দিন কার্বোহাইড্রেট পরিমাপ ১৩০-১৪০ গ্রাম হওয়া উচিত। ভাত-রুটি একসঙ্গে খেলে তা বেড়ে যাবে। এতে লাভ কিছুই হবে না। পুষ্টিবিদের কথায়, যাঁর শরীরে যতটা কার্বোহাইড্রেট দরকার, তাঁকে ততটাই মেপে খেতে হবে। যাঁর ১৫০ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট দরকার, তাঁকে তেমন ভাবেই খেতে হবে। সে ক্ষেত্রে তিন ভাগে ভাগ করে নিতে পারেন। সকালে-দুপুরে-রাতে দু'টো করে রুটি খেতে পারেন, অথবা ভাত খেতে চাইলে সকালে রুটি, দুপরে ভাত আবার রাতে রুটি খেতে পারেন।
আরও পড়ুন:
হজমের সমস্যাও হতে পারে। ভাত হজম হয় খুব তাড়াতাড়ি। কিন্তু রুটি হজম হতে দেরি হয়। যদি একই সময়ে দু’টি একসঙ্গে খান কেউ, তা হলে হজমপ্রক্রিয়া ধীর গতিতে হবে। ফলে পেটফাঁপা, গ্যাস-অম্বলের সমস্যা আরও বেড়ে যাবে। পুষ্টিবিদের মত, রুটি খেলে অম্বল হয় অনেকেরই। তাই কেবল ভাত খেয়ে ওজন বাড়ছে ভেবে তাঁরা রুটির সঙ্গে ভাত একসঙ্গে খান। এমন করলে অম্বলের সমস্যা আরও বাড়বে। তার চেয়ে এক কাপ ভাত অথবা একটি রুটি খাওয়া ভাল। যদি দু’রকমই খেতে হয়, তা হলে মাঝে ৪-৫ ঘণ্টার বিরতি থাকা জরুরি। যেমন, যদি সকালের জলখাবারে রুটি-তরকারি খান, তা হলে আর দুপুরে ভাত-রুটি মিলিয়ে খাবেন না। অল্প করে ভাত আর বেশি করে সব্জি খাবেন। এতেই শরীরে কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিন ও খনিজ উপাদানগুলির ভারসাম্য সঠিক থাকবে।
উচ্চ কোলেস্টেরল, হাইপারটেনশনে যাঁরা ভুগছেন, তাঁদেরও ভাত-রুটি মিলিয়ে খাওয়া উচিত নয়। তার চেয়ে ব্রাউন রাইস, ওট্স বা ডালিয়া খেতে পারেন।