বাতাসে বিপদ ঘনাচ্ছে। দূষণের মাত্রা যত বাড়ছে, ততই ক্ষতির মুখে পড়ছে শিশুরা। এক থেকে পাঁচ বছর বয়সিরাই বেশি বিপন্ন। কারণ ওই বয়সে, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমই থাকে। ফুসফুসের নিজস্ব প্রতিরোধ শক্তিও গড়ে ওঠে না। ফলে বাতাসে ভাসমান দূষিত কণা ও গ্যাস শিশুদের ফুসফুসের মারাত্মক ক্ষতি করে। ইদানীং কালে দেখা যাচ্ছে, ওই বয়সের শিশুরাও ফুসফুসের সংক্রমণে ভুগছে। দূষণের জেরে হাঁপানি, অ্যালার্জির সমস্যাও বাড়ছে ছোটদের।
বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার গড় পরিমাণ (পিএম ২.৫)-এর মাত্রা বেড়ে গেলে শ্বাসজনিত সমস্যা, সর্দিকাশি, হাঁপানি, এমনকি চোখের সমস্যাও বাড়ে। দূষিত বাতাসে ভাইরাস ও ব্যাক্টেরিয়ার বাড়বাড়ন্ত অনিবার্য। দূষণ যত বাড়বে, ততই সংক্রামক জীবাণুর সংখ্যা বাড়তে থাকবে। তাই দেখা যাচ্ছে, ভাইরাসজনিত অসুখে বেশি ভুগছে শিশুরা। শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো রোগেও আক্রান্ত হচ্ছে তারা। বাড়ছে হুপিং কাশি, ফ্যারেনজাইটিস, ল্যারিনজাইটিসের মতো সমস্যা।
শহরাঞ্চলে ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (সিওপিডি) আক্রান্তের মধ্যে শিশুদের হারের উদ্বেগজনক বৃদ্ধির কথা অজানা নয়। দূষণ থেকে রেহাই পাচ্ছে না গর্ভস্থ শিশুরাও। দূষণকবলিত অঞ্চলগুলিতে ভ্রূণের মস্তিষ্ক, ফুসফুস এবং যকৃতে দূষিত কণার উপস্থিতিও পাওয়া গিয়েছে। দূষণের জেরে শিশুদের হৃদ্যন্ত্র মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর প্রভাব পড়ে শিশুদের মস্তিষ্কেও।
আরও পড়ুন:
দূষণের মাত্রা কমানো সম্ভব নয়। তাই দূষিত বাতাস থেকে শিশুর ফুসফুস বাঁচানোর উপায় হল সঠিক সময়ে টিকা দিয়ে রাখা। শিশুদের কী কী প্রতিষেধক দিতে হবে, তার তালিকা তৈরি করেছে ‘ইন্ডিয়ান অ্যাকাডেমি অফ পেডিয়াট্রিক্স’। ৬ মাস বা তার বেশি বয়সি শিশুদের ইনফ্লুয়েঞ্জার টিকা দিয়ে রাখতেই হবে। এতে ভাইরাল জ্বরের হাত থেকে অনেকটাই রেহাই পাওয়া যাবে। পাঁচ বছরের নীচে শিশুদের জন্য নিউমোকক্কাল প্রতিরোধী টিকা দেওয়ার ব্যবস্থাও আছে। এতে নিউমোনিয়া ও মেনিনজাইটিসের সংক্রমণ রোখা যাবে। চিকেন পক্স থেকে বাঁচতে টিকার দু’টি ডোজ় দেওয়া জরুরি। ডিপথেরিয়ার প্রতিষেধকও শিশুদের জন্য খুব জরুরি। ২ মাস থেকে ৬ বছর বয়স অবধি এই টিকার ৫টি ডোজ় দিতে হবে।
ধুলো-ধোঁয়া থেকে শিশুকে যতটা সম্ভব দূরে রাখতে হবে। মনে রাখবেন, ভাসমান ধূলিকণা (পিএম১০) ও অতিসূক্ষ্ম ধূলিকণা (পিএম ২.৫)-ই শুধু নয়, যানবাহনের ধোঁয়ায় নাইট্রোজেন-ডাই-অক্সাইডের মাত্রাও বিপজ্জনক হারে বাড়ছে। ওই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণাগুলি খুব সহজে মিশে যেতে পারে বাতাসে। বাতাসের ধূলিকণাকে আশ্রয় করে এগুলিই দূষণের মাত্রা বাড়িয়ে তোলে। এই দূষিত বায়ু চোখের জন্য খুব ক্ষতিকর। দূষণের জেরে চোখ শুষ্ক হয়ে যায়, কনজাঙ্কটিভাইটিসের সমস্যাও বাড়ে। তাই যতটা সম্ভব সাবধানে থাকতে হবে।
(লেখক চিকিৎসক এবং কলকাতার ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেল্থের অধ্যাপক)